সমস্যা হলো, অনুশীলনে ভুল শট শুধরে নেওয়া যায় সবসময়ই। ম্যাচে সেই সুযোগ থাকে কম সময়ই। মুশফিক তো সুযোগটা একদমই পাচ্ছেন না ইদানিং। ব্যাট হাতে সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের। তাতে ভুগতে হচ্ছে দলকেও। মুশফিক যে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানদের একজন।
মাঝের ওভারগুলো নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব থাকে তার। যেখানে এক-দুই করে প্রান্ত বদলাতে হয় নিয়মিত। মুশফিক তা খুব ভালো পারেন। উদ্ভাবনী শট খেলতে হয় প্রয়োজনে। মুশফিক সেখানেও দলের সেরাদের একজন। আলগা বল বা একটু সুযোগ পেলে খেলতে হয় বড় শট। মুশফিক সেটিও পারেন খুব ভালো।
তবে সেটা সেরা চেহারার মুশফিক। ছন্দে থাকা মুশফিক। আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর মুশফিক। সেই মুশফিক এখন অনেকটাই অচেনা। সাম্পতিক সময়ে তিনি ভীষণ রকম বিবর্ণ। টি-টোয়েন্টি সংস্করণ বিবেচনায় নিলে তার এই দুঃসময় চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই।
দেশের মাঠে গত মাসে নিউ জিল্যান্ড সিরিজে ৫ ইনিংসে ১৩ গড়ে তার রান ছিল ৩৯। স্ট্রাইক রেট ছিল কেবল ৫২।
হতাশার সেই চিত্র বদলায়নি দেশ ছেড়েও। ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে গত ৮ অক্টোবর প্রস্তুতি ম্যাচে আউট হন প্রথম বলে। এরপর অফিসিয়াল দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার রান ১৩, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪।
মাঝের ওভারগুলোয় ইনিংস এগিয়ে নেওয়া ও শেষ দিকে ঝড় তোলার জন্য দল তাকিয়ে থাকে তার ব্যাটে। সেই ব্যাট টি-টোয়েন্টিতে কথা বলছে না আসলে অনেক দিন থেকেই।
সবশেষ ৮ ইনিংসে ২০ ছাড়াতে পারেননি তিনি। ২০১৯ সালের ভারত সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪৩ বলে ৬০ রানের ম্যাচ জেতানো দুর্দান্ত একটি ইনিংস তিনি খেলেছিলেন। সবশেষ ২৫ ম্যাচে ফিফটি ওই একটিই। এই ২৫ ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ১৬.৪৭, স্ট্রাইক রেট ১০২.৪৭।
এই পরিসংখ্যানও আসলে সবটুকু তুলে ধরছে না। ব্যাটসম্যানদের ভালো সময়, খারাপ সময় আসেই। ব্যাটে রান খরাও দেখা যায়। কিন্তু মুশফিকের ক্ষেত্রে একটি ব্যাপার ছিল, তার স্কিল দারুণ বলে উইকেটে তাকে ধুঁকতে দেখা গেছে কমই। তা প্রতিপক্ষের বোলিং যত শক্তিশালীই হোক, উইকেট যতটা কঠিনই হোক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাকে ২২ গজে ভুগতে দেখা গেছে অনেক।
বিশ্ব আসরেও তিনি ব্যাটিংয়ের তাল-লয় মেলাতে না পারলে দলের সম্ভাবনায়ও বড় চোট লাগবে নিশ্চিতভাবেই।
সেই দুর্ভাবনার হাওয়া দলের বিশ্বাসকে কিছুটা হলেও নড়বড়ে করে দেওয়ার কথা। অধিনায়ক, কোচ বা টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তার খোরাকও না জোগানোর কারণ নেই। তবে দলনেতাকে তো তার অভিজ্ঞ সৈনিকের পাশে থাকতেই হয়!
বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অনুমিতভাবেই তার ভরসার হাত রাখলেন মুশফিকের অভিজ্ঞ কাঁধে।
“আমরা সবাই জানি যে মুশফিক আমাদের দলের জন্য কতটা মূল্যবান। অনেক সময় অনেক ক্রিকেটারের, বিশেষ করে এই ফরম্যাটে ১-২ টা ম্যাচ বা ৩-৪ টা ম্যাচ অনেক সময় খারাপ যেতে পারে। ওর মতো সামর্থ্যের ক্রিকেটারকে নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বছরের পর বছর ধরে ও এটা প্রমাণ করে এসেছে যে, কতটা চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার সে।”
“আমাদের সবার পূর্ণ সমর্থন আছে তার প্রতি এবং আমরা সবাই বিশ্বাস করি, যে দলের সঠিক সময়ে সে ফিরে আসবে। এটা কেবলই সময়ের ব্যাপার, আজ হোক বা কাল। একটা ভালো ইনিংস কিংবা ভালো শুরু ওর আত্মবিশ্বাসটা আগের জায়গায় নিয়ে আসবে। এটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি। টিম ম্যানেজমেন্ট ও দল, সবাই ওর ওপর আস্থা রাখছি।”
নিউ জিল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামকে ছুটি দিয়ে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে হাই পারফরম্যান্স দলের বিপক্ষে দুটি একদিনের ম্যাচ খেলেন তিনি নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টায়। রানও করেন সেখানে। এরপর বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোয় ভালো করেননি। তবে ‘এ’ দলে খেলা, নেটে লম্বা সময় কাটানো, এসবে মুশফিকের প্রচেষ্টার প্রতিচ্ছবিই ফুটে ওঠে।
অধিনায়কও আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন অনেক লড়াইয়ের অভিজ্ঞ এই যোদ্ধার নিবেদনের কথা।
“এই ফরম্যাটে অনেক সময় ২-৩টা বা ৩-৪টা ম্যাচ যায় যেখানে হয়তো আপনি ধুঁকবেন। কিন্তু আপনি যখন নেটে যাবেন…আমরা অনেক বছর ধরেই দেখছি সে কতটা পরিশ্রমী। আমরা সবাই জানি ওর নিবেদন ও শৃঙ্খলা নিয়ে। নতুন করে বলার কিছু নেই। ট্রেনিংয়ে খুব ভালো করছে। স্রেফ একটু সময়ের ব্যাপার।”
কিন্তু সময়টা আর বেশি নেই। বিশ্বকাপ যে চলেই এলো। মুশফিক নিজেও নিশ্চয়ই শুনতে পারছেন সময়ের ডাক!