ইটের জবাবে পাটকেল, পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি চলছেই। মাইকেল ভন ও সালমান বাটের কথার লড়াই থামছে না। বিরাট কোহলিকে নিয়ে শুরু বিতর্ক এখন চলে গেছে এই দুজনের ব্যক্তিগত পর্যায়ে। বাটের ফিক্সিং কলঙ্ক নিয়ে ভনের খোঁচার পর বাট এবার প্রশ্ন তুললেন ভনের মানসিক দীনতা নিয়ে।
Published : 17 May 2021, 11:34 AM
বিতর্কের সূত্রপাত ভনের একটি মন্তব্য থেকে, যেখানে তিনি তুলনা করেন বিরাট কোহলি ও কেন উইলিয়ামসনের। সাবেক এই ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলেন, ভারতীয় নন বলেই প্রাপ্য কৃতিত্ব পান না উইলিয়মসন। কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি কোহলির থেকে পিছিয়ে নেই।
সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান বাট পরে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, এই তুলনা করার মতো যথেষ্ট যোগ্য নন ভন। সেটি শুনে বাটকে খোঁচা দিয়ে ভন বলেন, “আমি অন্তত ম্যাচ ফিক্সিং করিনি।”
২০১০ সালে ইংল্যান্ডে মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমিরের সঙ্গে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বাট। তিনজনকে জেলেও যেতে হয়েছিল ।
ফিক্সিং নিয়ে ভনের মন্তব্যের পর এবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলেই পাল্টা তির ছুঁড়লেন বাট।
“ আমি বিস্তারিত গভীরে যেতে চাই না। আমার স্রেফ মনে হয়, সে ব্যাপারটিকে ভুলভাবে নিয়েছে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার কোনো মানে হয় না। তার মন্তব্য খুবই স্বস্তা, দুর্বল জায়গায় আঘাত করা।”
“ সে যদি অতীতে বাস করতে চায় এবং এসব নিয়ে কথা বলতে চায়, অবশ্যই তা পারে। তবে, কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অসুখ। কোনোকিছু সহজে বের হয় না, আটকে থাকে। অনেক লোকেরই মানসিক কোষ্ঠকাঠিন্য আছে। তাদের মানসিকতা পড়ে থাকে অতীতেই। তাদেরকে পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই।”
বাটের মতে, ক্রিকেটীয় যুক্তির পথ ছেড়ে অন্য পথে হেঁটে নিজের বাজে মানসিকতাই ফুটিয়ে তুলেছেন ভন।
“ আমরা দুজন গ্রেট ক্রিকেটারকে নিয়ে কথা বলছিলাম, সেটিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনই ছিল না। যে বছরের কথা সে বলছে (২০১০), সে সেখানে ফিরে যেতে পারে। তাতে সত্য বদলাচ্ছে না, যেটি নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম। যে যদি পরিসংখ্যানের উপস্থাপনা দেখাত, যুক্তি বা অভিজ্ঞতা থেকে তার পর্যবেক্ষণের কথা বলত, তাহলে ভালো হতো। আমরাও কিছু শিখতে পারতাম।”
“ সে যদি ক্রিকেটীয় কথায় আমাদের ভুল ও নিজেকে সঠিক প্রমাণ করত, তাহলে মজা হতো। কিন্তু তা করেনি। দুর্বল জায়গায় আঘাত সবাই করতে পারে। এতে স্রেফ ফুটে ওঠে, কোনটি আপনার পছন্দ, আপনি মানুষ হিসেবে কেমন। সে যেহেতু এটাই করেছে, যত ইচ্ছা করতে পারে। কেউ এসব পাত্তা দেয় না, বরং তার মানসিকতাই পরিষ্কার হয়।”
ভনের ওয়ানডে সেঞ্চুরি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্কটাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেওয়ার শুরুটা অবশ্য করেছিলেন বাটই। এই বিতর্কে তার প্রবেশও বাইরে থেকেই।
সবকিছুর শুরু নিউ জিল্যান্ডের স্পার্ক স্পোর্টে ভনের একটি মন্তব্য থেকে। সম্প্রতি সাবেক এই ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলেন, সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে লাইক ও ক্লিকের আশায় সবাই কোহলিকে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান বলেন। অন্য কাউকে সেরা বললে ভারতীয়দের কাছে অন্তর্জালে তুলাধুনা হতে হয়। ভনের মতে, তিন সংস্করণ মিলিয়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে উইলিয়ামসন আছেন কোহলির সমান্তরালেই এবং ভারতীয় হলে উইলিয়ামসনকেই বিশ্বসেরা বলা হতো।
ভনের ওই মন্তব্যের পর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বাট বলেন, কোহলি ও উইলিয়ামসনের তুলনা করার মতো যোগ্য নন ভন।
“ দুজনের তুলনা করেছে কে? মাইকেল ভন। ইংল্যান্ডের হয়ে সে দুর্দান্ত অধিনায়ক ছিল। কিন্তু সে যেখানে ব্যাট করত, সেখানকার দাবি মেটাতে পারেনি। টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে ভালো ছিল, কিন্তু ওয়ানডেতে একটি সেঞ্চুরিও করতে পারেনি।”
“ কোহলির ৭০টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি আছে, ভনের ওয়ানডেতে একটিও নেই। কোনো ওপেনার যখন সেঞ্চুরিই করতে পারে না, সেখানে আলোচনারই কিছু নেই। ব্যাপারটি হলো, স্রেফ হাবিজাবি বলে বিতর্ক ছড়ানোর প্রবণতা আছে তার। লোকেরও অনেক সময় আছে সেই বিতর্ক টেনে লম্বা করার।”
ইংল্যান্ডের হয়ে ৮২ টেস্টে ১৮ সেঞ্চুরি করলেও ৮৬ ওয়ানডেতে কোনো সেঞ্চুরি নেই ভনের। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তার ফিফটি ১৬টি, গড় ২৭.১৫। বাটের ইঙ্গিত ছিল সেদিকেই।
বাটের সেই মন্তব্য দেখে ভন বাটকে পাল্টা আক্রমণ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
“আমি দেখেছি, সালমান আমাকে নিয়ে কী বলেছে। কোনো সমস্যা নেই, নিজের মতামত সে জানাতেই পারে। তবে খুব ভালো হতো, যদি ২০১০ সালে ম্যাচ ফিক্সিং করার সময়ও তার চিন্তাভাবনায় এই স্বচ্ছতা থাকত।”
“তুমি বলতে ভুলে গেছো, আমি অন্তত ম্যাচ ফিক্সার ছিলাম না, আমাদের দারুণ খেলাটিকে দূষিত করিনি…।”
সেই কথার সূত্রেই এলো ভনের মানসিকতা নিয়ে বাটের এই মন্তব্য।