চোটের কারণে, ফর্ম হারিয়ে কিংবা কেবল এক সংস্করণে খেলা ক্রিকেটাররা যখন জাতীয় দলের বাইরে থাকেন তখন তাদের দেখভালের জন্য একটা সঠিক ব্যবস্থাপনার চাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক দিনের। অবশেষে প্রস্তাবিত সেই ‘বাংলাদেশ টাইগার্স’ নামের ‘ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক, জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়া সৌম্য সরকার, সম্ভাবনাময় মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিসহ ২৩ ক্রিকেটারকে নিয়ে বগুড়ায় শুরু হচ্ছে বিসিবির নতুন এই প্রকল্পের যাত্রা।
Published : 19 Feb 2022, 03:17 PM
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টাইগার্সের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিসিবি পরিচালক ও এই প্রোগ্রামের প্রধান কাজী ইনাম আহমেদ।
“বগুড়ায় হচ্ছে আমাদের প্রথম প্রোগ্রাম। এটার জন্য নির্বাচকরা একটি দল দিয়েছেন। তাদের সেখানে তিন ধরনের ক্রিকেটার রাখার কথা বলা হয়েছিল। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই ক্যাম্প।”
“জাতীয় দলের যদি কোনো সিরিজ চলে, অন্য সংস্করণের খেলোয়াড় সেই সিরিজে যদি না খেলে, তাহলে সে এই প্রোগ্রামে আসতে পারে। সম্প্রতি জাতীয় দলে খেলেছে এবং কোনো কারণে সেখান থেকে বাদ পড়েছে, সেটা ফর্ম হারিয়ে হতে পারে কিংবা চোটের জন্যও হতে পারে, ফিট হয়ে সে এই স্কোয়াডে আসতে পারে। আবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ কিংবা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলে অনেকেই জাতীয় দলে যেতে পারে, সেখানে যাওয়ার আগে তাদের আমরা এই স্কোয়াডে রাখতে পারি।”
সেসব বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশ টেস্ট দলের যারা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে নেই কিংবা টি-টোয়েন্টি দলের বিবেচনায় নেই, তাদের রাখা হয়েছে ২৩ জনের দলে। রাখা হয়েছে আপাতত জাতীয় দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়। এদের সঙ্গে ঘরোয়া বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ভালো করা কয়েকজন ক্রিকেটারকেও রাখা হয়েছে।
দল নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানালেন জাতীয় দলের ‘টিম ডিরেক্টর’ ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ।
“ঘুরে ফিরে জাতীয় দলের সব খেলোয়াড়রা এখানে থাকবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমরা খেলব সাদা বলে, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। সামনে আমরা যখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলব তখন হয়ত ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের খেলোয়াড়রা এখানে থাকবে।”
“আমাদের একটা বড় সমস্যা ছিল, যখন জাতীয় দল দেশের বাইরে খেলতে যায় তখন অন্য সংস্করণের খেলোয়াড়রা দেশেই থাকে, তারা কোনো প্রোগ্রামে থাকে না। তারা এখন থেকে এটাতে থাকবে। এর বাইরে ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোর টপ পারফরমাররা এখানে আসতে পারে। বছরজুড়েই এটা চলবে।”
শুরুটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিস্মৃতির আড়ালে চলে যাওয়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে। ২০০৬ সালে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হওয়া এই মাঠকে ভেন্যু হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ জানালেন কাজী ইনাম।
“এবারের এই প্রোগ্রামের মূল একটা মনোযোগের জায়গা হচ্ছে সামনের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। সেটাকে লক্ষ্য করেই খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই ও (মিজানুর রহমান) বাবুল ভাই পুরো প্রোগ্রামটা সাজিয়েছেন, তাই এখানে বাড়তি পেসার ও অন্য বোলারদের নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ওই কন্ডিশনে কেমন বোলিংয়ের মুখোমুখি হতে এই সব নিয়ে আমাদের অ্যানালিস্ট নাসির আহমেদ নাসু ভাই এরই মধ্যে
