খুব বড় ইনিংস নেই একটিও। কিন্তু বড় বার্তা দেওয়া আর উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন মেলে ধরা হয়ে গেছে এতেই। টি-টোয়েন্টিতে টপ অর্ডারে যে জায়গায় বাংলাদেশের ঘাটতি, সেখানেই আলোর ছটা দেখা যাচ্ছে যেন মুনিম শাহরিয়ারের ব্যাটে। এবারের বিপিএলে ফরচুন বরিশালের এই তরুণ ওপেনারকে কাছ থেকে দেখে মুগ্ধ সাকিব আল হাসান। বরিশাল অধিনায়কের চোখে, এবারের বিপিএলের প্রাপ্তি মুনিম।
Published : 12 Feb 2022, 09:35 AM
স্রেফ চার ম্যাচ খেলেই এবারের বিপিএলে এখন সবচেয়ে আলোচিত নামগুলির একটি মুনিম। প্রথমটিতে ছিলেন ব্যর্থ, চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে সেই ম্যাচের পর বাদও পড়েন একাদশ থেকে। পরে আবার সুযোগ পান সিলেটে। এবার ফিরেই নজর কাড়েন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে।
শক্তিশালী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে বরিশালকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন তিনি ২৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে। প্রথম বিপিএল ফিফটির দেখা পান পরের ইনিংসে। সিলেট সানরাইজার্সের বোলিং বিধ্বস্ত করে খেলেন ২৮ বলে ৫১ রানের ইনিংস। সবশেষ শুক্রবার মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে মাঝারি রান তাড়া শুরুতেই তার ২৫ বলে ৩৭ রানের ইনিংস সহজ করে দেয় দলের কাজ।
ঘরোয়া ক্রিকেটে তার মারকাটারি ব্যাটিং অবশ্য বিপিএলেই প্রথম দেখা যাচ্ছে না। টি-টোয়েন্টিতে তার অভিষেক ২০১৯ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে। আবাহনী লিমিটেডের হয়ে সেবার একটি ম্যাচ খেলে ভালো না করার পর বাদ পড়েন। আবাহনীর হয়েই আবার সুযোগ পান গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে।
এই দফায় প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংই পাননি। দ্বিতীয় ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে পারলেও আউট হয়ে যান একটি ছক্কা ও চার মেরেই। তৃতীয় ম্যাচে অবশেষে কিছুটা ঝলক দেখান ১২ বলে ২৫ রানের ক্যামিও খেলে। পরের ম্যাচেই আবার মুখ থুবড়ে পড়েন, বিদায় শূন্য রানেই।
আবাহনী তার পরও আস্থা রাখে তার ওপর। তিনি প্রতিদান দেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে। শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ৫০ বলে ৯২ রান করে তাক লাগিয়ে দেন। পরের ম্যাচে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে আসে ৪০ বলে ৭৩!
পরে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে করেন ২৭ বলে ৪৩, প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ৩৪ বলে ৪৪।
সব মিলিয়ে ১৪৩.১৪ স্ট্রাইক রেটে লিগে করেন ৩৫৫ রান। নজরকাড়া সেই পারফরম্যান্সের পরও অবিশ্বাস্যভাবে, এবারের বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফটে কোনো দল পাননি তিনি। ড্রাফটের কিছুদিন পরে তাকে দলে নেয় বরিশাল।
দল পেয়েও ম্যাচ পাচ্ছিলেন না বিপিএলের শুরুতে। বরিশাল শুরুর দিকে নানা ওপেনিং জুটি চেষ্টা করলেও মুনিমের সুযোগ মিলছিল না। প্রথম সুযোগ তিনি হাতছাড়াও করেন। এরপর কেবল জয়ের গল্প।
রান-বলের সমীকরণেই স্পষ্ট তার ব্যাটিংয়ের আগ্রাসী চরিত্র। তবে শুধু এটুকুই নয়, সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো ব্যাপার তার সাহস। শট খেলতে ভয় পান না, কোনো বোলারকেই তোয়াক্কা করেন না। শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পিছপা হন না। তার শটের পরিধিও অনেক। উইকেটের চারপাশে খেলতে পারেন, উদ্ভাবনী কিছু শটও দেখা গেছে।
ম্যাচের পর ম্যাচ তার সামনে ম্লান এমনকি ক্রিস গেইলও। যদিও গেইল এখন নিজের সেরা সময়ের স্রেফ ছায়া হয়ে আছেন, তবু উদ্বোধনী জুটিতে তাকে স্রেফ দর্শক বানিয়ে রাখাও তো চাট্টিখানি কথা নয়। মুনিম তা পারছেন।
মুগ্ধ সাকিব তাই মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বললেন, সম্ভাবনাময় এই তরুণকে ঘষেমেজে তৈরির দায়িত্ব এখন দেশের ক্রিকেটের।
“বাংলাদেশের জন্য যা প্রয়োজন, সেই সব সম্ভাবনাই তার আছে। খুব পরিষ্কার বল হিট করে, ভয়ডরহীন ক্রিকেটার। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন ওর যত্ন খুব ভালোভাবে নিতে পারি। আমার মনে হয়, এবারের বিপিএলের প্রাপ্তি সে।”