ফাহিম আশরাফের ৫ উইকেটের পর তামিম ইকবালের অপরাজিত ফিফটিতে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে উড়িয়ে প্লে-অফ নিশ্চিত করল ফরচুন বরিশাল।
Published : 26 Jan 2025, 04:56 PM
জয়ের জন্য দরকার তখন এক রান, তামিম ইকবালের ফিফটির জন্য প্রয়োজন দুই। সুমন খানের বল সোজা ব্যাটে চালিয়ে দিলেন বরিশাল অধিনায়ক। মিড অফ দিয়ে বল ছুটতে থাকল সীমানার দিকে। নন-স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে রানের জন্য ছুটলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু হাত ইশারায় মাঝ উইকেটে তাকে থামিয়ে দিলেন তামিম। এক রান নন, তার তো চাওয়া বাউন্ডারি!
বল বাউন্ডারিতে গেল, তামিমের ফিফটিও হলো। ম্যাচের শেষ বলের এই দৃশ্য কিছুটা বিনোদনের খোরাক জোগাল। এছাড়া ম্যাচে তো লড়াইয়ের মজা তেমন কিছু হলো না। ৮ উইকেটের জয়ে প্লে-অফ নিশ্চিত করল ফরচুন বরিশাল।
এবারের বিপিএল শুরুর ম্যাচে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে বরিশালকে জয় এনে দিয়েছিলেন ফাহিম আশরাফ। সিলেট-চট্টগ্রাম পর্ব শেষে বিপিএল আবার মিরপুরে ফেরার ম্যাচে পাকিস্তানি অলরাউন্ডার জ্বলে উঠলেন বল হাতে। ৫ উইকেট শিকার করলেন তিনি ৭ রানে, এবারের বিপিএলের যা দ্বিতীয় সেরা বোলিং।
ফাহিমের সঙ্গে অন্য বোলারদের কার্যকর পারফরম্যান্সে সিলেটের ইনিংস শেষ হয় ১১৬ রানে। তামিমের ফিফটিতে চার ওভার বাকি থাকতে লক্ষ্য স্পর্শ করে বরিশাল।
বাজে শুরু সিলেটের
সিলেটের দুর্দশার শুরু ম্যাচের দ্বিতীয় ওভার থেকে। আগের ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি করা জর্জ মানজিকে ৪ রানে বিদায় করেন মোহাম্মদ নাবি। তিনে নামা জাকির হাসান থেমে যান একটি চার মেরেই শেষ। মৌসুমে প্রথম খেলতে না জেমস ফুলারের বাড়তি লাফানো বলে আলতো ক্যাচ তিনি ব্যাট পেতে দিয়ে।
দৃশ্যপটে ফাহিম
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বল হাতে পান ফাহিম। ছাপ রাখতে সময় নেননি খুব একটা। তার তৃতীয় ডেলিভারিতেই উড়িয়ে মারার চেষ্টায় উইকেট হারান রনি তালুকদার (৯)। নতুন ব্যাটসম্যান কাদিম আলিন দুই বল খেলেই পথ ধরেন ড্রেসিং রুমের। মিড অফ থেকে কাভারের দিকে অনেকটা ছুটে ডাইভিং ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।
একাদশে ফেরার ম্যাচে নাহিদুল ইসলামকে ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ের ভার দেয় সিলেট। কিন্তু তিনিও ৮ রান করে ফাহিমের শিকারে পরিণত হন। পাকিস্তানি ক্রিকেটারের বোলিং বিশ্লেষণ তখন ২-০-৩-৩!
