বিপর্যয়ে লড়াই জাকের-শাহাদাতের, ফের ব্যর্থ জয়-মুমিনুল

ভালো শুরুর পর ইনিংস বড় করতে পারেননি প্রথম ম্যাচের নায়ক জাকির হাসান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2022, 12:55 PM
Updated : 6 Dec 2022, 12:55 PM

ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে রানের দেখা নেই মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হকের ব্যাটে। হতাশার ছবি দলে ফেরার লড়াই থাকা সাদমান ইসলামের ব্যাটেও। ছন্দ ধরে রেখে ভালো ব্যাটিং করেছেন জাকির হাসান। তবে গত ম্যচের সেঞ্চুরিয়ান এবার পারেননি ইনিংস বড় করতে। মিডল অর্ডারে ফিফটি করে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন শাহাদাত হোসেন ও জাকের আলি অনিক।  

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ইনিংস গুটিয়ে গেছে ২৫২ রানে।

৮৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলের হয়ে ১৩৯ রানের জুটি গড়েন শাহাদাত ও জাকের।

৯ চার ও ২ ছক্কায় ৮০ রানের ইনিংস খেলেন শাহাদাত। কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের করেন ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬২। চার রানের জন্য পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি জাকির।  

সবুজাভ উইকেটে প্রথম ম্যাচের দুই পেসার নবদিপ সাইনি ও মুকেশ কুমারের সঙ্গে জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ উমেশ যাদবকে নিয়ে পেস শক্তি বাড়িয়ে খেলতে নামেন সফরকারীরা। 

তবে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দুই পেসারের চেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন টেস্ট দলের দুয়ারে কড়া নাড়তে থাকা মুকেশ। ৪০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে জাতীয় নির্বাচকদের আরও একবার সামর্থ্যের বার্তা দিয়ে রাখলেন ২৯ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার। 

টস জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারতীয় অধিনায়ক অভিমন্যু ইশ্বরন। সাফল্যও ধরা দেয় দ্রুত। উমেশের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে অফস্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন সাদমান (৪)।

ওপেনিং থেকে এই ম্যাচে তিনে নেমে আসা জয়ের শুরুটাও হয় অস্বস্তিময়। উইকেটে গিয়ে শরীরের দূর থেকে খেলতে দেখা যায় তাকে। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে একটি বাউন্ডারিও পেয়ে যান। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মুকেশের অফস্টাম্পের বাইরের বলে শ্রীকার ভারতের দারুণ ক্যাচে আউট হন ১২ রান করা মাহমুদুল। 

৩৬ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন জাকির ও মুমিনুল। প্রথম ম্যাচে ১৭৩ রানের ইনিংস খেলা জাকির এবারও শুরু থেকেই ছিলেন সাবলিল। ভারতের পেসারদের ভালোভাবেই সামলান বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান। 

অন্য প্রান্তে মুমিনুলের ব্যাটেও ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। বাঁহাতি স্পিনার সৌরভ কুমারের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু অফ স্পিনার জয়ন্ত যাদবের বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা ব্যাটসম্যান (১৫)।

মুমিনুলের বিদায়ে ভাঙে ৪২ রানের জুটি। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ও জাকিরকে পরপর দুই ওভারে ড্রেসিংরুমের পথে পাঠিয়ে দেন মুকেশ। ড্রাইভ করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন মিঠুন। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলে কট বিহাইন্ড হন ৯ চারে ৪৬ রান করা জাকির।

৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় দল। ষষ্ঠ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন শাহাদাত ও জাকের। দুজন মিলে নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন প্রায় দেড় সেশন।

এই সিরিজের আগে দুজনই ছিলেন ফর্মে। বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণে সেঞ্চুরি করেন শাহাদাত। জাকেরও এক ম্যাচে করেন ফিফটি। সেই ফর্মকেই এই ম্যাচে বয়ে এনে দুজন গড়েন ১৩৯ রানের জুটি। ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে দুজনই পা রাখেন পঞ্চাশে।

এই জুটি ভাঙে শাহাদাতের বিদায়ে। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগানো ২০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান অভিজ্ঞ উমেশের ফুল লেংথের ডেলিভারি ড্রাইভ করতে গিয়ে।

এরপর জাকেরও বেশিক্ষণ টেকেননি। মুকেশের ফুল লেংথের বল ড্রাইভ খেলার চেষ্টায় তার ব্যাটের বাইরের কানায় লাগে। দ্বিতীয় স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন সরফরাজ খান।

শেষ দিকে ১ চার ও ২ ছয়ে ১২ বলে ২১ রানের ইনিংসে দলকে আড়াইশ পার করান আশিকুর জামান। ৮০ ওভার পর দ্বিতীয় নতুন বলে জোড়া উইকেট নিয়ে লেজ মুড়িয়ে দেন মুকেশ।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ষষ্ঠবার ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন পশ্চিমবঙ্গের এই পেসার।

শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ ওভার নিরাপদে কাটিয়ে দেন ভারতের দুই ওপেনার অভিমন্যু ইশ্বরন ও যাশাসবি জয়সওয়াল। আলোকস্বল্পতায় তিন ওভার আগে বন্ধ হয় খেলা।

ভারতের টেস্ট দলের সম্ভাব্যদের মধ্যে উমেশ যাদব ও শ্রীকার ভারত ছাড়া চেতেশ্বর পুজারাও খেলছেন এই ম্যাচে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ‘এ’ দল ১ম ইনিংস: ৮০.৫ ওভারে ২৫২ (সাদমান ৪, জাকির ৪৬, মাহমুদুল ১২, মুমিনুল ১৫, মিঠুন ৪, শাহাদাত ৮০, জাকের ৬২, সুমন ৪, মুরাদ ০*, আশিকুর ২১, মুশফিক ০; উমেশ ১৬-২-৫৫-২, সাইনি ১৩-৩-২৭-০, মুকেশ ১৫.৫-৫-৪০-৬, জয়ন্ত ১৬-২-৫৬-২, সৌরভ ১৭-৩-৫৭-০, সরফরাজ ৩-০-১৩-০)

ভারত ‘এ’ দল ১ম ইনিংস: ৪ ওভারে ১১/০ (জয়সওয়াল ৮*, ঈশ্বরন ৩*; সুমন ২-০-৫-০, মুশফিক ২-০-৬-০)