ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করার সম্ভাব্য একটি ছক দেখিয়েছেন রাজশাহীর কর্ণধার, তাতে আশ্বস্ত হয়ে তাদেরকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কার্যক্রম নজরদারিতে রাখার কথা জানিয়েছে বিসিবি।
Published : 28 Jan 2025, 07:47 PM
‘মাঠে অন্তত জানা থাকে কয়টা বাউন্সার করা যাবে, কিন্তু ওরা তো সেটাও জানে না চেক কয়বার বাউন্স করবে….!’- বিসিবি একাডেমি ভবনের সামনে মঙ্গলবার প্রথম বিভাগ ক্রিকেটের ট্রফি উন্মোচনের সময় বলছিলেন এক ক্রিকেটার। দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের চেক বারবার প্রত্যাখ্যান হওয়া নিয়েই তার মন্তব্য। বিপিএল তো বটেই, দেশের ক্রিকেটেই এখন আলোচনার কেন্দ্রে এটি।
পারিশ্রমিক সমস্যা সমাধানে আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির বাইরে তেমন কোনো পদক্ষেপ এখনও দেখা যায়নি। সবশেষ বিসিবির সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বৈঠকের পর আরও একবার শোনা গেল সেই প্রতিশ্রুতির গল্পই। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন জানালেন, পারিশ্রমিক পরিশোধের সম্ভাব্য একটি ছক দেখিয়েছেন রাজশাহীর মালিকপক্ষ। সেটায় আশ্বাস্ত হয়ে এই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কিছুটা সময় দিয়েছে বিসিবি।
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে প্রকাশ্যে আসা রাজশাহীর পারিশ্রমিক সমস্যা এখনও চলমান। প্রথম পর্বে নিজেদের সব ম্যাচ খেলে ফেলার পরও মাত্র ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পেয়েছে দলটির ক্রিকেটাররা। অথচ টুর্নামেন্টের নীতিমালা অনুযায়ী, খেলা শেষ হওয়ার মধ্যে ৭৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
চট্টগ্রামে অনুশীলন বাতিল করার পর বিসিবির হস্তক্ষেপে ক্রিকেটারদের ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক দেয় রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি। তখন আরও ২৫ শতাংশ অর্থের চেক দেওয়া হয় ক্রিকেটারদের। কিন্তু ওই চেক থেকে কোনো টাকা পাননি ক্রিকেটাররা। পরে ঢাকায় এসে গত রোববার আবার চেক হাতে পান তারা। সেদিন পারিশ্রমিক সমস্যার সমাধান না হওয়ায় মাঠেই আসেননি দলটি বিদেশি ক্রিকেটাররা।
চেক হাতে পাওয়া দেশি ক্রিকেটাররা মঙ্গলবারেও চেক থেকে টাকা নিজেদের ব্যাংক হিসাবে নিতে পারেননি। যেটির মানে, আরও একবার ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাতয় রাজশাহীর দেওয়া চেক। সকালেই ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। দুপুরে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্ণধারদের নিয়ে বৈঠকে বসে বিসিবি। যেখানে ছিলেন রাজশাহীর কর্ণধারদের একজন শফিকুর রহমান।
বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পারিশ্রমিক সমস্যা নিয়ে নাজমুল আবেদীন বলেন, এখন থেকে নিয়মিত নজরদারিতে থাকবে রাজশাহীর সব কার্যক্রম।
“(পারিশ্রমিক পরিশোধে) যারা একটু বা বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছে, তাদের সঙ্গেই বেশি আলাপ হয়েছে। তারা কীভাবে এই অচলাবস্থা পার করবে, সেটা নিয়েই কথা হয়েছে। তারা কিছু কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আমরা সেগুলো শুনেছি। তাদেরকে আমরা কিছুটা সময় দিয়েছি প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করার জন্য।"
"এখন থেকে প্রায় প্রতি মুহূর্তেই তাদের অনুসরণ করব প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা রাখছে। তাদেরকে যতটুকু সম্ভব চাপে রাখব। ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক নিয়ে যেন সন্তুষ্ট থাকে, এই বিষয়টা যেন তারা নিশ্চিত করে।”
সভায় রাজশাহীকে নিয়ে এবং এই ফ্র্যাঞ্চাইজির কর্ণধারের সঙ্গেই বেশি আলোচনা হয়েছে, জানালেন গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব।
“এটা নিয়ে বারবারই আলোচনা হচ্ছে। এটা নিয়েই আমরা বেশি করে আলোচনা করেছি। রাজশাহীর কর্ণধারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি এবং তাকে আমরা আমাদের মতো করে বলেছি যে, কী করা উচিত হবে, কী করা সম্ভব ও তার দিক থেকে আমরা কী প্রত্যাশা করছি।”
“এটা আমরা এখন মনিটর করতে থাকব, টাইম টু টাইম মনিটর করতে থাকব। আশা করব যে, একটা পথ সে খুঁজে বের করবে যে, কীভাবে পেমেন্ট করবে। সে আমাদেরকে একটা ছবি দিয়েছে যে, কীভাবে সেটা করতে চায়। আমরা দেখতে চাই, সেভাবে সে করতে পারছে কি না।”
সমাধানের আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি দিতে দিতেই প্রায় শেষ দিকে চলে এসেছে বিপিএলের একাদশ আসর। আর কত দিন এসব প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখা সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠল। নাজমুলও স্বীকার করেন, তাদেরও ভরসার জায়গা নড়ে গেছে।
“আস্থা কিছুটা কম বলেই, এখন প্রতি মুহূর্তে তাদের নজরদারিতে রাখছি। তারা যদি প্রতিশ্রুতি মোটামুটি রাখত, তাহলে এত বেশি উদ্বিগ্ন হতে হতো না। তবে এখন থেকে নিয়মিত নজরে রাখব আমরা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করছে কিনা, সেটি দেখব আমরা।”
শেষ পর্যন্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না পরিশোধ করে, শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিসিবির শরণাপন্নই হতে হবে তাদের। এই প্রসঙ্গে চুক্তিপত্র অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব।
“(ফ্র্যাঞ্চাইজি টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে) সেটা তো কাগজপত্র করাই আছে। সব লিগ্যাল পেপার করা আছে। সেখান থেকেই নির্দেশনা পাব আমাদের কী করতে হবে।”
পারিশ্রমিক সমস্যা আছে চিটাগং কিংস দলেও। বাঁহাতি ওপেনার পারভেজ হোসেনকে টাকা না দেওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমে স্বীকার করেছেন দলটি কর্ণধার সামির কাদের চৌধুরি। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেছেন, 'আমার টাকা কি গাছে ধরে? আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি তাই টাকা দেইনি। যথাযথ ব্যাখ্যা পেলে পরে সিদ্ধান্ত নেব।'
নাজমুল আবেদীনকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, অসুস্থ থাকায় মঙ্গলবারের বৈঠকে ছিলেন না সামির। তাই পারভেজের পারিশ্রমিকের বিষয়ে করা মন্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা তারা নিতে পারেননি।
জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারকে এমন কিছু বলা হতাশাজনক ও অপ্রত্যাশিত বলেন নাজমুল।
“আমরা এমন কিছু আশা করি না যে এরকম মন্তব্য কেউ করবেন। একটা দল বা ক্রিকেটার ভালো-খারাপ খেলতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি, যাকে নিয়ে কথা হয়েছে তার মতো একজন ক্রিকেটার নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। এই গ্রেট খেলাটির এটি একটি শিক্ষা যে, সবাই সবাইকে সম্মান দেবে। এটা থাকাটা জরুরি।”