কাজ শুরু করেছেন, তিনিও এই প্রোগ্রামে থাকছেন।”
“কেন বগুড়া? এই ভেন্যুর কথা বলেছেন মূলত টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। তিনিই সুজন ভাইকে বলেছিলেন, এখানকার উইকেট ট্রু এবং অনেক ফাস্ট। এই উইকেটে কত মিলিমিটার ঘাস থাকবে, সেটাও কিন্তু বলে দেওয়া আছে। সেভাবেই একমাস ধরে উইকেট তৈরি করা হচ্ছে। বগুড়া ভেন্যুর ফ্যাসিলিটিজ বাড়ছে। পরে এখানে অ-১৯ কিংবা মেয়েদের দলেরও ক্যাম্প হতে পারে।”
ভিন্ন কন্ডিশন, ভিন্ন উইকেট ক্রিকেটারদের গড়ে তোলায় বড় ভূমিকা রাখে। তাই দেশের বিভিন্ন ভেন্যুর পাশাপাশি সম্ভব হলে বাইরেও ক্যাম্প আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানালেন কাজী ইনাম।
“এরপর রাজশাহী, কক্সবাজার কিংবা অন্য কোনো ভেন্যুতে ক্যাম্প হতে পারে। এই মুহূর্তে দেশের বাইরে ক্যাম্প করার কোনো পরিকল্পনা নেই। কিন্তু দেশের বাইরে ওদের অনুশীলন ক্যাম্পে পাঠানোর ভাবনা আমাদের আছে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় আমরা ২০-৩০ দিনের জন্য যদি পাঠাতে পারি, খুব ভালো হয়। এমন চেষ্টা আমাদের আছে।”
১১ দিনের ক্যাম্প দিয়ে শেষ হচ্ছে প্রথম প্রোগ্রাম। ১৫ মার্চ শুরু হতে যাওয়া প্রিমিয়ার লিগ লিগ শেষের পর পরের ধাপ শুরু হবে। কাজী ইনাম জানান, ভিন্ন খেলোয়াড়দের নিয়ে সেই ক্যাম্প হবে লম্বা সময়ের জন্য।
“আমাদের অফ সিজনে মে মাসে আবার বাংলাদেশ টাইগার্সের প্রোগ্রাম শুরু হবে। এবার যে দল দেওয়া হয়েছে সেটা কেবল এই ক্যাম্পের জন্য। মে মাসে যে ক্যাম্প করা হবে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষে সেটার জন্য দল দেওয়া হবে।”
এই দলের সঙ্গে হাই পারফরম্যা ইউনিট (এইচপি) দলের সাংঘর্ষিক কিছু হওয়ার সুযোগ দেখেন না কাজী ইনাম।
“এইচপিতে অনূর্ধ্ব-২৩ এর বেশি ক্রিকেটার থাকে না। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা খেলোয়াড়রা বেশি থাকে। এর বেশি বয়সী খেলোয়াড়রা কোথায় যাবে? সৌম্য এখন কোথায় যাবে? একটা জায়গা তো থাকতে হবে যেখানে আমরা বছর জুড়ে ওদের সাপোর্ট দিতে পারি।”
“উদাহরণ হিসেবে তাসকিন আহমেদের কথা বলা যায়। যখন সে জাতীয় দলে ছিল না, তখন মহামারীর সময় সে নিজে নিজে অনুশীলন করে গতি বাড়িয়েছে, জাতীয় দলে ফিরে এসেছে। এইটাই যদি আমরা প্রোগ্রাম আকারে করতে পারি যেটা বিসিবির স্বপ্ন ছিল, সেটাই এবার শুরু হতে যাচ্ছে।”
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরি জানান, শুধু খেলোয়াড় নয় স্থানীয় কোচদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে চান তারা।
“আমরা জাতীয় দলের পুল বড় করতে চাচ্ছি। পাইপলাইন বড় করতে চাচ্ছি। যেন একজন খেলোয়াড় সব সময় প্রস্তুত থাকে। কোচ ও খেলোয়াড়দের জাতীয় দলের জন্য সব সময় প্রস্তুত রাখা এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য।”
বাংলাদেশ টাইগার্স: মুমিনুল হক, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, সাইফ হাসান, সাদমান ইসলাম, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, পিনাক ঘোষ, এনামুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, সৈকত আলি, জাকির হাসান, তাইজুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম অপু, নাহিদুল ইসলাম, নাঈম হাসান, রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ চৌধুরি, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, আবু হায়দার, কামরুল ইসলাম রাব্বি, মেহেদি হাসান রানা, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি।