কাগিসো রাবাদার মতো একজন পারফরমারকে নিজেদের দলে পাওয়া সৌভাগ্যের, বললেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এইডেন মার্করাম।
Published : 24 Oct 2024, 05:27 PM
চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের আশার পথে সবচেয়ে বড় শঙ্কা ছিল কাগিসো রাবাদাকে নিয়ে। দ্বিতীয় নতুন বল তখন অপেক্ষায়। শঙ্কা সবসময়ই সত্যি হয় না। তবে রাবাদার মতো পারফরমার আবার খুব একটা ব্যর্থ হন না। এ দিনই যেমন, বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিতে স্রেফ তিন বল লেগেছে তার। দিনের তৃতীয় বলেই দারুণ এক ডেলিভারিতে আউট করেছেন তিনি নাঈম হাসানকে। পরে হতাশ করেছেন তিনি সেঞ্চুরির কাছাকাছি থাকা মেহেদি হাসান মিরাজকে। ব্যস, বাংলাদেশের লড়াইয়ের সমাপ্তি!
শুধু এই দিনটিতেই নয়, ম্যাচের প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশকে ভুগিয়ে ধুঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত ডুবিয়েছেন তিনি। ম্যাচের পর এইডেন মার্করাম বললেন, রাবাদার মতো একজন পারফরমার পাওয়া দল হিসেবে তাদের জন্য সৌভাগ্যের। দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ম্যাচের সেরা অবশ্য কাইল ভেরেইনা। এই কিপার-ব্যাটসম্যানের জন্যও বিশেষ স্তুতি বরাদ্দ রাখলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
মিরপুর টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশ দলের ভাবনায় বেশি ছিল নিশ্চিতভাবেই কেশাভ মহারাজকে সামলানো। আড়াই বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাতেই বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্টে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এবার বাংলাদেশের কন্ডিশনে তার তো আরও কার্যকর হওয়ার কথা। রাবাদাকে সামলানো নিয়েই নিশ্চয়ই আলোচনা কিছু ছিল। তবে এই কন্ডিশনে তার অতট ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার কথা নয়।
কিন্তু ম্যাচের প্রথম দিনে মহারাজ ও ভিয়ান মুল্ডারের সঙ্গে জ্বলে উঠেন রাবাদাও। তিনটি উইকেট শিকার করেন তিনি। এর মধ্যে ছিল মিডল অর্ডারের দুই মেরুদণ্ড মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের উইকেট। উইকেটও অবশ্য একটু সহায়ক ছিল পেসারদের জন্য। বিস্ময়করভাবে বেশ বাউন্স ছিল এবার মিরপুরের উইকেটে, কিছুটা মুভমেন্টও মিলেছে। রাবাদা তা কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে।
দ্বিতীয় ইনিংসে তো মহারাজ ও স্পিনারদের কার্যকারিতা আরও বেশি হওয়ার কথা। আরেকবার বিস্ময় জাগিয়ে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো হয়ে ওঠে। কিন্তু রাবাদার তাতে বয়েই গেছে! এবার তিনি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে তিনি শেষ করে দেন বাংলাদেশের সব আশা।
ম্যাচে তার প্রাপ্তি ৭২ রানে ৯ উইকেট। উপমহাদেশের বাইরের কোনো পেসারের জন্য মিরপুরে সেরা বোলিং এটিই। আগের রেকর্ড ছিল তারই পূর্বসূরী কিংবদন্তি ডেল স্টেইনের। ২০০৮ সালে তিনি ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ৭৫ রানে।
এই কীর্তিতে যেমন স্টেইনকে ছাড়িয়েছেন, তেমনি আরেকটি অর্জনের পথে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন টেস্ট ইতিহাসের সব গ্রেটকে। প্রথম ইনিংসে মুশফিকের স্টাম্প ছত্রখান করে রাবাদা পূর্ণ করেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩০০ উইকেট। ইতিহাসের প্রথম পেসার হিসেবে ১২ হাজারের কম ডেলিভারিতে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি (১১ হাজার ৮১৭ ডেলিভারি)।
এখনও পর্যন্ত যে ৩৯ বোলার টেস্ট ক্রিকেটে ছুঁয়েছেন ৩০০ উইকেট, তাদের মধ্যে সেরা স্ট্রাইক রেট রাবাদারই। তার ৩৮.৮ স্ট্রাইক রেটের কাছাকাছিও কেউ নেই।
সব মিলিয়ে এই টেস্টে যেমন, তেমনি ক্যারিয়ারজুড়েও রাবাদা যেন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আশীর্বাদ। ম্যাচ শেষে মার্করামের কণ্ঠেও ফুটে উঠল সেই কৃতজ্ঞতা।
“দুর্দান্ত ওদের পারফরম্যান্স। কেজি (রাবাদা) অনেক বছর ধরেই আমাদের ‘সুপারস্টার।’ ৩০০ উইকেট পূর্ণ করার পথে তার যে পরিসংখ্যান, এটিই বলে দেয় সে মিলিয়নে একজন। তার মতো একজনকে দলে পাওয়া আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। দারুণ করছে সে।”
রাবাদার এমন অসাধারণ বোলিং ছাপিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি পেয়েছেন ভেরেইনা। প্রথম ইনিংসে তার সেঞ্চুরিই যে ম্যাচে বড় ব্যবধান গড়ে দিয়েছে! উপমহাদেশে নিজের প্রথম টেস্ট ইনিংসেই স্পিন খেলার দারুণ দক্ষতা দেখিয়ে ইনিংস সাজিয়েছেন তিনি। তার প্রাপ্তিতেও দারুণ খুশি মার্করাম।
“কাইলের (ভেরেইনা) জন্য এই মুহূর্তটি স্পেশাল। অনেক দিন ধরেই দলে আসা-যাওয়া চলছে তার। তার ওপর ম্যানেজমেন্ট অনেক ভরসা রেখেছে। এখন এই দলীয় আবহে সে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে। স্পিন সে এমনিতেই ভালো খেলে। উপমহাদেশে প্রথম ইনিংসেই সেঞ্চুরি করতে পারা তার জন্য দারুণ এক অর্জন।”