শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
ওপেনিংয়ে ট্রাভিস হেডের ঝড়ো ফিফটির পর উসমান খাওয়াজা ও স্টিভেন স্মিথের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহের পথে অস্ট্রেলিয়া।
Published : 29 Jan 2025, 06:11 PM
ব্যর্থতার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এলেন উসমান খাওয়াজা। টেস্টে ৩৩ ইনিংস পর পেলেন তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া। চমৎকার ধারাবাহিকতায় আরেকটি সেঞ্চুরি উপহার দিলেন স্টিভেন স্মিথ। দুইজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে অস্ট্রেলিয়া।
গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ২ উইকেটে ৩৩০। পিচ রিপোর্টের সময় ফারভিজ মাহরুফ বলেছিলেন, প্রথম ইনিংসে ২৭০ রান হবে ভালো স্কোর। লঙ্কান বোলারদের হতাশ করে এরই মধ্যে তিনশ ছাড়িয়ে গেল সফরকারীরা।
অস্ট্রেলিয়াকে বড় পুঁজির শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছেন খাওয়াজা ও স্মিথ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩০৭ বলে ১৯৫ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করেছেন দুইজন।
অনেক দিন ধরেই টেস্টে সেরা চেহারায় দেখা যাচ্ছিল না খাওয়াজাকে। ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ১০ ইনিংসে স্রেফ একটি ফিফটি করতে পারেন তিনি। এই সেঞ্চুরির আগে সবশেষ ১৫ ইনিংসে ওই একটিই পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস ছিল তার।
ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে ক্যারিয়ারের ষোড়শ টেস্ট সেঞ্চুরিতে ১৪৭ রান করেন খাওয়াজা। ১ ছক্কা ও ১০ চারে গড়া তার অপরাজিত ইনিংসটি। সবশেষ ২০২৩ সালের জুনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি দেখা গিয়েছিল বাঁহাতি এই ওপেনারের ব্যাটে।
স্মিথও দীর্ঘদিন সেঞ্চুরি খরায় ভুগছিলেন। ভারতের বিপক্ষে সেই খরা কাটিয়ে ছন্দে ফেরেন তিনি। চার টেস্টে এটি তার তৃতীয় শতক। ১ ছক্কা ও ১০ চারে ১০৪ রানে খেলছেন তারকা এই ব্যাটসম্যান।
এদিন রানের খাতা খুলেই দারুণ এক কীর্তি গড়েন এই সিরিজে প্যাট কামিন্সের অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়া স্মিথ। দেশটির চতুর্থ ও সব মিলিয়ে চতুর্দশ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
ওপেনিংয়ে ফিরে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১ ছক্কা ও ১০ চারে ৪০ ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন ট্রাভিস হেড। তাকে ওপেনিংয়ে জায়গা দিতে বাদ পড়েন ভারতের বিপক্ষে ভয়ডরহীন ক্রিকেটে নজর কাড়া স্যাম কনস্টাস।
তবে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা তিন ব্যাটসম্যানকেই ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু একটিও কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ২৩ রানে হেড, ৫৪, ৭৪ ও ৯০ রানে খাওয়াজা ও ১ রানে বেঁচে যান স্মিথ। নিজেদের ভুলেই তাই হতাশার দিন কাটাতে হলো লঙ্কানদের।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়াকে ভালো শুরু এনে দেন হেড ও খাওয়াজা। ম্যাচের প্রথম ওভারেই আসিথা ফার্নান্দোকে তিনটি চার মারেন হেড। এলবিডব্লিউর রিভিউ নিলে পঞ্চম ওভারেই বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে ফেরাতে পারত শ্রীলঙ্কা।
বেঁচে গিয়ে ৩৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন হেড। তার ঝড় থামান প্রাবাথ জায়াসুরিয়া। ছক্কার চেষ্টায় লং-অনে ধরা পড়েন হেড। ভাঙে খাওয়াজার সঙ্গে তার ৯২ রানের উদ্বোধনী জুটি।
প্রথম সেশনের শেষ দিকে ৭১ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন খাওয়াজা। এরপরই তাকে ফেরানোর সুযোগ পায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু জায়াসুরিয়ার বলে স্লিপে ক্যাচ নিতে পারেননি লঙ্কান অধিনায়ক ধানাঞ্জায়া ডি সিলভা।
পরের ওভারে স্বাগতিকদের সাফল্য এনে দেন জেফ্রি ভ্যান্ডারসে। এবার স্লিপে মার্নাস লাবুশেনের দারুণ ক্যাচ নেন ধানাঞ্জায়া। ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই সিঙ্গেল নিয়ে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেন স্মিথ। ওই ১ রানেই তার ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি জায়াসুরিয়া।
১ উইকেট ১৪৫ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝিতে ফের আরেকটি ভুল করে শ্রীলঙ্কা। জায়াসুরিয়ার বলে কট বিহাইন্ডের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। বোলার আগ্রহ দেখালেও রিভিউ নিতে রাজি হননি ধানাঞ্জায়া। পরে দেখা যায় বল খাওয়াজার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়েছিল কিপারের গ্লাভসে!
নব্বইয়ে পা দিয়ে আরেকবার রক্ষা পান খাওয়াজা। এবার তার ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার কুসাল মেন্ডিস। কয়েক ওভার পর আসিথাকে চার মেরে কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিতে পা রাখেন খাওয়াজা, ১৩৫ বলে।
৫৭ বলে ফিফটি করা স্মিথ এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে। ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যান তিন অঙ্কে পা রাখেন ১৭৯ বলে। টেস্টে এটি তার ৩৫তম সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি ৪১ সেঞ্চুরি আছে রিকি পন্টিংয়ের। সব মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় সপ্তম স্থানে স্মিথ।
এরপরই হানা দেয় বৃষ্টি। প্রকৃতির বাধায় আর খেলা চালানো সম্ভব হয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৮১.১ ওভারে ৩৩০/২ (খাওয়াজা ১৪৭*, হেড ৫৭, লাবুশেন ২০, স্মিথ ১০৪*; আসিথা ৭-০-১-৪১-০, পেইরিস ২১.১-০-৯৩-০, জায়াসুরিয়া ৩৩-৭-১০২-১, ভ্যান্ডারসে ২০-০-৯৩-১)