বিপিএল
পারিশ্রমিকের সিংহভাগ পাওনা রেখেই নিরুপায় হয়ে দেশে ফিরছেন বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর হয়ে খেলা রায়ান বার্ল, মিগেল কামিন্স, আফতাব আলমরা।
Published : 02 Feb 2025, 08:05 PM
‘আর কী করতে পারি? কোনো উপায় তো নেই…’- ফোনের ওপাশে ম্রিয়মান কণ্ঠেই বললেন দুর্বার রাজশাহীর এক বিদেশি ক্রিকেটার। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে আরও একবার আশ্বাস পেয়ে আদৌ তারা আস্বস্ত কি না। পারিশ্রমিক না পেয়ে, এমনকি দেশে ফেরার টিকেট না পেয়ে টিম হোটেলে একরকম বন্দি অবস্থায় থাকা ক্রিকেটারের কণ্ঠে ফুটে উঠল অসহায়ত্ব।
বিপিএল থেকে বিদায় হয়ে গেছে দুর্বার রাজশাহীর। কিন্তু রোববার দিনজুড়েই দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চতায় ছিলেন রাজশাহীর পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটার। পাওনা পারিশ্রমিকের পুরোটা ও দেশে ফেরার টিকেট না পাওয়ায় এ দিনও বাংলাদেশ ছাড়তে পারেননি রায়ান বার্ল, মোহাম্মদ হারিস, আফতাব আলম, মার্ক ডেয়াল ও মিগেল কামিন্স। শেষ পর্যন্ত পুরো পারিশ্রমিক না পেয়ে আশ্বাসকে সঙ্গী করে দেশে ফিরবেন তারা।
বিপিএলে গত সপ্তাহে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছে দুর্বার রাজশাহী। টুর্নামেন্টে তাদের টিকে থাকার শেষ আশাও নিভে গেছে শনিবার। তবু দলটি নিয়ে আলোচনা থামছেই না।
পারিশ্রমিক সমস্যা সমাধানে বারবার বিলম্ব হওয়ায় এরই মধ্যে বিসিবিতে একাধিকবার তলব পড়েছে রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির কর্ণধার শফিক রহমানের। বিপিএলের প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচ চলাকালে শনিবার তার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৈঠক শেষে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, পারিশ্রমিক পরিশোধে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে রাজশাহীর মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে। এই হুঁশিয়ারির পরদিনই বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক সমস্যার সঙ্গে যোগ হলো দেশে ফেরার টিকেট না পাওয়ার বিড়ম্বনাও।
টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় রোববার দুপুরে টিম হোটেল ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল রাজশাহীর। সেই অনুযায়ী দলটির স্থানীয় ক্রিকেটাররা চলে গেছেন বাড়িতে। কিন্তু পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটারের কোনো সুরাহা করতে পারেনি রাজশাহী।
রোববার সকালেই জানা যায়, দেশে ফেরার টিকেট না পাওয়ায় টিম হোটেলে আটকা পড়েছেন রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা। একাধিক ক্রিকেটার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকেও নিশ্চিত করে এই খবর।
পরে বিকেলে অবশ্য হারিস, বার্ল ও কামিন্সের দেশে ফেরার সময় জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে রাজশাহী। তবে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে আফতাব ও ডেয়ালকে ঘিরে। রোববার মধ্যরাত ১টা ৪০ মিনিটের ফ্লাইটে বাংলাদেশ ছাড়বেন হারিস আর রাত ৩টার ফ্লাইটে জিম্বাবুয়ের উদ্দেশে রওনা হবেন বার্ল। কামিন্সের ফেরার কথা আগামী বুধবার।
তিনজনের মধ্যে শুধু হারিসের পারিশ্রমিক নিয়ে কোনো অসন্তোষ বা অভিযোগ নেই। বাকি ৭৫ শতাংশ পারিশ্রমিকের ব্যাপারে ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থেকে এখনও কোনো ইতিবাচক বার্তা পাননি বার্ল ও কামিন্স। বিমানে ওঠার আগপর্যন্ত ইতিবাচক খবরের অপেক্ষায় তারা।
দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ডেয়াল। টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে শনিবার রাতে তাকে বলা হয়, রোববার রাতের টিকেট পাবেন তিনি। কিন্তু টিকেট তাকে দেওয়া হয়নি। রোববার আবারও তাকে বলা হয়েছে, সোমবার রাতের টিকেট দেওয়া হবে। বার্ল, কামিন্সের মতো তিনিও পারিশ্রমিক নিয়ে দলের কাছ থেকে কোনো বার্তা পাননি।
ডেয়ালের মতো একই দশা আফতাবেরও। এখন পর্যন্ত পারিশ্রমিকের কোনো টাকাই পাননি আফগানিস্তানের এই পেসার। পারিশ্রমিক তো বটেই, রাজশাহীর হয়ে তিন ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারকে দেশে ফেরার টিকেট সম্পর্কেও কোনো বার্তা দেয়নি দলটি।
নাম গোপন রাখার শর্তে এক বিদেশি ক্রিকেটার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, পারিশ্রমিকের অর্থ পরিশোধের জন্য ১০-১৫ দিন সময় চেয়েছেন রাজশাহীর কর্ণধার শফিক রহমান।
"আমাদের কাছে কোনো স্পষ্ট বার্তা নেই। দেশে ফেরা নিয়েই এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কর্ণধারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ১০-১৫ দিনের মধ্যে সব অর্থ পরিশোধ করে দেবেন। আসলেই পাব কি না, সেটাও জানি না।"
এই আশ্বাসে রাজি হয়েছেন কি না, জানতে চাওয়া হলে তার উত্তর, “আর কোনো উপায় তো নেই আমাদের। তিনি (শফিক রহমান) আশ্বাস দিয়েছেন ১০-১৫ দিনের মধ্যে টাকা দিয়ে দেবেন। এখন এটাই শুধু ভরসা। দেশে তো ফিরতে হবে। এরকম অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি। খুবই হতাশাজনক।"
রাজশাহীর পারিশ্রমিক সমস্যা আছে টিম ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রেও। পারিশ্রমিকের আংশিক অর্থ পেয়েছেন সাপোর্ট স্টাফের সদস্যরা। মালিকপক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, রোববার রাতে পরিশোধ করা হবে তাদের বকেয়া।