লেগ স্পিনারদের কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়ার জন্য যথাযথ সুযোগ দেওয়ার দিকে জোর দিলেন জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশার।
Published : 30 Dec 2023, 05:46 PM
রিশাদ হোসেনের ওপর বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ, তা ফল দিতে শুরু করেছে। একটু একটু করে নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেছেন তরুণ এই লেগ স্পিনার। তবে এখনই তার কাছ থেকে নিয়মিত দারুণ কিছু আশা করছেন না নির্বাচক হাবিবুল বাশার। বরং রিশাদসহ ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্য লেগ স্পিনারদের পোক্ত করে তুলতে আরও সময় দিতে বললেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে লেগ স্পিনারের হাহাকার দীর্ঘ দিনের। কব্জির মোচড়ে বল ঘোরানোর শিল্পীর খোঁজে ঘরোয়া ক্রিকেটে রীতিমতো নিয়ম বেধে দেওয়ার পথেও হেঁটেছে বিসিবি। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ওয়ানডে সংস্করণেই যেমন চার দলে নেওয়া হয়েছে চার লেগ স্পিনার। রিশাদ খেলছেন নিউ জিল্যান্ড সফরে জাতীয় দলে।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে বেশ ভালো বোলিং করেছেন রিশাদ। দ্বিতীয়টিতে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তিনি আটকে রাখেন নিউ জিল্যান্ডের আগ্রাসী ব্যাটসম্যানদের। বিসিএলে সুযোগ পেয়ে খারাপ করেনি চার দলের লেগ স্পিনার।
গত মার্চে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের পরের ম্যাচেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন রিশাদ। পরে অক্টোবরে এশিয়ান গেমসে দুটি ম্যাচ খেলেন তিনি। তবে ওই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া কোনো দেশ তাদের মূল দল খেলায়নি। তাই কার্যত নিউ জিল্যান্ড সফর দিয়েই দলে ফেরা ২১ বছর বয়সী লেগ স্পিনার।
নেলসনে ওয়ানডে অভিষেকে ৯ ওভারে ৬২ রান দেন রিশাদ। পরের ম্যাচে পেসারদের দাপটের দিনে তেমন বোলিংয়ের সুযোগ পাননি তিনি। পরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে মার্ক চ্যাপম্যানের উইকেট নেন রিশাদ। বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ ওভারে স্রেফ ১০ রান খরচ করেন তিনি।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে শুক্রবারের ওই ম্যাচে টিম সাইফার্টের ঝড়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান করে ফেলে নিউ জিল্যান্ড। পরে আঁটসাঁট বোলিংয়ে তাদের বেঁধে রাখেন রিশাদ। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে পাঁচ ওভারে আর কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি স্বাগতিকরা। স্কোরবোর্ডে যোগ হয় মোটে ১৮ রান।
রিশাদের এই পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হাবিবুল। তবে এখনই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন না তিনি। শনিবার মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাবেক এই অধিনায়ক মনে করিয়ে দিয়েছেন, লেগ স্পিনারদের বাজে দিনও আসবে।
“পরের ম্যাচে যদি রিশাদ ভালো নাও করে, তাও আমি হতাশ হব না। আমার মনে হয়, সবাই যদি রিশাদের প্রতি এই ধৈর্যটা দেখাতে পারি, তাহলে রিশাদ ভালো করতে পারবে। গত ম্যাচে নিউ জিল্যান্ড উড়ন্ত সূচনা করেছিল। সেখানে রিশাদ আবার ম্যাচটা ফিরিয়ে এনেছে। লেগ স্পিনারের সৌন্দর্য এটাই। কোনো কোনো দিন অনেক রান দেবে, আবার কোনো দিন ম্যাচ জিতিয়ে দেবে।”
“লেগ স্পিনারদের ক্ষেত্রে এই ধৈর্য আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখাতে পারি না। রিশাদও খুব যে খেলার সুযোগ পায়, তা কিন্তু নয়। তবে আপনারাও দেখেছেন, সুযোগ পেলে সে কিছু করে দেখাতে পারে। আমাদের বাঁহাতি স্পিনার, অফ স্পিনার যারা আছে, তারা নির্ভরযোগ্য। তবে লেগ স্পিনাররা অনেক সময় খেলাটা বদলে দেয়। সেই ধৈর্য ধরাটা খুব জরুরি।”
ঘরোয়া ক্রিকেটে এই ধৈর্য দেখানোর আশায়ই হয়তো বেশ কয়েকবার নানান নিয়ম বেঁধে দিয়েছে বিসিবি। সব দলে একজন বাধ্যতামূলক লেগ স্পিনার নেওয়া কিংবা তাদেরকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ম্যাচ খেলানোর কথাও বলা হয়েছে নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে।
সেই ধারাবাহিকতায় বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণে চার দলেই রাখা হয়েছে একজন করে লেগ স্পিনার-উত্তরাঞ্চলে আমিনুল ইসলাম, দক্ষিণাঞ্চলে ওয়াসি সিদ্দিক, মধ্যাঞ্চলে জিহাদুল হক জিহাদ ও পূর্বাঞ্চলে মেহেদি হাসান সোহাগ। পাশাপাশি বিসিবির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাদের প্রত্যেককে যেন একটি হলেও ম্যাচ খেলানো হয়।
লেগ স্পিনারদের খেলাতে বাধ্য করার পেছনে ভাবনা শোনালেন হাবিবুল বাশার।
“আমরা অনেক দিন ধরেই একজন লেগ স্পিনারের খোঁজ করছি। অন্যান্য টুর্নামেন্টে আমরা একাদশে তেমন ভূমিকা রাখতে পারি না। তবে বিসিবির টুর্নামেন্টে আমাদের কিছুটা ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে। আমি বিশ্বাস করি, শুধু অনুশীলন করে লেগ স্পিনার তৈরি করা খুব মুশকিল। লেগ স্পিনার তৈরি করতে হলে ম্যাচ খেলাতে হবে।”
কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দুই মাঠে লিগ পর্বের চার লেগ স্পিনারের মধ্যে মেহেদি ছাড়া বাকিরা খেলেছেন দুটি করে ম্যাচ। বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের লেগ স্পিনার ওয়াসি দুই ম্যাচে ১৯ ওভারে ১০২ রান খরচায় নিয়েছেন ২ উইকেট।
বয়সভিত্তিক দলের জিহাদ দুই ম্যাচে বোলিংয়ের সুযোগ পান ৫ ওভার, ৩৮ রানে নেন ২ উইকেট। আমিনুল দুই ম্যাচে কোনো উইকেট পাননি, ৯ ওভারে খরচ করেন ৫৮ রান। পূর্বাঞ্চলের মেহেদি ৯ ওভারে ৬০ রান দেওয়ার পর আর ম্যাচে সুযোগ পাননি।
সব মিলিয়ে তাদের পরিসংখ্যান আশাপ্রদ না হলেও এখনই আশাহত হওয়ার কিছু দেখছেন হাবিবুল। বরং তাদরকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার গুরুত্বই তিনি তুলে ধরলেন আবার।
“কক্সবাজারে যে ম্যাচগুলো দেখেছি, সেখানে আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। তাদের যদি খেলানোর সুযোগ দেই এবং যথাযথ ব্যবহার করি... লেগ স্পিনারদের কিন্তু বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে আমাদের কোচ যারা আছেন ও অধিনায়কত্ব যারা করেন, তাদের সাহায্য লাগবে। আমরা যতই চেষ্টা করি, তারা যদি সাহায্য না করেন, তাহলে লেগ স্পিনার উঠিয়ে আনা খুব কষ্ট হবে।”
“যেটুকু ম্যাচ তারা খেলেছে, আমি বলব না তারা খুব সফল। তবে আমার মনে হয়েছে, তারা যদি নিয়মিত খেলার সুযোগ পায়, প্রভাব ফেলতে পারবে। দুই-একটা ইনিংসে আমি দেখেছি, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট এনে দেওয়া, একটু রান বাঁচিয়ে দেওয়া কিংবা প্রভাব রাখা। তারা যদি নিয়মিত সুযোগ পায়, তাদেরকে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করতে দেখতে পারব।”