আন্তর্জাতিক আঙিনায় আবির্ভাবের সময়টায় ক্রিকেট বিশ্বে দারুণ নজর কেড়েছিলেন বাঁহাতি এই পেসার, খেলে গেছেন তিনি বিপিএলের প্রথম আসরেও।
Published : 31 Jan 2025, 12:06 PM
ছয় ফুটের বেশি উচ্চতা, কাঁধ পর্যন্ত নেমে আসা বাবরি দোলানো চুল, ৩০ গজের বৃত্ত পেরিয়ে যাওয়া দীর্ঘ রান আপ, আগ্রাসী বোলিং আর শরীরী ভাষা, খ্যাপাটে উদযাপন, সব মিলিয়ে শাপুর জাদরানকে আলাদা করে চোখে পড়ত খুব সহজেই। শুধু দর্শনধারীতে নয়, গুণবিচারিতেও তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। দলকে সাফল্য এনে দিয়েছেন অনেক। আফগান ক্রিকেটের শুরুর সময়ের এই তারকা এবার থামিয়ে দিলেন তার পথচলা।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে অবশ্য আফগানিস্তান জাতীয় দলের বাইরে তিনি। স্বীকৃত ক্রিকেটে সবশেষ খেলেছেন আড়াই বছর আগে। এবার আনু্ষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিলেন ৩৭ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার।
৪৪ ওয়ানডেতে ৪৩ উইকেট ও ৩৬ টি-টোয়েন্টিতে ৩৭ উইকেট নিয়ে শেষ হলো তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তবে শুধু এই পরিসংখ্যান দিয়ে তাকে বিবেচনা করা যাবে না মোটেও। আফগান ক্রিকেটে তার আবেদন ও অবদান আরও অনেক বেশি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফগানিস্তানের আবির্ভাব এবং হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলার সময়টায় যে কজন ক্রিকেটার বিশ্ব ক্রিকেটে সাড়া জাগিয়েছিলেন, শাপুর ছিলেন তাদেরই একজন। হামিদ হাসান, মোহাম্মদ নাবির সঙ্গে তিনিও ছিলেন সেই সময়ের বড় তারকা।
তিনি আদর্শ মানতেন শোয়েব আখতারকে। মাঠে তার উপস্থিতি, দীর্ঘ রান আপ, ফাস্ট বোলারসুলভ সহজাত আগ্রাসী মানসিকতা, সবকিছু মনে করিয়ে দিত শোয়েবকেই। আফগান ক্রিকেটের দারুণ কিছু সাফল্যের সঙ্গীও তিনি। বিশেষ করে, ২০১৫ বিশ্বকাপ তো ভোলার নয় কখনোই। ওই আসরে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে ছিল ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, তিলাকারাত্নে দিলশানদের উইকেট।
বৈশ্বিক আসরে আফগানিস্তানের প্রথম জয়ের সঙ্গেও খোদাই হয়ে আছে শাপুরের নাম। ওই বিশ্বকাপেই ডানেডিনে চার উইকেট নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডকে আটকে রেখেছিলেন ২১০ রানে। সিই রান তাড়ায় ১৯২ রানে নবম উইকেট হারায় আফগানরা। দশে নামা হামিদ হাসান ও এগারো নম্বরে নামা শাপুর এরপর স্নায়ুর চাপকে হারিয়ে রোমাঞ্চকর শেষ জুটিতে রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দেন দলকে। চার উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ১০ বলে ১২ রান করে ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছিলেন শাপুর।
আফগান ক্রিকেট পরে এগিয়ে গেছে অনেক। তিনি সময়ের সঙ্গে বিবর্ণ হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবশেষ তাকে দেখা গেছে ২০২০ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে। স্বীকৃত ক্রিকেটে সবশেষ খেলেছেন ২০২২ সালের জুলাইয়ে নিজ দেশে টি-টোয়েন্টি লিগে। সেখানে আর কিছু যোগ হচ্ছে না।
বিদায় বেলায় পেছন ফিরে তাকিয়ে শাপুর সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানালেন কঠিন ভ্রমণে তাকে সাহস জোগানোর জন্য।
“আফগান ক্রিকেটের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমার পথচলা শুরু হয়েছিল। অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি, সীমিত রসদ নিয়ে লড়েছি, অনেক বাধা পেরিয়েছি, কিন্তু কখনোই বিশ্বাস হারাইনি। ক্রিকেট সমর্থকদের সমর্থন, সতীর্থরা, কোচরা এবং বিশেষ করে আমার পরিবার পাশে থেকে প্রতিটি বাধা পার হতে সহায়তা করেছে আমাকে। সবার প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।”
“আমার পরিবার, বন্ধু, সমর্থক ও আফগানিস্তানের মানুষদের ভালোবাসা, দোয়া ও অটুট সমর্থন আমার সবসময়ের সবচেয়ে বড় শক্তি। এটার জন্য আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।”
প্রথম বিপিএলে ২০১২ সালে খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের হয়ে ৮ ম্যাচ খেলে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি ওভারপ্রতি মাত্র ৬.২৯ রান দিয়ে।
খেলা ছাড়লেও ক্রিকেট ছাড়ছেন না বলে জানিয়েছেন শাপুর। পরের প্রজন্মের আফগান ক্রিকেটারদের বেড়ে ওঠায় অবদান রাখতে চান তিনি।