বাংলাদেশের ‘বৃত্ত ভাঙার’ বিশ্বকাপ শুরু স্কটিশ চ্যালেঞ্জ দিয়ে

মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকলেন মাহমুদউল্লাহ। পরের সময়টায় যেন ছুটল হাসির ফোয়ারা। কখনও স্মিত হাসি, কখনও চওড়া। সব প্রশ্ন অবশ্যই হাসির খোরাক জোগানোর মতো ছিল না। কথার ‘হাফ ভলির’ পাশাপাশি বাউন্সার-ইয়র্কারও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক ফুরফুরে মেজাজেই সামলে নিলেন সব। কণ্ঠে প্রত্যয় নিয়ে শোনালেন এবারের বিশ্বকাপে শেকল ভাঙার গান।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিমাসকাট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2021, 07:23 PM
Updated : 16 Oct 2021, 08:07 PM

২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরের মূল পর্বে কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে এবার বেরোতে চায় দল। সেই অভিযান শুরু হচ্ছে রোববার। ওমানের ক্রিকেট একাডেমি মাঠে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।

প্রতিবারই প্রথম রাউন্ড নামের প্রায় বাছাই পর্ব খেলতে হয় যে দলকে এবং মূল আসরে যারা গত ১৪ বছরে কোনো ম্যাচ জেতেনি, তাদের মুখে বড় আশার কথা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। বিশেষ করে, বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতির ছবিটা যখন ধূসর।

দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতে উড়তে থাকা দল ভূপাতিত হয়েছে বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে। দুটি অফিসিয়াল গা গরমের ম্যাচে হারতে হয়েছে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের কাছে।

সেই ম্যাচগুলিতে অবশ্য পুরো দল পায়নি বাংলাদেশ। পিঠের অস্বস্তির কারণে খেলেননি অধিনায়ক নিজে, সাকিব আল হাসান ছিলেন আইপিএলে। মুস্তাফিজুর রহমান খেলেন কেবল একটিতে। এটিই মনে করিয়ে দিয়ে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ বললেন, প্রস্তুতি ম্যাচের হারে একটুও বিচলিত নয় দল।

“আমরা প্রস্তুতি ম্যাচ দুটি হেরেছি, তবে আমার মনে হয় ওটা কোনো প্রভাব ফেলবে না। আগামীকালের ম্যাচের জন্য আমরা প্রস্তুত। দলের আত্মবিশ্বাস আগের মতোই আছে। আশা করি, আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে পারব।

“আমরা জানি, প্রস্তুতি ম্যাচে আমরা কোন জায়গায় ভুল করেছি। আমাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় খেলেনি এবং আমার মনে হয়, প্রস্তুতি ম্যাচের ফলাফল আমাদের ওপর মানসিকভাবে প্রভাব ফেলবে না। আমরা খুবই ইতিবাচক আছি।”

সেই ইতিবাচকতার ভেলায় মাহমুদউল্লাহ এগোতে চান অনেক দূর। প্রথম ম্যাচ, প্রথম পর্ব পার হয়ে মূল পর্বেও এবার নিজেদের ছাড়িয়ে যেতে চান অধিনায়ক।

“আমরা আপাতত প্রথম রাউন্ড নিয়েই চিন্তা করছি। এই রাউন্ডে ভালো ক্রিকেট খেলে সবগুলা ম্যাচ জিতে যদি পরের রাউন্ডে যেতে পারি, তখন আরও ভাবব। একটা কথা বলেছিলাম, বেশ কয়েকটা ধাপ আমাদের পার করতে হবে আমাদের। কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, যা আমরা ভাঙতে চাই। যত বেশি সম্ভব ম্যাচ জিততে চাই। এই ব্যাপারগুলো আমাদের মাথায় আছে এবং আমরা ধাপে ধাপে এগোতে চাই।”

এই গ্রুপের অন্য দুই দল ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনি। সাধারণ চোখে তাই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হয়ে গ্রুপ পর্ব না উতরানোর কারণ নেই। তবে ক্রিকেট, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তো আর সাধারণ সমীকরণ মেনে চলে না। এই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও সেটির প্রমাণ বাংলাদেশ পেয়েছে ৯ বছর আগে। দুই দল ২০ ওভারের ক্রিকেটে একবারই মুখোমুখি হয়েছে। ২০১২ সালে সেই ম্যাচে স্কটিশদের সামনে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ।

