৫৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার পর ২৯ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেকের উপলক্ষটা রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে রাঙালেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান।
Published : 30 Jan 2025, 05:24 PM
৯৮ রান থেকে অফ স্পিনার নিশান পেইরিসের বল এক্সট্রা কাভারে খেলে দুই রান নিয়ে থামলেন না জশ ইংলিস। তৃতীয় রানের জন্য অর্ধেক পিচে যেতেই তিনি উঁচিয়ে ধরলেন ব্যাট। রান পূর্ণ করার পর শূন্য দিলেন লাফ। টিভি ক্যামেরায় ভিআইপি বক্সে ধরা পড়লেন তার উচ্ছ্বসিত বাবা-মা। উড়ন্ত চুম্বন ছুড়লেন বাবা। ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে করতালিতে মুখর গোটা অস্ট্রেলিয়া দল। ব্যাট ও হেলমেট উঁচিয়ে সবার অভিবাদনের জবাব দিলেন ইংলিস, জড়িয়ে ধরলেন উইকেটের সঙ্গী অ্যালেক্স কেয়ারিকে। ছোট ছোট সব চিত্রই ফুটিয়ে তুলছে মুহূর্তটির মাহাত্ম্য। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি বলে কথা!
৫৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার পর ২৯ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেকের উপলক্ষটা রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে রাঙালেন ইংলিস।
গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ৯০ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি। টেস্ট অভিষেকে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি।
২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মোহালিতে অভিষেকে ৮৫ বলে সেঞ্চুরি করে চূড়ায় আছেন ভারতের শিখার ধাওয়ান। ২০০৪ সালে কেপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকে ৯৩ বলে সেঞ্চুরি করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন স্মিথ নেমে গেছেন এখন তালিকার তিন নম্বরে।
একশর কম বলে অভিষেকে সেঞ্চুরি আছে আর কেবল একজনের। ২০১৮ সালে রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৯ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ভারতের পৃথ্বী শ।
একটি জায়গায় অবশ্য ইংলিস ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। ১০ চার ও এক ছক্কায় ৯৪ বলে ১০২ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১০৮.৫১। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস এটিই।
এখানে দুইয়ে নেমে গেছেন ধাওয়ান। অভিষেকে তার ১৭৪ বলে ১৮৭ রানের ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ছিল ১০৭.৪৭। স্মিথের ১০৫ বলে অপরাজিত ১০৫ রানের ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ছিল ঠিক ১০০।
এই তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছেন বাংলাদেশের একজন। ২০১২ সালে অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আবুল হাসান ৯৮.১৬ স্ট্রাইক রেটে ১২৩ বলে করেছিলেন ১১৩ রান। তার ওপরে আছেন ইংল্যান্ডের ম্যাট প্রিয়র, ২০০৭ সালে অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৮ বলে অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৯৮.৪৩।
অস্ট্রেলিয়ার ৪৭০তম ক্রিকেটার হিসেবে এই ম্যাচে টেস্ট ক্যাপ পান ইংলিস। এর মধ্যে তিনিসহ অভিষেকে সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন কেবল ২১ জন।
উপমহাদেশে তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। ২০০৪ সালে বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে মাইকেল ক্লার্ক ও ২০১১ সালে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শন মার্শ অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছিলেন।
এই তিন জন ছাড়া দেশের বাইরে অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন আর কেবল চার জন।
ইংলিসের আগে সবশেষ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছিলেন অ্যাডাম ভোজেস, ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
স্যাম কনস্টাসের জায়গায় ট্রাভিস হেডকে ওপেনিংয়ে তুলে আনায় ইংলিস এই ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছেন মিডল অর্ডারে। কিপার হলেও বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবেই ম্যাচটিতে খেলছেন তিনি।
১৪১ রান করে স্টিভেন স্মিথের বিদায়ের পর পাঁচ নম্বরে যখন ব্যাটিংয়ে নামেন ইংলিস, ততক্ষণে চারশ পেরিয়ে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে গেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম বলেই লেগ স্পিনার জেফ্রি ভ্যান্ডারসেকে চার মেরে রানের খাতা খোলেন তিনি।
পরে তার রানের গতি কমে যায় কিছুটা। প্রথম ১৫ রান করতে খেলেন ২১ বল। এরপর আবার গতি বাড়িয়ে ৫১ বলে পূর্ণ করেন পঞ্চাশ। সেখান থেকে পরের পঞ্চাশ করতে লাগে মাত্র ৩৯ বল।
পরের ওভারেই বাঁহাতি স্পিনার প্রাবাথ জায়াসুরিয়ার বলে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার রেকর্ড গড়া ইনিংস। এই ইনিংসের পথে চতুর্থ উইকেটে উসমান খাওয়াজার সঙ্গে ১৪৬ রানের জুটি গড়েন তিনি। ওপেনার খাওয়াজা করেন ডাবল সেঞ্চুরি।