বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ
একেই বলে ফেরার মতো ফেরা, এক বছর পর বাংলাদেশের জার্সিতে খেলতে নেমে দলের জয়ে ব্যাটে-বলে বড় অবদান রাখলেন নাসুম আহমেদ।
Published : 10 Nov 2024, 08:39 AM
ম্যান অব দা ম্যাচের স্বীকৃতি পেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ডাক পড়ল নাসুম আহমেদেরও। তাকে দেওয়া হলো ‘গেম চেঞ্জার অব দা ম্যাচ’ পুরস্কার। তার পারফরম্যান্সের জন্য দারুণ উপযুক্ত প্রাপ্তিই বটে। ম্যাচের মোড় তো বদলে দিয়েছেন তিনিই!
ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ফেরার ম্যাচটি রাঙালেন নাসুম। গত নভেম্বর থেকে যে বিষম ভার তার বুকে চেপে বসেছিল, সেটিও হয়তো সরাতে পারলেন কিছুটা।
গত বছরের ১১ নভেম্বর পুনেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন নাসুম। বাংলাদেশের জার্সিতে আবার তাকে দেখা গেল শনিবার। মাঝের এই বছর তিনি দলে ছিলেন না। কিন্তু দেশের ক্রিকেটে তার উপস্থিতি ছিল প্রবলভাবেই। কিন্তু তার জন্য সেটি ছিল ভীষণ বিব্রতকর। সেখানে যে ক্রিকেটই ছিল না!
গত বছরের নভেম্বরেই দু-একটি সংবাদমাধ্যম হয়ে দেশের ক্রিকেটে ছড়িয়ে পড়ে, ভারতে বিশ্বকাপ চলার সময় একদিন নাসুমের গায়ে হাত তুলেছিলেন সেই সময়ের প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে। এটা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় ক্রিকেট আঙিনায়। বিশ্বকাপের ব্যর্থতার কারণ তদন্ত করতে যে কমিটি করে দেয় বিসিবি, সেই কমিটির কাজেও বড় একটি কৌতূহলের জায়গা ছিল এই অভিযোগ।
এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা চলেছে দিনের পর দিন। তখনকার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানসহ বোর্ড কর্তাদের অনেকের কাছে নিয়মিত প্রশ্ন হয়েছে এটা নিয়ে। নানা সময় নানা উত্তর মিলেছে।
সম্প্রতি সেই ঘটনার জের ধরেই বিদায় নিতে হয়েছে হাথুরুসিংহেকে। দেশে সরকার পরিবর্তনের পথ ধরে ক্রিকেট বোর্ডে পালাবদলের পর বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ নিজে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার কথা জানান। নাসুমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এছাড়া বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্ত কমিটিতেও ঘটনাটির উল্লেখ ছিল বলে জানান নতুন সভাপতি।
নাসুম নিজে অবশ্য মুখ খোলেননি। দলেও আর সুযোগ পাননি। এই এক বছরে কেবল একটি ওয়ানডে সিরিজই খেলেছে বাংলাদেশ, গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেখানে নাসুমের জায়গায় সুযোগ পান তাইজুল। সুযোগ পাননি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও কিছুদিন আগে ভারত সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। অবশেষে আফগানদের বিপক্ষে এই সিরিজ দিয়ে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুয়ার খোলে তার জন্য।
দুর্ভাগ্য কিছুটা হানা দেয় এখানেও। ভিসা জটিলতায় প্রথম ম্যাচের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতেই পারেননি তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচের আগে শেষ পর্যন্ত দলে যোগ দিতে পারেন। একাদশেও সুযোগ পেয়ে যান।
কী দারুণভাবেই না কাজে লাগালেন সেই সুযোগ!
বল হাতে নেওয়ার আগেই ব্যাটিংয়ের কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয় তাকে। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ যখন এক ওভারেই আউট হয়ে ফেরেন, ছয় উইকেট হারানো বাংলাদেশের স্বীকৃত ব্যাটসম্যান তখন টিকে আছেন কেবল একজন। সেই তার আবার এটি অভিষেক ম্যাচ।
অভিষিক্ত জাকের আলির সঙ্গেই তখন দারুণ এক জুটি গড়েন নাসুম। শুরুতে একটু সময় নিলে পরে পাল্টা আক্রমণ করেন দুজন। তিন উইকেট শিকার করা নানগেলিয়া খারোটেকে ছক্কায় উড়িয়ে জাকেকে পথ দেখান নাসুমই।
৪১ বলে ৪৬ রানের জুটি গড়েন দুজন। নাসুম করেন দুই ছক্কায় ২৪ বলে ২৫ রান। তিনটি ছক্কায় ২৭ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত রয়ে যান জাকের।
শান্ত-মাহমুদউল্লাহর দ্রুত বিদায়ে একসময় ২২০ রান করা নিঙে শঙ্কায় থাকা দল তুলে ফেলে ২৫২ রান।
পরে নিজের আসল কাজেও সফল নাসুম। রেহমাত শাহ ও সেদিকউল্লাহ আটালের জুটি যখন বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে, তখন ত্রাতা হয়ে আসেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
সপ্তদশ ওভারে তাকে প্রথমবার আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। প্রথম বলেই ধরা দেয় উইকেট! ৩৯ রান করে আউট হন আটাল।
পরে বিপজ্জনক আজমাতউল্লাহ ওমারজাইকে বোল্ড করে দেন তিনি প্রথম বলেই। আফগানিস্তান আর পেরে ওঠেনি। শেষ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সমাপ্তি হয় নাসুমের হাত ধরেই।
বিশ্বকাপে তিন ম্যাচ খেলে খরুচে বোলিং করে তার কোনো উইকেট ছিল না। ফেরার পর এক ম্যাচেই উইকেট নিলেন তিনটি।
আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচ-সেরা তিনি হননি। তবে ম্যাচের নায়ক তো তিনিই!
৭৬ রান করে ম্যান অব দা ম্যাচ হওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত ম্যাচ শেষে বললেন, তার নিজের ইনিংসের চেয়ে জাকের-নাসুমের জুটির প্রভাব ছিল বেশি। বোলিং পারফরম্যান্সের স্তুতি তো অবধারিতই ছিল।
“মিরাজ ও নাসুম যেভাবে বল করেছে, ওদেরকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। বোলিংয়ে আমরা যেভাবে শুরু করেছি, নতুন বলে তাসকিন আবারও গুরবাজকে আউট করেছে, সে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান (আফগানিস্তানের জন্য)। সব মিলিয়ে গোট ব্যাটিং আর বোলিং গ্রুপ ভালো করেছে।”
“আমার ব্যাটিংয়ের চেয়ে, ওরা যেভাবে ইনিংসের শেষটা করেছে, তাতেই আমরা মোমেন্টাম পেয়ে গেছি এবং জাকের ও নাসুমের মতো লোয়ার অর্ডারদের কাছ থেকে এটাই আমার চাওয়া। ওরা যেভাবে ব্যাট করেছে, তাতে আমি খুবই খুশি। আশা করি এটা ওরা ধরে রাখতে পারবে।”