না ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও অধিনায়ক ও নির্বাচক কমিটির প্রবল অনুরোধের পর বিবেচনার জন্য একটু সময় নেন তামিম ইকবাল, ঢাকায় ফিরে কথা বলেন পরিবারের সঙ্গে।
Published : 11 Jan 2025, 02:47 PM
নির্বাচক কমিটির জন্য ব্যাপারটি ছিল একরকম ‘মিশন ইম্পসিবল।’ তারা জানতেন তামিম ইকবালের মনোভাব। কিন্তু দলের প্রয়োজনও তারা অনুভব করছিলেন তীব্রভাবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে তাই চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিলেন তারা। ‘হোপ আগেনস্ট হোপ’, যদি কিছু হয়…! সেই চেষ্টায় তামিমের মনে ভাবনার সামান্য দোলা দিতে পেরেছিলেন তারা। তবে শেষ পর্যন্ত নাটকীয় কিছু হলো না। বাংলাদেশের সফলতম ওপেনারের পরিণতি রূপ নিল চূড়ান্ত পরিণতিতে।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে তামিম যখন আচমকা অবসরের ঘোষণা দিলেন, দেশের ক্রিকেটে তখন সেটা ছিল বড় বিস্ফোরণ। তখন তিনি দলের অধিনায়ক। অমন কিছুর আভাস কিংবা প্রত্যাশা, কিছুই ছিল না। অবসরের পরদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অনুরোধে আবার অবসর তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তও ছিল মহানাটকীয়। তবে এবার তেমন নাটকীয় কিছু হয়নি। বরং অনুমিত পথই বেছে নিয়েছেন তামিম।
বুধবার সিলেটে নির্বাচকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত জানাতে আরেকটু সময় নেওয়াতেই কেবল কিছুটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল।
নির্বাচকদের সঙ্গে তামিম ইকবালের বৈঠক ছিল দীর্ঘ, প্রাণবন্ত ও খোলামেলা। তিন নির্বাচকের সঙ্গে সেখানে ছিলেন বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ইন-চার্জ শাহরিয়ার নাফীসও।
তারা সবাই অবশ্য আগে থেকেই জানতেন, তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে রাজি নন। টুকটাক অনানুষ্ঠানিক আলোচনা বা আড্ডায় সেই কথা তাদেরকে আগেও বলেছেন তামিম। এমনকি বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকেও নানা সময়ে এই বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
বিসিবির আগের সভাপতি নাজমুল হোসেন (পাপন) সংবাদমাধ্যমে নানা সময়েই বলেছেন, তামিমকে তারা ফিরিয়ে আনতে চান। কিন্তু তার বোর্ডের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগ বা আলোচনা, কিছুই নেওয়া বা করা হয়নি কখনোই। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের তৎকালীন প্রধান জালাল ইউনুস অবশ্য নানা সময়ে তামিমের সঙ্গে কথা বলেছেন ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে। তবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা সত্যিকারের উদ্যোগ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আয়োজন তিনিও করতে পারেননি।
দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পথ ধরে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর ফারক আহমেদ প্রকাশ্য নানা সময়েই বলেছেন, তামিমকে ফিরে আসতে দেখলে তার ভালো লাগবে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় নিজের ইচ্ছের কথা কয়েক দফায় তিনি বলেছেন তামিমকে। তবে তামিম প্রতিবারই তাকে ‘না’ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে বোর্ডসূত্রে।
সবশেষ গত ৩ জানুয়ারি মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলের খেলা চলার সময় প্রেসবক্সে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় নিজ থেকেই তামিমের প্রসঙ্গ তুলে বিসিবি সভাপতি বলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল নির্বাচনের আগে তামিমের সঙ্গে সরাসরি ও ‘ওয়ান টু ওয়ান’ আলোচনা করতে চান তারা।
সেই প্রক্রিয়ারই অংশ নির্বাচকদের সঙ্গে তামিমের বৈঠক।
ফেইসবুকে বিদায়ী বার্তায় তামিম উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ বিশ্বকাপের আগের ধাক্কায় তার হৃদয়ে ক্ষত রয়ে গেছে এখনও, যেহেতু তার সরে দাঁড়ানো ক্রিকেটীয় কারণে ছিল না। এবার নির্বাচকদের সঙ্গে বৈঠকেও সেই সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন তামিম।
তখনকার নির্বাচক কমিটি, বোর্ড প্রধান, কোচ-অধিনায়ক কেউই আর নেই। বদলে যাওয়া বাস্তবতায় বোর্ড ও নির্বাচকদের দৃষ্টিভঙ্গি যে বদলে গেছে, এটা তামিমের কাছে তুলে ধরেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন। দলের প্রয়োজনের কথাও তিনি উল্লেখ করেন বারবার। তার অভিজ্ঞতা দলের কতটা প্রয়োজন, টপ অর্ডারে নির্ভরতা ও স্থিতিশীলতা কতটা জরুরি, এসব তামিমের কাছে ব্যাখ্যা করেন নির্বাচকরা।
প্রথম দফায় বৈঠকে তার পরও ‘না’ বলেই দিয়েছিলেন তামিম। নির্বাচকরাও ফিরে গিয়েছিলেন সেই উত্তর জেনে। পরে জাতীয় দলের কয়েকজন ক্রিকেটার তামিমকে আবার অনুরোধ করতে থাকেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তো আগের দিনই নিজের পক্ষ থেকে তামিমের সঙ্গে কথা বলে ফেরার আকতি জানিয়ে রাখেন।
বুধবার দুপুরের পর প্রধান নির্বাচক আরেক দফায় বৈঠক করেন তামিমের সঙ্গে। এবার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য একটু সময় নেন তামিম।
বৃহস্পতিবার বিপিএলের ম্যাচ খেলে পরদিন সকালে ঢাকায় ফেরেন বরিশাল অধিনায়ক। নির্বাচকদের সঙ্গে বৈঠকের আগেই স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল তার নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে। ঢাকায় ফিরে কথা বলেন আরেকবার। ছেলে আরহামের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন।
তামিমের বিদায়ী বার্তায় উল্লেখ আছে ছেলের কথা, যে তার বাবাকে আবার দেশের জার্সিতে দেখতে মুখিয়ে ছিল। ঢাকার বাসায় ফিরে ৯ বছর বয়সী ছেলের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেন তিনি। এছাড়াও শুভাকাঙ্ক্ষী ও ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন তামিম। রাতেই তা ঘোষণা করে দেন সামাজিক মাধ্যমে। পরে প্রধান নির্বাচকের সঙ্গেও কথা হয় তামিমের। নিজেদের দিক থেকে কিছুটা দুঃখবোধের কথা জানিয়ে তামিমের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানান প্রধান নির্বাচক।