টানা তিন জয়ে পয়েন্ট তালিকার তিনে থেকে প্লেঅফে খুলনা, বরিশালের বিপক্ষে জিতেও বাদ ঢাকা বিভাগ।
Published : 19 Dec 2024, 06:02 PM
আগের ছয় ইনিংস মিলিয়ে মোহাম্মদ মিঠুন করেছিলেন ৫৮ রান। তিন ইনিংস খেলে ইমরুল কায়েসের রান ছিল ৩৬। অবশেষে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান জ্বলে উঠলেন জরুরি সময়ে। আজিজুল হাকিম তামিম তো টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দেখিয়ে চলেছেন প্রতিভার ঝলক। তরুণ ব্যাটসম্যান এবার ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকেও। এই ত্রয়ীর ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলারদের পারফরম্যান্সে প্লেঅফে পৌঁছে গেল খুলনা বিভাগ।
প্রথম চার ম্যাচে স্রেফ একটি জয় ছিল খুলনার। শেষ তিন ম্যাচে টানা জয়ে মোট আট পয়েন্ট নিয়ে তারা তৃতীয় স্থানে থেকে শেষ করল প্রাথমিক পর্ব। এই ম্যাচে হেরে যাওয়ায় অবশ্য খুব একটা ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি রংপুর বিভাগের। দুইয়ে থেকে তাদের প্লেঅফ খেলা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই।
সিলেটে জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে বৃহস্পতিবারের অন্য ম্যাচে দুই দলের সামনেই চ্যালেঞ্জ ছিল জয়ের পাশাপাশি রান রেটের কঠিন সমীকরণ মেলানো। সেখানে বরিশাল বিভাগকে ১৯ রানে হারালেও লাভ হয়নি ঢাকা বিভাগের। বাদ পড়ে গেছে দুই দলই। এ দিনের সকালের ম্যাচে হেরেও শেষ দল হিসেবে প্লেঅফে জায়গা করে নিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ।
সমান ছয় পয়েন্ট হলেও চট্টগ্রামের রান রেট ০.২২০, ঢাকার রান রেট -০.৫৫২।
শনিবার সকালে টুর্নামেন্টের এলিমিনেটর ম্যাচে মুখোমুখি হবে খুলনা ও চট্টগ্রাম। একই দিন দুপুরে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে লড়বে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা ঢাকা মেট্রো ও দুইয়ে থাকা রংপুর। এলিমিনেটরে জয়ী ও প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে যাওয়া দল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে রোববার। ফাইনাল মঙ্গলবার।
খুলনার হ্যাটট্রিক জয়
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা বিভাগ ম্যাচ শুরু করে প্রথম ওভারে আজিজুল হাকিমের ছক্কায়। তরুণ বাঁহাতির ব্যাট থেকে তৃতীয় ওভারে আসে দুটি বাউন্ডারি।
আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা এনামুল হক এবার আউট হয়ে যান ১০ বলে ৯ রান করে। আজিজুলের সৌজন্যে তবু উদ্বোধনী জুটিতে ৪ ওভারে আসে ৩৫ রান।
এরপরই খুলনার বড় স্কোরের ভিত গড়ে দেওয়া জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে আজিজুল ও মিঠুন যোগ করেন ৬৮ রান।
কিছুদিন আগে যুব এশিয়া কাপে শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল আউট জন ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৪১ বলে ৬৬ করে। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ৫৩ করেছিলেন তিনি।
শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে এরপর তাণ্ডব চালান মিঠুন ও ইমরুল। আজিজুল আউট হওয়ার সময় মিঠুনের রান ছিল ২২ বলে ২০। ওই ওভারেই ছক্কা মেরে তার ডানা মেলার শুরু। পরের ১৪ বলে ৩০ রান করে তিনি পঞ্চাশে পা রাখেন ৩৬ বলে।
দুই পাশ থেকেই রান আসতে থাকে বানের জলের মতো। চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ানের এক ওভারে দুটি করে চার ও ছক্কায় দুজনে তোলেন ২১ রান।
দুজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে শেষ ৫ ওভারে ৭০ রান তোলে খুলনা।
৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৯ বলে ৭১ রান করে মিঠুন আউট হন শেষ ওভারে। আগের তিন ইনিংসে ওপেনিংয়ে ব্যর্থ ইমরুল এবার চারে নেমে ১৯ বলে ৪০ রানে অপরাজিত।
২০ ওভারে খুলনার স্কোর দাঁড়ায় ১৯৫, এই আসরে যা তাদের সর্বোচ্চ।
রংপুরের হয়ে টুর্নামেন্টের সফলতম বোলার আলাউদ্দিন বাবু (১৪ উইকেট) একটি উইকেট পেলেও এই ম্যাচে ৪ ওভারে রান দেন ৪৪।
