মেয়েদের পারিশ্রমিক ও ম্যাচ ফি প্রতি বছরই বাড়ছে, সামনে আরও উদ্যোগ আসবে, জানালেন বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান হাবিবুল বাশার।
Published : 18 Sep 2024, 05:16 PM
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছেলে ও মেয়ে ক্রিকেটারদের সমান ম্যাচ ফি বেশ আগেই চালু করেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ডের মতো দলগুলি। সেই পথ ধরে পরে একই উদ্যোগ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বছর দুয়েক আগে ভারতীয় ক্রিকেটেও এই সমতা আসে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন কিছু আসবে কবে?
বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান হাবিবুল বাশার তুলে ধরলেন মেয়েদের আর্থিক সুবিধা বাড়ানোর নানা উদ্যোগের কথা। তবে ম্যাচ ফির সমতা আসতে আরও চার-পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা তার।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার আয়োজনটি ছিল এবারের নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের স্কোয়াড ঘোষণার। সেখানে দল নিয়ে নানা কথার ফাঁকে উঠে এলো ছেলে ও মেয়েদের আয়ের বৈষম্য নিয়ে নানা আলোচনা। এই নারী বিশ্বকাপ থেকেই ছেলে ও মেয়েদের বিশ্বকাপের প্রাইজমানি সমান করেছে আইসিসি। এই প্রসঙ্গে উঠে এলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিত্রও।
বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের মাসিক পারিশ্রমিকে ছেলে ও মেয়েদের ব্যবধানটা আকাশ-পাতাল। নানা বাস্তবতার কারণেই সেটি হয়ে আসছে এবং অন্যান্য সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশেই চিত্রটা কম-বেশি একই। তবে ম্যাচ ফি-র ক্ষেত্রে সব পারিপার্শ্বিকতা মাথায় রেখেও সমতা আনা সম্ভব, যেটা অন্য বেশ কয়েকটি দেশেই হয়ে আসছে।
বাংলাদেশে এখন পুরুষ ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি প্রতি টেস্টে ছয় লাখ টাকা, প্রতি ওয়ানডেতে তিন লাখ টাকা ও প্রতি টি-টোয়েন্টিতে দুই লাখ টাকা। এটা এ বছর বাড়িয়ে যথাক্রমে আট লাখ, চার লাখ ও তিন লাখ করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা চালু হয়নি। বিসিবিতে বর্তমান পালাবদলের এই সময়ে আপাতত তা বাড়ার সম্ভাবনা কমই।
মেয়েদের ম্যাচ ফি সেখানে ওয়ানডেতে কেবল এক লাখ টাকা, টি-টোয়েন্টিতে স্রেফ ৫০ হাজার। মেয়েদের টেস্ট মর্যাদা থাকলেও এখনও টেস্ট খেলার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
গত বছর পর্যন্ত মেয়েদের এই ম্যাচ ফি ওয়ানডেতে ছিল ৩০০ ডলার, টি-টোয়েন্টিতে ১৫০ ডলার। গত বছর তা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হলেও ছেলেদের সঙ্গে ব্যবধান এখনও অনেক।
সেই বাস্তবতা স্বীকার করে হাবিবুল বাশার বললেন, আয়ের বৈষম্য কমিয়ে আনতে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে সামনে।
“অনেক দলই এখন বৈষম্য রাখছে না। কয়েকটা দেশের কথা জানি, যাদের ছেলে ও মেয়েদের ম্যাচ ফি সমান। আমাদের এখানে শুরুর দিকে মেয়েদের পারিশ্রমিক অত বেশি ছিল না। কিন্তু এখন পারিশ্রমিক, ম্যাচ ফি অনেক বেড়েছে। গত বছরও আমরা বাড়িয়েছি। সামনেও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে কিছু।”
“এটা যদি হয়, তাহলে আমাদের মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য ভালো। আরও বেশি মেয়ে ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী ও অনুপ্রাণিত হবে। আমাদের এখানে এমনিতেই সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা আছে মেয়েদের খেলাধুলায় আসা নিয়ে। এখান থেকে মেয়েরা উল্লেখযোগ্য আয় করতে পারলে হয়তো অনেক বাধা সরে যাবে। আমরা সেরকম একটা আবহ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তবে আরও অনেক কাজ করার আছে।”
সেই কাজ করার ধারাবাহিকতায় এবার জাতীয় লিগের ম্যাচ ফি বাড়ানো হয়েছে। আগে তা ছিল মাত্র ১ হাজার টাকা। এটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সমালোচনা হয়েছে তুমুল। এবার বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩ হাজার টাকা। তার পরও এই অঙ্ক অতি সামান্য। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মেয়েদের আর্থিক অবস্থার দীনতাই ফুটে উঠছে এতে।
হাবিবুল বাশার জানালেন, ছেলেদের মতো মেয়েদের ক্রিকেটেও কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে থাকা ঘরোয়া ক্রিকেটারদের একটি চুক্তির আওতায় আনার প্রস্তাবনা তারা বোর্ডের কাছে রেখেছেন। সেটি বাস্তবায়িত হলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ক্রিকেটারে আর্থিক অনিশ্চয়তা কিছুটা হলেও দূর হবে।
হাবিবুলের বিশ্বাস, এভাবেই একটু একটু করে বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছেলে ও মেয়েদের ম্যাচ ফি সমান হবে।
“ম্যাচ ফি বাড়ানোর প্রস্তাব আমাদের ছিল। সামনেও থাকবে। যদিও (ছেলেদের) সমান ম্যাচ ফি করতে এখনই হয়তো পারা যাবে না, নানা বাস্তবতা ভেবে বলছি। তবে কাজটা শুরু হয়েছে। আগের চেয়ে আর্থিক কাঠামো এখন ওদের ভালো। প্রতি বছর একেকটি পদক্ষেপে আমরা এগোচ্ছি।”
“মেয়েদের ক্রিকেটে আমরা স্পন্সরশিপ পাচ্ছি এখন। বোর্ডের চিন্তাভাবনা আছে আরও। ছেলেদের ক্রিকেটে যেমন আমাদের কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরেও ঘরোয়া ক্রিকেটারদের সঙ্গে চুক্তি আছে, মেয়েদেরও সেরকম কিছু করতে চাই। এটা হলে অনেক মেয়েকেই আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া যাবে। ম্যাচ ফি সমান সমান হয়তো এই মুহূর্তে হবে না। ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও এটা একদিনে হয়নি। আস্তে আস্তে হয়েছে। আমাদেরও চার-পাঁচ বছর পরে সমান হয়ে যাবে বলে মনে করি।”