একটি অর্জনে গুরবাজ নাম লিখিয়েছেন সাচিন টেন্ডুলকার ও কুইন্টন ডি ককের পাশে, আরেকটি কীর্তিতে আছেন হাশিম আমলা ও বাবর আজমের ঠিক পরেই।
Published : 12 Nov 2024, 08:48 AM
আফগানিস্তানের একজন ব্যাটসম্যান নানা কীর্তিতে বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের পাশে নাম লেখাচ্ছেন, একটা সময় এমন কিছু ছিল অভাবনীয়। রাহমানউল্লাহ গুরবাজ সেটিকেই বাস্তব রূপ দিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ম্যাচে দারুণ সেঞ্চুরিতে আরও একবার সেই আলোয় নিজেকে রাঙিয়েছেন তিনি। তরুণ বিধ্বংসী ওপেনারের কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্স সামনে আরও দেখতে চান অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদি।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে গুরবাজ ছিলেন একদমই নিষ্প্রভ। সিরিজটি শুরু করেছিলেন তিনি ফর্মে থেকেই। সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপকেষ সিরিজ জয়ে শেষ দুই ম্যাচে তার রান ছিল ১০৫ ও ৮৯। সবশেষ পাঁচ ইনিংসে উপহার দিয়েছিলেন দুটি সেঞ্চুরি ও দুটি ফিফটি। তবে এই সিরিজে তাকে দমিয়ে রাখেন ‘পুরোনো শত্রু’ তাসকিন আহমেদ।
দুই ম্যাচে গুরবাজ করেন ২ ও ৫। দুবারই তিনি তাসকিনের শিকার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৫ বার করে তিনি আউট হয়েছে আয়ারল্যান্ডের মার্ক অ্যাডায়ার ও এই তাসকিনের বলে।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে তাসকিন ছিলেন বিশ্রামে। তাতে মানসিকভাবে কিছুটা নির্ভার হওয়ার কথা গুরবাজের। ব্যাট হাতে তাকে বেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞও মনে হচ্ছিল এই ম্যাচে। শুরুতে যদিও নাহিদ রানার গতি ও বাউন্স তাকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। তবে শরিফুল ইসলামকে মোটামুটি পিটিয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
তার পর তো স্রেফ নিজের সহজাত ব্যাটিং দেখানোর পালা। পেস-স্পিন সব সামলে ৭ ছক্কায় করে ফেলেন সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরির পরপর আউট হয়ে গেছেন তিনি। তবে ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের ইনিংসটিই আফগানিস্তানের দৃষ্টি সীমায় নিয়ে আসে জয়। এই সিরিজের ধারা অনুযায়ী ২৪৫ রানের লক্ষ্য ভীষণ কঠিন হওয়ার কথা ছিল। গুরবাজের ব্যাটে সেই কঠিনই হয়ে ওঠে সহজ।
আফগানিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড আগে থেকেই ছিল তার। অষ্টম সেঞ্চুরিতে নিজের রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করলেন তিনি।
মজার ব্যাপার হলো, ওয়ানডেতে তার ফিফটির চেয়ে সেঞ্চুরির সংখ্যাই বেশি! ৮ সেঞ্চুরির পাশে তার ফিফটি এখন ৬টি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে তিনবার পঞ্চাশ ছুঁয়ে প্রতিটিকেই নিয়ে গেলেন শতরানে।
তার ৪৬ ইনিংসের চেয়ে কম ইনিংস খেলে ওয়ানডেতে ৮ সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন কেবল হাশিম আমলা (৪৩ ইনিংস) ও বাবর আজম (৪৪ ইনিংস)।
২৩ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড তো তিনি ছুঁয়েই ফেলেছেন। এখানে নিজের নাম তুলেছেন তিনি সাচিন টেন্ডুলকার ও কুইন্টন ডি ককের পাশে। রেকর্ডটি এককভাবে নিজের করে নেওয়া অবশ্য হচ্ছে না তার। এই ২৮ নভেম্বর ২৩ পূর্ণ করবেন তিনি। এই সময়ে আর কোনো ওয়ানডে নেই আফগানিস্তানের।
তবে রেকর্ডের পথে তোর যাত্রা তো সবে শুরু। যেভাবে খেলছেন, আরও অনেক অর্জন-কীর্তি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
দলের জন্যও দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান তিনি। ইনিংসের শুরুতে তার দ্রুত রান এনে দেওয়া, তার বড় ইনিংস খেলতে পারার ওপর অনেক সময় নির্ভর করে দলের ভাগ্য। তার ৮ ওয়ানডে সেঞ্চুরির ৭টিতে এবং ৬ ফিফটির ৪টিতেই জিতেছে দল।
প্রথম দুই ম্যাচের হতাশা কাটিয়ে গুরবাজকে ছন্দে ফিরতে দেখে দারুণ খুশি হাশমাতউল্লাহ শাহিদি। ম্যাচের পর আফগান অধিনায়ক বললেন, এমন সাফল্যকে সামনে বয়ে নিয়েই দলকে আরও জয় এনে দেবেন এই ব্যাটসম্যান।
“গুরবাজ আমাদের ‘ম্যাচ উইনার।’ যখনই সে রান করে, আমাদের দলের জন্য তা অনেক কাজে লাগে। খুবই প্রতিভাবান সে। আশা করি, এই মোমেন্টাম সে বয়ে নিয়ে যাবে পরের সিরিজে ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।”