রংপুরের রান তাড়ায় ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই এনামুলের দারুণ ক্যাচে শূন্য রানে ফেরেন রিজওয়ান। দুই অভিজ্ঞ তানবীর হায়দার ও নাঈম ইসলাম ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও আউট হয়ে যান।
৪৮ রানে ৩ উইকেট হারানো রংপুরকে লড়াইয়ে ফেরায় আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আকবর আলির জুটি। আল মামু আটকে রাখেন এক প্রান্ত, আরেক প্রান্তে আকবর তোলেন ঝড়।
তবে এই জুটি ভাঙার পাশাপাশি দ্রুত একের পর এক উইকেট নিয়ে রংপুরকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন খুলনার দুই স্পিনার শেখ পারভেজ জীবন ও টিপু সুলতান। ২৭ বলে ২৭ রান করা আল মামুনকে ফিরিয়ে ৭৬ রানের জুটি ভাঙেন অফ স্পিনার জীবন। পাঁচ ছক্কায় ২৯ বলে ৫২ রান করা আকবরকে আউট করেন বাঁহাতি স্পিনার টিপু।
দুই স্পিনার তিনটি করে উইকেট নিলে ২২ রানের মধ্যে ছয় উইকেট হারায় রংপুর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা বিভাগ: ২০ ওভারে ১৯৫/৪ (এনামুল ৯, আজিজুল ৬৬, মিঠুন ৭১, ইমরুল ৪০*, মৃত্যুঞ্জয় ০, টুটুল ১*; মুকিদুল ৩-০-৩১-০, এনামুল ৪-০-২৮-০, আলাউদ্দিন ৪-০-৪৪-১, রবিউল ৪-০-৩১-২, আরিফ ৪-০-৩৮-১, রিজওয়ান ১-০-২১-০)।
রংপুর বিভাগ: ২০ ওভারে ১৬১/৯ (রিজওয়ান ০, তানবীর ২৬, নাঈম ১৪, আল মামুন ২৭, আকবর ৫২, আরিফুল ০, আলাউদ্দিন ২, এনামুল ১৬, রবিউল ১, মুকিদুল ১৬*, আরিফ ৯*; আল আমিন ৩-০-৩১-১, নাহিদুল ৩-০-৩৫-০, টুটুল ৪-০-৩৩-১, মৃত্যুঞ্জয় ২-০-১৭-১, জীবন ৪-০-২৩-৩, টিপু ৪-১-২০-৩)।
ফল: খুলনা বিভাগ ৩৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ মিঠুন।
জিতেও বাদ ঢাকা বিভাগ
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বরিশাল বিভাগকে ১৯ রানে হারায় ঢাকা বিভাগ। তবে ম্যাচশেষে দুই দলেরই মন খারাপ। শেষ চারে জায়গা পায়নি কোনো দলই।
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে ঢাকা ২০ ওভারে তোলে ১৭৮ রান। অভিজ্ঞ রনি তালুকদার শূন্যতে ফিরলেও আরেক ওপেনার তরুণ জাওয়াদ আবরার করেন তিন ছক্কায় ২৫ বলে ৩২ রান।
অধিনায়ক সাইফ হাসান ১৭ রান করেন ১৭ বলে। চোখধাঁধানো কয়েকটি শটে কেবল ১০ বলেই ২৭ রান করেন আরিফুল ইসলাম।
এরপর দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়ে যায় ঢাকা। ১৫ ওভারে তাদের রান ছিল ৭ উইকেটে ১৩১। দুই বোলার সুমন খান ও নাজমুল ইসলাম অপু ব্যাটসম্যান হয়ে উঠে এগিয়ে নেন দলকে।
২১ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন সুমন, ১৩ বলে ২৩ করেন নাজমুল। দুজনের এটি ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ইনিংস।
শেষ ওভারে তিনটিসহ মোট চার উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়া।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বরিশাল। ১০ ওভারে রান ছিল তাদের ৪ উইকেটে ৫৬।
সালমান হোসেন ২৬ বলে ৩০ রান করে আউট হন। শেষ দিকে সোহাগ গাজী ও কামরুল ইসলাম রাব্বি ক্যামিও ইনিংস খেলে ব্যবধান কমান। ২০ বলে ৩০ রান করেন অধিনায়ক সোহাগ। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে তিনটি করে চার ও ছক্কায় ২৩ বলে ৩৯ রান করেন কামরুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা বিভাগ : ২০ ওভারে ১৭৮ (জাওয়াদ ৩২, রনি ০, সাইফ ১৭, আরিফুল ২৭, তাইবুর ১২, আশিকুর ১২, শুভাগত ১৪, সুমন ৩৬*, নাজমুল অপু ২৩, সোহাগ ১, ইমন ০; তানভির ৪-১-২০-০, কামরুল ৪-০-৩৪-১, রুয়েল ৩-০-৩৬-৪, মেহেদি ২-০-২৮-১, জেহাদ ৪-০-২৯-৩, মইন ১-০-৯-০, সোহাগ ২-০-২২-০)।
বরিশাল বিভাগ: ২০ ওভারে ১৫৯/৯ (মজিদ ৯, ইফতি ১০, ফজলে রাব্বি ১৫, সালমান ৩০, মইন ৩, সোহাগ ৩০, কামরুল ৩৯*, তানভির ৬*; ইমন ৩-০-২৩-০, শুভাগত ৩-০-১৫-১, সাফি ৩-০-১৫-২, নাজমুল অপু ৪-০-২৩-০, তাইবুর ৩-০-৩২-১, সুমন ৪-০-৪৯-১ )।
ফল: ঢাকা বিভাগ ১৯ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সুমন খান।