সেই ম্যাচে জয়ী দলের অনেকেই আছেন এবারও স্কটল্যান্ড দলে। এখন তারা আরও পরিণত ও অভিজ্ঞ। দলে যোগ হয়েছে আরও বেশ কজন কার্যকর ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টিতে তারা বিপজ্জনক দল। ম্যাচ জেতানোর মতো ক্রিকেটার আছে তাদের কয়েকজন। রিচি বেরিংটন, কাইল কোয়েটজার, জর্জ মানজি, ক্যালাম ম্যাকলাউডদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং যথেষ্টই শক্তিশালী। তাদের বোলিং গভীরতাও অনেক। ফিল্ডিং তো বরাবরই দুর্দান্ত।

তাদের প্রস্তুতিও হয়েছে দারুণ। মাসখানেক আগে থেকেই তারা ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুশীলন করছে। বিশ্বকাপের মাঠেই এই মাসে ওমানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে। আমিরাতে চারটি প্রস্তুতি টি-টোয়েন্টি খেলে জিতেছে সবকটিই। কোচ শেন বার্জার তো আসর শুরুর আগে একরকম হুমকি দিয়েই বলে রেখেছেন, গ্রুপ পর্যায়ে বাংলাদেশকে তিনি ওমান-পাপুয়া নিউ গিনির ওপরে রাখেন না। 

ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র ক্রিকেটার ক্যালাম ম্যাকলাউডের কণ্ঠে অবশ্য কোচের মতো জোর পাওয়া যায়নি। তবে আত্মবিশ্বাস ঠিকই ঠিকরে বেরিয়েছে তার কথায়ও।

“বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ফর্ম খুব ভালো। র‌্যাঙ্কিং ও এই ধরনের টুর্নামেন্টে অনেক খেলা মিলিয়ে ওরা সম্ভবত কিছুটা ফেভারিট থাকবে। তবে আমরা জানি ও গত কয়েক বছরে দেখিয়েছি, আমরা ভালো খেললে, পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে পারি। কালকেও আমরা সেই আশায় নামব। বাংলাদেশ ভালো খেললে আমাদের আরেকটু বেশি ভালো খেলতে হবে, ব্যস।”

উইকেট ম্যাচের আগের দিনও ছিল সবুজ ঘাসে ভরা। তবে ম্যাচের আগে অনেকটাই ছেটে ফেলার কথা। সেক্ষেত্রে ২২ গজে ব্যাটসম্যানদের সহায়তা থাকার কথা বেশি। কিন্তু ব্যাটিংটাই বাংলাদেশের বড় দুর্ভাবনার জায়গা।

টপ অর্ডারে লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ ফর্মে নেই। সৌম্য সরকার দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। মুশফিকুর রহিম নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। সাকিব আল হাসান আইপিএল শেষ করেছেন টানা দুটি শূন্য দিয়ে।

তারপরও তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে দলকে। অধিনায়কও ভরসা রাখার কথা জানালেন সংবাদ সম্মেলনে। দলের বোলিং আক্রমণ যথেষ্টই ভালো ও বৈচিত্রময়। তবে একটি শঙ্কার জায়গা, আইপিএল খেলার শ্রান্তি মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিবের বোলিংয়ে প্রভাব ফেলে কিনা। বোলিংয়ে মূল দায়িত্বটা নিতে হবে এই দুজনকেই।

গোটা দলকে বইতে হবে প্রত্যাশার ভার। ক্রিকেট উন্মাদনার এই দেশে প্রতিটি সিরিজ-টুর্নামেন্টে আশার পারদ থাকে উঁচুতে। বিশ্বকাপে তা থাকে আরও বেশি উচ্চতায়। প্রাপ্তিতে তা ছুঁতে চাইলে মাঠেও ছাড়াতে হবে নিজেদের। মাহমুদউল্লাহ যেমন বলেছেন, টপকাতে হবে কিছু বাধার দেয়াল!