অসুস্থ শরীরেও নিজেকে উজার করে দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু অধিনায়কের বীরোচিত পারফরম্যান্সেও উজ্জীবিত হয়ে জ্বলে উঠতে পারলেন না সতীর্থরা। শুভাগত হোমের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জিতল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
Published : 30 Apr 2016, 06:55 PM
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মাশরাফির কলাবাগান ক্রীড়া চক্রকে ৪৭ রানে হারিয়েছে শুভাগত হোমের প্রাইম ব্যাংক। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ২৮০ রানে অলআউট হয়েছিল প্রাইম ব্যাংক। পরে কলাবাগানকে ২৩৩ রানে বেঁধে ফেলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
এই নিয়ে তিন ম্যাচের সবকটি হারল কলাবাগান। হার দিয়ে শুরুর পর টানা দুই ম্যাচ জিতল প্রাইম ব্যাংক।
টস জিতে প্রাইম ব্যাংকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন মাশরাফি। দারুণ শুরু করা প্রতিপক্ষের রাশও টেনে ধরেন কলাবাগান অধিনায়কই।
মাঠে এসেছিলেন মাশরাফি ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে। শারীরিক অবস্থা দেখে কোচ মানা করেছিলেন মাঠে নামতে। দলের দুরাবস্থার কথা ভেবে তবু নেমে যান অধিনায়ক। সবসময় পায়ে টেপ পেঁচিয়ে মাঠে নামলেও এদিন করা হয়নি এটিও। ছোট রান আপে তার পরও বোলিং করেছেন টানা ৮ ওভার! প্রথম স্পেলে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
মেহেদি মারুফ ও নুরুল হাসানের উদ্বোধনী জুটিতেই পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যায় প্রাইম ব্যাংক। ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙাসহ ১১ বলের মধ্যে ৩ উইকেট নেন মাশরাফি। দুই ওপেনারের পর ফেরান শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার দিলশান মুনাবিরাকেও।
প্রাইম ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ায় সাব্বির রহমান ও শুভাগত হোমের দারুণ জুটিতে। দ্রুত ৩ উইকেট হারালেও ভড়কে না গিয়ে প্রতি আক্রমণ চালান জাতীয় দলের দুই ব্যাটসম্যান। চতুর্থ উইকেটে ৯৪ বলে গড়েন ১০৬ রানের জুটি।
৫টি চার ও ২ ছক্কায় ৪৩ বলে অর্ধশতক স্পর্শ করেন শুভাগত। শরিফুল্লাহকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে সাব্বির পঞ্চার্শ করেন ৪৭ বলে।
দুজন আউটও হন প্রায় এক সঙ্গেই। দেওয়ান সাব্বিরের হাফভলি মিড অফে তুলে দেন সাব্বির (৪৯ বলে ৫৩)। ৫৪ বলে ৬০ করে স্টাম্পড শুভাগত। শরিফুল্লাহর লেগ স্টাম্পের বাইরের ওয়াইড বলে দারুণ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পিং করেন উইকেটকিপার জসিমউদ্দিন।
দুই থিতু ব্যাটসম্যানের পর ফর্মে থাকা ইয়াসির আলিকেও হারিয়ে খানিকটা বিপাকে পড়ে যায় প্রাইম ব্যাংক। সেখান থেকে দলকে টেনে নেন তাইবুর রহমান। আগের ম্যাচে ৭৬ রানের পর বাঁহাতি ব্যাটসম্যন এবার করেছেন ৫৮ বলে ৫২। রায়হান উদ্দিনের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে জুটি ৬৬ রানের।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এই জুটি ভাঙেন মাশরাফি। ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট। অভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাক নেন শেষ দুটি উইকেট। এক সময় তিনশ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগালেও প্রাইম ব্যাংক করতে পারে ২৮০।
রান তাড়ায় সাদমান ইসলাম ও জসিমউদ্দিনের শুরুটা ছিল সাবধানী। ১৬ ওভারে ৭৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পর মনির হোসেনের বাঁহাতি স্পিনে এক ওভারেই এলবিডব্লিউ দুই ওপেনার।
খানিকটা মন্থর শুরু হলেও পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল চালিয়ে খেলার ভিত। কিন্তু সেই কাজটি করতে পারেননি কলাবাগানের কোনো ব্যাটসম্যান। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা থিতু হতে সময় নিয়ে ফেলেন একটু বেশিই। অর্ধশতকের পর যখন তার কাছে দলের দাবি ঝড় তোলা, জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান আউট হয়ে ফেরেন তখনই (৭২ বলে ৬১)।
শেষ দিকে দুই ছক্কা মারা রাজ্জাক ও মাশরাফিকে পরপর দুই বলে বোল্ড করেন শুভাগত। আরও একটি হারের হতাশায় মাঠ ছাড়ে কলাবাগান।
লিস্ট ‘এ’ অভিষেকে ব্যাট হাতে ২৬ রানের পর বাঁহাতি স্পিনে ৪ উইকেট নিয়েছেন প্রাইম ব্যাংকের রায়হান। তবে ম্যাচ সেরা তার অধিনায়ক শুভাগত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক: ৪৮.৪ ওভারে ২৮০ (মেহেদি ৩৭, নুরুল ১৮, সাব্বির ৫৩, মুনাবিরা ৩, শুভাগত ৬০, তাইবুর ৫২, ইয়াসির ৯, রায়হান ২৬, রুবেল ১০, নাজমুল অপু ১, মনির ১*; নিহাদুজ্জামান ০/৪৩, সাব্বির ২/৪৪, মাশরাফি ৪/৫৬, রাজ্জাক ২/৫০, তানভীর ০/১২, শরিফুল্লাহ ২/৫৬, তাসামুল ০/১৭)।
কলাবাগান: ৪৫.৪ ওভারে ২৩৩ (সাদমান ৪৫, জসিমউদ্দিন ২৫, মাসাকাদজা ৬১, মেহরাব ২৭, তানভীর ০, শরিফুল্লাহ ১৫, তাসামুল ৮, রাজ্জাক ১৯, নিহাদুজ্জামান ৮, মাশরাফি ০, সাব্বির ১০*; রুবেল ২/৫১, শুভাগত ২/৪৪, নাজমুল অপু ০/৪৩, মুনাবিরা ০/১৬, মনির ২/৩৬, রায়হান ৪/৩৮)।
ফল: প্রাইম ব্যাংক ৪৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শুভাগত হোম