বিপিএলের শেষ ভাগে এসে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফম্যান্সে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন ফরচুন বরিশালের ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার।
Published : 26 Feb 2024, 06:52 PM
চার ম্যাচ খেলে দুটিতেই ম্যান অব দা ম্যাচ কাইল মেয়ার্স। আরেকটিতেও দল নাটকীয়ভাবে হেরে না গেলে ম্যাচের সেরা হতেন হয়তো তিনিই। বিপিএলে পা রাখার পর থেকেই অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে রাঙিয়ে চলেছেন ফরচুন বরিশালের ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। ব্যবধান গড়ে দেওয়ার এই ধারা তিনি ধরে রাখতে চান আরও দুটি ম্যাচ।
বিপিএলের শেষভাগে এবার বরিশালের জন্য যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন মেয়ার্স। ব্যাটে-বলে তিনি অবদান রেখেছেন প্রতি ম্যাচেই। তার সুইং বোলিং ও আগ্রাসী ব্যাটিং বরিশাল দলকে করে তুলেছে আগের চেয়ে অনেক ভারসাম্যপূর্ণ।
বাংলাদেশে তার সুখস্মৃতি ছিল আগেও। ২০২১ সালে চট্টগ্রামে অভিষেক টেস্টেই চতুর্থ ইনিংসে রেকর্ড গড়া এক ডাবল সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়েছিলেন তিনি। এবার বিপিএলে প্রথমবার খেলতে এসেও তিনি আপন আলোয় উজ্জ্বল।
সেই চট্টগ্রামেই বিপিএল অভিষেকে ৩১ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলার পর ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন তিনি। পরের ম্যাচে ২৭ বলে করেন ৪৬ রান, বল হাতে শিকার করেন ২ উইকেট। সেদিন আবু হায়দারের ৫ উইকেটের পর বরিশাল হেরে যায় ১ উইকেট।
পরের ম্যাচটাতেও যা একটু বিবর্ণ ছিলেন তিনি। আউট হয়ে যান ২৫ রানে। তবে সেই ম্যাচেই তামিম ইকবালের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক জুটিতে ভূমিকা রাখেন দলের জয়ে। বোলিংয়ে সেদিন উইকেটশূন্য ছিলেন ৩ ওভারে ১৭ রান দিয়ে।
এলিমিনেটর ম্যাচে সোমবার মেয়ার্স অলরাউন্ড আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের আশা। বল হাতে ২৮ রানে উইকেট নেন তিনি দুটি। এরপর রান তাড়ায় ৫ ছক্কায় খেলেন ২৬ বলে ৫০ রানের ইনিংস। বরিশালের ৭ উইকেটের জয়ে ম্যাচ সেরায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না তার।
ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণীতে সঞ্চালক আমির সোহেল বললেন, “ম্যাচ সেরা হওয়াটাকে তো অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন!” হাসিমুখে মেয়ার্সের উত্তর, “টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত এই অভ্যাস ধরে রাখতে পারলে ভালো লাগবে।”
মিরপুরে গত শুক্রবার যে ম্যাচ জিতে শীর্ষ চারে থাকা নিশ্চিত করে বরিশাল, সেদিন উইকেট বেশ কঠিন ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য। এলিমিনেটর ম্যাচের উইকেট তুলনায় বেশ ভালো মনে হয়েছে মেয়ার্সের কাছে।
"ম্যাচের শুরুতে উইকেট কিছুটা চিটচিটে ছিল। তবে বেশিক্ষণের জন্য নয়। গত ম্যাচের তুলনায় এই ম্যাচের উইকেট অনেক ভালো ছিল। সেদিনের উইকেটে অনেকটা স্যাঁতস্যাঁতে ছিল। যে কারণে সেদিন আগে বোলিং আমাদের সাহায্য করেছে। আজকের ম্যাচে উইকেট বেশ ভালো ছিল। খুব ভালো আচরণ করেছে। ম্যাচ যত এগিয়েছে, ব্যাটে ভালোভাবে এসেছে বল।"
উইকেটের আচরণ নিয়ে মেয়ার্সের সঙ্গে একমত বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবালও।
“উইকেট দেখে আগের দিনের চেয়ে ভালো মনে হয়েছে। তবে মিরপুরে দুপুরের ম্যাচে শুরুর দিকে বোলারদের জন্য কিছুটা হলেও সাহায্য থাকে। আমার মনে হয়, প্রথম কয়েক ওভারে উইকেট কিছুটা চিটচিটে ছিল। যেটা আমরা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছি।"
রান তাড়ায় তামিম ও মেয়ার্সের জুটিই চট্টগ্রামকে এগিয়ে নেয় জয়ের পথে। ৫৪ বলে ৯৮ রানের জুটি গড়েন দুজন। দুজনই ছিলেন কার্যকর, তবে ধরন ছিল ভিন্ন। মেয়ার্সের ব্যাট থেকে আসে ৫টি ছক্কা ও ৩টি চার। তামিমের ইনিংসে কোনো ছক্কা ছিল না। ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংসে তিনি চার মেরেছেন ৯টি।
ম্যাচ শেষে তামিম বললেন, মেয়ার্সের মতো পেশির জোর না দেখিয়ে তিনি নিজের মতো ক্রিকেটীয় শটের পথই বেছে নিয়েছেন।
"তার (মেয়ার্স) খেলার ধরন একরকম, আমার খেলার ধরন আরেকরকম। ফাঁক খুঁজে ক্রিকেটীয় শট খেলার চেষ্টা করি আমি। নিজের শক্তির জায়গার বাইরে যাওয়া উচিত নয় আমার। সেটিই করার চেষ্টা করছিলাম। মেয়ার্সের ইনিংসটি দারুণ ছিল। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই সে দারুণ করেছে।"