কে এই আহসান ভাট্টি
সিলেটের হয়ে এ দিন প্রথম খেলতে নামেন এহসান হাফিজ ভাট্টি। পাকিস্তানের বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। তবে পাকিস্তানের ক্রিকেটেও তেমন পরিচিত কেউ নন তিনি। পাকিস্তান সুপার লিগে ৬টি ম্যাচ খেলেছেন, পারফরম্যান্স বলার মতো কিছু নয়। অবশ্য এবারের বিপিএলে বিভিন্ন দলে যে মানের বিদেশি ক্রিকেটার খেলেছেন ও খেলছেন, ভাট্টির খেলাটা অস্বাভাবিক নয়।
সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে অবশ্য এক প্রান্তে কিছুটা সময় উইকেট আঁকড়ে রাখেন ভাট্টি। সিলেটের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন কেবল তিনিই। ষষ্ঠ উইকেটে জাকের আলির সঙ্গে গড়েন ৩২ রানের জুটি। সিলেটের ইনিংসের সেরা জুটি এটিই।
নাবির বলে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে থামে তার ইনিংস। দুটি ছক্কা ও একটি চার মারলেও ২৮ রান করতে পারেন তিনি ২৯ বলে।
কোনোরকমে একশ পেরিয়ে
জাকের আলির শুরুটা ছিল বেশ ভালো। কিন্তু দলকে টেনে তিনি ব্যর্থ তিনিও (১৯ বলে ২৪)। রিশাদ হোসেনের বলে ছক্কা ও চার মেরে দলকে একশ পার করান তানজিম হাসান। পরের বলেই দারুণ ডেলিভারিতে তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন রিশাদ।
আরিফুলের চার ও পাঁচ
শেষ দিকে দ্রুত কিছু রানের জন্য সিলেট তাকিয়ে ছিল আরিফুল হকের দিকে। ফাহিমের বলে দারুণ একটি শটে চার মারেন তিনি। কিন্তু আউট হয়ে যান দুই বল পরই।
পরের ওভারে সুমন খানকে বোল্ড করে ৫ উইকেট পূর্ণ করার পাশাপাশি সিলেটের ইনিংস শেষ করে দেন ফাহিম।
ফুলার-তাইজুল দুই রকম
এবারের বিপিএলে প্রথম খেলতে নেমে দারুণ বোলিং করেন জেমস ফুলার। ইংলিশ পেস বোলিং অলরাউন্ডার ২ উইকেট নেন ২৩ রানে। প্রথম খেলতে নামা আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৩ ওভার বোলিং করে ২১ রান দিয়ে উইকেট পাননি।
আবার ব্যর্থ হৃদয়
লক্ষ্য ছিল ছোট, দ্রুত রান তোলার ছিল না তাড়া। তবে এমন চাপহীন ম্যাচেও ভালো কিছু উপহার দিতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়। আগের সাত ইনিংসের একটিতে ৪৮ রানের ইনিংস ছাড়া গোটা টুর্নামেন্টে হাসেনি তার ব্যাট। এ দিন তিনি ফেরেন ৬ রান করেই।
তিনে নামা দাভিদ মালানও ফেরেন ৯ রানে। তবে সহজ লক্ষ্য তাড়ায় কোনো বিপদে পড়তে হয়নি বরিশালকে।
তামিম-মুশফিকের জুটি
রানের চাপ ছিল না তেমন একটা। ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করে দলকে এগিয়ে নেন তামিম। বরিশালের জন্য জরুরি ছিল মুশফিকুর রহিমের রানে ফেরা। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আভাস দেন ফর্মে ফেরার।
৬০ বলে ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ শেষ করেন দুজন।
৫১ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। এবারের আসরে তার তৃতীয় ফিফটি এটি। ৩০ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক, এই আসরে তার এটি সর্বোচ্চ ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৮.১ ওভারে ১১৬ (মানজি ৪, রনি ৯, জাকির ৪, ভাট্টি ২৮, অ্যালেইন ০, নাহিদুল ৮, জাকের ২৪, আরিফুল ১২, তানজিম ১৩, সুমন ৭, রুয়েল ১*; রিপন ২-০-১৩-০, নাবি ৪-০-২৬-২, ফুলার ৪-০-২৩-২, ফাহিম ৩.১-০-৭-৫, রিশাদ ২-০-২৪-১, তাইজুল ৩-০-২১-০)।
ফরচুন বরিশাল : ১৬ ওভারে ১২০/২ (হৃদয় ৬, তামিম ৫২*, মালান ৯, মুশফিক ৪২*; নাহিদুল ৪-০-২৪-১, তানজিম ৪-০-২৩-১, সুমন ৩-০-১৭-১, রুয়েল ২-০-১৬-০, ভাট্টি ৩-০-২৯-০)
ফল: ফরচুন বরিশাল ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফাহিম আশরাফ।