অভিজ্ঞতার ব্যবধানটা আলোচিত ছিল ম্যাচের আগে থেকেই। এই ম্যাচের আগে ওয়েন মর্গ্যান খেলেছেন ১৭৩ ওয়ানডে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবাই মিলে ১৫৭টি! ওয়ানডেতে যদিও সেটি খুব বড় ব্যাপার নয়, তার পরও শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিলেন সেই মর্গ্যানই।
Published : 04 Mar 2017, 10:16 AM
উইকেট মন্থর, বাউন্স খানিকটা অসমান। এই উইকেটেই অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে তিনশর কাছাকাছি নিয়ে গেলেন মর্গ্যান। দুই পেসার ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেট সেই স্কোরকে নিশ্চিত করলেন যথেষ্টরও বেশি। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৫ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।
অ্যান্টিগায় ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৬ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। ১৬ বল আগে ২৫১ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১১৬ বলে ১০৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা ইংল্যান্ড অধিনায়ক মর্গ্যান। ওকস ও প্লাঙ্কেট নিয়েছেন ৪ উইকেট করে।
বৃষ্টিতে ম্যাচ শুরু হয় দেরিতে। স্যার ভিভ রিচাডর্স স্টেডিয়ামে টস জিতে বোলিং নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের শুরুটা খারাপ ছিল না। জেসন রয়কে এলবিডব্লিউ করার পর জো রুটের স্টাম্পস ওড়ান শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।
ম্যাচে আগের দিন উইকেট দেখে মর্গ্যান বলেছিলেন, এখানে অতি আক্রমণাত্মক না হয়ে খেলতে হবে একটু দেখে শুনে। ম্যাচে সেটিই করে দেখালেন তিনি নিজে।
থিতু হয়েছেন সময় নিয়ে। দু অঙ্ক ছুঁতে লেগেছে ৩৩ বল। তার পরও ধৈর্য্য হারাননি, তাড়াহুড়ো করেননি। রান বাড়ানোর কাজটি সে সময় করেছেন স্যাম বিলিংস। অষ্টম ওয়ানডেতে করেছেন দ্বিতীয় অর্ধশতক।
বিলিংসকে (৫৬ বলে ৫২) ফিরিয়ে ৬৭ রানের জুটি ভাঙেন অ্যাশলি নার্স। এই অফ স্পিনার খানিক পর তুলে নেন জস বাটলারকেও। ইংল্যান্ড তখন ৪ উইকেটে ১২৯। সেখান থেকেই ম্যাচের লাগাম নেন মর্গ্যান। সঙ্গী পান বেন স্টোকসকে।
এক-দুই করে দলের রান বাড়ান দুজন। সুযোগ মত খেলেছেন বড় শট। মন্থর উইকেটে চার মারতে না পেরে স্টোকস ভরসা করেন নিজের পেশিশক্তিতে। মারেন তিনটি ছক্কা। থিতু হওয়ার পর দারুণ সব শট খেলেন মর্গ্যান।
পঞ্চম উইকেটে প্রায় বল প্রতি রান তুলে ১১০ রানের জুটি গড়েন দুজন। ছক্কা মারার চেষ্টাতেই স্টোকসের (৫৫) বিদায়ে ভাঙে জুটি।
রানটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাগালের বাইরে চলে যায় পরের জুটিতে। ৪.৫ ওভারে ৫৩ রানের জুটি গড়েন মর্গ্যান ও মইন আলি।
কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে ১১২ বলে মর্গ্যান স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে তার দশম, অধিনায়ক হিসেবে পঞ্চম। ছাড়িয়ে গেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিসেবে অ্যালেস্টার কুক ও অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের চার সেঞ্চুরির রেকর্ড।
১১ চার ও ২ ছক্কায় ১০৭ রানে শেষ ওভারে রান আউট মর্গ্যান। ২২ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন মইন।
শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ড তোলে ১০০। প্রথম ৭ ওভারে ২০ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল। শেষ ৩ ওভারে গুণেছেন ৩৮ রান।
রান তাড়ায় কখনোই ঠিক গতি পায়নি ক্যারিবিয়ান ইনিংস। ঝড় তোলার সামর্থ্য ছিল যার, সেই এভিন লুইসকে ২১ রানে ফেরান ওকস। আরেক ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকেও ফেরান ওকস। কাইরান পাওয়েলের দলে ফেরা স্মরণীয় করতে দেননি প্লাঙ্কেট। ৩৯ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারায় ৩ উইকেট।
জেসন মোহাম্মদ ও জোনাথন কার্টারের জুটিতে খনিকটা সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পঞ্চম উইকেটে ৮৩ বলে ৮২ রানের জুটি গড়েন দুজন।
৪৭ বলে ৫২ রান করা কার্টারকে ফিরিয়ে দেন প্লাঙ্কেট। ৭২ রান করে রান আউট জেসন। প্লাঙ্কেট ও ওকস মিলে শেষ দিকেও আর ডানা মেলতে দেননি ক্যারিবিয়ানদের। ইংলিশদের জয়টা শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে অনায়াস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৯৬/৭ (জেসন ১৩, বিলিংস ৫২, রুট ৪, মর্গ্যান ১০৭, বাটলার ১৪, স্টোকস ৫৫, মইন ৩১*, ওকস ০*; হোল্ডার ০/৪৬, গ্যাব্রিয়েল ২/৫৮, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ০/৫৪, নার্স ২/৫৭, বিশু ১/৪৯, জেসন ০/২৫)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৭.২ ওভারে ২৫১ (ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ১৪, লুইস ২১, পাওয়েল ১, হোপ ৩১, জেসন ৭২, কার্টার ৫২, হোল্ডার ৪, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ১২, নার্স ২১, বিশু ১২*, গ্যাব্রিয়েল ০; ফিন ০/৪৯, ওকস ৪/৪৭, রুট ০/৩১, প্লাঙ্কেট ৪/৪০, মইন ০/৩৭, রশিদ ১/৪৩)।
ফল: ইংল্যান্ড ৪৫ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ১-০ তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: ওয়েন মর্গ্যান