দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসের সফলতম স্পিনার হয়ে গেলেন কেশাভ মহারাজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা দশম সিরিজ জিতল প্রোটিয়ারা।
Published : 18 Aug 2024, 11:30 AM
জয় থেকে তখন স্রেফ এক উইকেট দূরে দক্ষিণ আফ্রিকা। দারুণ এক লড়াই চলছিল দক্ষিণ আফ্রিকার দুই বোলারের। ৩০০ উইকেট পূর্ণ করতে কাগিসো রাবাদার প্রয়োজন ছিল একটি উইকেটের। দেশের সফলতম টেস্ট স্পিনার হয়ে উঠতে কেশাভ মহারাজেরও প্রয়োজন ছিল ওই এক উইকেটের। শেষ পর্যন্ত সফল হলেন মহারাজ। তার মাইলফলকের দিনে প্রোটিয়ারা ধরে রাখল দ্বিপাক্ষিক এই লড়াইয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য।
গায়ানা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪০ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে তাদের টানা দশম টেস্ট সিরিজ জয় এটি।
টেস্টের তৃতীয় দিনে রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ে ধস নামলেও জ্বলে ওঠেন তাদের বোলাররা। শেষ ইনিংসে ২৬৩ রানের লক্ষ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআআউট হয় ২২২ রানে।
তিনটি করে উইকেট শিকার করেন রাবাদা ও মহারাজ। ২৯৯ উইকেট নিয়ে টেস্ট শেষ করলেন রাবাদা। মহারাজের ক্যারিয়ার শিকার এখন ১৭১টি। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসের সফলতম স্পিনার এখন তিনিই।
৫ উইকেটে ২২৩ রান নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা শুরু করে দিন। ৩৪ রানে অপরাজিত থাকা ভিয়ান মুল্ডার আগের দিনের রানেই ফেরত যান দিনের প্রথম ওভারে।
এরপর সিলসের তোপের মুখে পড়ে প্রোটিয়া ব্যাটিং। মহারাজকে টানা তৃতীয় শূন্য উপহার দেন এই পেসার। ৫০ রানে দিন শুরু করা কাইল ভেরেইনা আর যোগ করতে পারেন ৯ রান। তাকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন সিলস।
শেষ দুই উইকেটও পড়ে দ্রুতই। সব মিলিয়ে ২২ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা। তৃতীয় দিনে ৫০ মিনিটে শেষ হয় ইনিংস।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৬১ রানে ৬ উইকেট নেন সিলস।
বাউন্স ও মুভমেন্ট থাকা উইকেটে ২৬৩ রানের লক্ষ্যটা সহজ ছিল না। এ দিন স্পিনও ধরেছে বেশ। প্রোটিয়া পেসার ও স্পিনাররা মিলে চেপে ধরেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের।
টপ অর্ডারে ছোবল দেন রাবাদা ও মুল্ডার। পরে আক্রমণে যোগ দেন স্পিনাররা। ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন বটে। তবে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি কেউই।
প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের চারজন ১৫ স্পর্শ করলেও ৩০ পর্যন্ত যেতে পারেননি একজনও। ১০৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে অনেকটা ছিটকে পড়ে তারা।
সেই দলকে লড়াইয়ে ফেরান জশুয়া দা সিলভা ও গুডাকেশ মোটি। সপ্তম উইকেটে ৭৭ রানের জুটি গড়েন দুজন।
তাদের আশা যখন একটু করে উজ্জ্বল হচ্ছে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার আলো হয়ে আসেন মহারাজ। এই দুজনকেই ফেরান তিনি।
২৭ রানে আটকে যান জশুয়া। ক্যারিয়ার সেরা ৪৫ রানে থামেন মোটি।
এরপর জোমেল ওয়ারিক্যান লড়াই চালিয়ে যান। তবে আরেকপ্রান্তে শামার জোসেফকে বিদায় করেন রাবাদা। এরপর সিলসকে আউট করে ম্যাচ শেষ করেন মহারাজ। পেরিয়ে যান তিনি সাবেক অফ স্পিনার হিউ টেফিল্ডের ১৭০ উইকেটের রেকর্ড।
দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের সেরা স্পিনার বলে বিবেচিত টেফিল্ড ১৭০ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন ৩৭ টেস্ট খেলে। তাকে পেরিয়ে যেতে মহারাজের লাগল ১৫ টেস্ট বেশি।
সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা সিরিজ হয়েছেন এই মহারাজই। দুই ইনিংসে ছয় উইকেটের সঙ্গে ৩৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা ভিয়ান মুল্ডার।
এই জয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান এখন পাঁচে। সবার নিচে ৯ নম্বরে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দুই দল এখন খেলবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। যেটি শুরু আগামী শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১৬০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ১৪৪
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৮০.৪ ওভারে ২৪৬ (আগের দিন ২২৩/৫) (ভেরেইনা ৫৯, মুল্ডার ৩৪, মহারাজ ০, রাবাদা ৬, পিট ৭*, বার্গার ০; সিলস ১৮.৪-৪-৬১-৬, হোল্ডার ১২-৪-২৪-০, জোসেফ ১৮-২-৫৩-০, মোটি ২২-৫-৬১-২ ওয়ারিক্যান ৯-২-২১-২, হজ ১-০-৯-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৬৩) ৬৬.২ ওভারে ২২২ (ব্র্যাথওয়েট ২৫, লুই ৪, কার্টি ১৭, আথানেজ ১৫, হজ ২৯, হোল্ডার ০, জশুয়া ২৭, মোটি ৪৫, ওয়ারিক্যান ২৫*, জোসেফ ১১, সিলস ৪; রাবাদা ১৬-৫-৫০-৩, বার্গার ১৩-৩-৩৪-০, মুল্ডার ১৪-২-৩৫-২, মহারাজ ১১.২-২-৩৭-৩, পিট ১২-১-৫০-২)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০ রানে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ১-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ভিয়ান মুল্ডার।
ম্যান অব দা সিরিজ : কেশাভ মহারাজ।