‘হাসান বিশ্বমানের, শান্ত গ্রেট টিমম্যান’

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে এই দুজনের পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 05:44 AM
Updated : 15 May 2023, 05:44 AM

বয়স মোটে ২৩। অভিজ্ঞতা স্রেফ ১০ ওয়ানডের। কিন্তু হাসান মাহমুদের বোলিং আর শরীরী ভাষা দেখে তা কে বলবে! তামিম ইকবাল তো রায় দিয়েই দিলেন, বয়সের তুলনায় অনেক পরিণত এই পেসার। তেমনি তিনি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন নাজমুল হোসেন শান্তরও। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই নয়, বাংলাদেশ অধিনায়কের চোখে শান্ত দারুণ এক দল অন্তপ্রাণ ক্রিকেটার।

গত কিছুদিনের ধারাবাহিকতায় চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও উজ্জ্বল এই দুজন। বাংলাদেশের সিরিজ জয়ে বড় অবদান দুজনেরই। সিরিজের সর্বোচ্চ ১৯৬ রান শান্তর। গড় ৬৫.৩৩, স্ট্রাইক রেট ১০২.৬১। হাসান নিয়েছেন ৩ ম্যাচে দলের সর্বোচ্চ ৫ উইকেট।

নতুন বলে দুই দিকে সুইং ও নিয়ন্ত্রণ, পুরনো বলে কার্যকারিতা, মাথা খাটিয়ে ব্যাটসম্যানকে পড়ে বল করা, সব দিক থেকেই নজর কেড়েছেন হাসান।

গোটা সিরিজে যেমন দারুণ খেলেছেন দুজন, তেমনি শেষ ম্যাচেও দলের জয়ে তারা রাখেন বড় ভূমিকা। রনি তালুকদার দ্রুত আউট হওয়ার পর শান্ত নেমে পাল্টা আক্রমণে ৭ চারে ৩২ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন। পরে দারুণ চমক দেখান তিনি বোলিংয়ে। ৪২তম ওভারে আক্রমণে এসে হ্যারি টেক্টরকে ফিরিয়ে জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান তিনিই।

৪৯তম ওভারে অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে চার-ছক্কা মেরে তবু আয়ারল্যান্ডকে জয়ের কাছে নিয়ে যান মার্ক অ্যাডায়ার। শেষ ওভারে প্রয়োজন ১০ রান, অ্যাডায়ার তখন খেলছেন ৯ বলে ২০ রান করে।

সেই ওভারে প্রথম বলেই হাসানের বুদ্ধিদীপ্ত ‘ব্যাক অব দা হ্যান্ড’ স্লোয়ার ডেলিভারিতে অ্যাডায়ার বোল্ড হয়ে যান ১০ বলে ২০ রান করে। পরে আরেকটি স্লোয়ারে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকেও ফেরান হাসান।

তার ওই ওভার থেকে আসে কেবল ৪ রান। চাপের মধ্যেও বরফশীতল মানসিকতায় স্থির থেকে নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে যান ২৩ বছর বয়সী বোলার।

তরুণ পেসারের এমন পারফরম্যান্সে মুগ্ধ তামিমের বিশ্বাস, এই অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করবে হাসানকে।

“সে এখন যেভাবে বোলিং করছে, তা বিশ্বমানের। বিশেষ করে নতুন বলে সে অসাধারণ। বয়স খুব কম হলেও ডেথ ওভারে সে দারুণ পরিণত। চাপের মধ্যে সে দারুণ ধীরস্থির।”

“তার জন্য এটি বড় শিক্ষাও। অনুশীলনে কেউ হাজারটা বল করতে পারে। কিন্তু ম্যাচে এই ধরনের চাপের মধ্যে কাজটা করতে পারা দারুণ। এখান থেকে সে অনেক কিছু শিখবে।”

শান্তর জন্য সিরিজটি প্রাপ্তিতে ভরপুর। প্রথম ম্যাচটি যদিও ছিল অপূর্ণতার। আউট হয়ে যান ৪৪ রান করে। তবে পরের ম্যাচে দলের অসাধারণ রান তাড়ায় নায়ক তিনি ৯৩ বলে ১১৭ রান করে। যেটি তাকে এনে দেয় এই সংস্করণে প্রথমবার ম্যাচ সেরা হওয়ার সম্মান। শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে খেলেন ক্যামিও ইনিংস আর বল হাতে স্বাদ পান প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের। তাতে নিশ্চিত হয় দলের সিরিজ জয় আর নিজে পান প্রথমবার ম্যান অব দা সিরিজের স্বীকৃতি।

গত বছর পর্যন্ত ১৫ ওয়ানডে খেলে একবারও ৪০ ছুঁতে পারেননি শান্ত। এ বছর ৭ ওয়ানডেতে ১ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটি হয়ে গেল। ব্যাটিংয়ে এই ধারাবাহিকতার পাশাপাশি আলাদা করে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি ফিল্ডিংয়ে। এই আয়ারল্যান্ড সিরিজেও অসাধারণ ফিল্ডিং করেছেন মাঠের নানা প্রান্তে। এসবের পাশাপাশি শান্তর দল অন্তপ্রাণ মানসিকতাও তুলে ধরলেন তামিম।

“সবশেষ ২-৩ সিরিজ ধরেই সে খুব ভালো খেলছে। নিয়মিত রান করছে। আমাদের জন্য যা দারুণ ব্যাপার। তিন নম্বর এমন একটি পজিশন, যেখানে লম্বা সময়ের জন্য কাউকে আমরা নিয়মিত পাইনি। আমার মনে হয়, তিন নম্বরে সে নিজের জায়গা পাকা করেছে।”

“সে রান করছে নিয়মিত। শুধু রানই নয়, যেভাবে সে মাঠে ফিল্ডিং করে, সব জায়গায় নিজের সেরাটা দেয়। গ্রেট টিমম্যান… ওর জন্য আমি খুবই খুশি।”