তামিম ইকবালের ঝড়ের পর তাণ্ডব চালালেন তৌফিক খান, তবে তাকে থামিয়ে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল চট্টগ্রাম।
Published : 12 Dec 2024, 02:00 PM
নাঈম হাসানের বলে টানা দুই চারের পর ছক্কার চেষ্টা করলেন তৌফিক খান। কিন্তু সীমানা পার করতে পারলেন না। ডিপ মিড উইকেট ডানে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিলেন হাসান মুরাদ। জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তৌফিকের বিদায়ে স্বস্তি ফিরল চট্টগ্রাম দলে। পরে সহজেই বাকি কাজটুকু সেরে নিল তারা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে তামিম ইকবালের ঝড়ো ফিফটির জবাবে তাণ্ডব চালিয়ে সিলেট বিভাগের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তৌফিক। তাকে ফেরানোর পর ১২ রানের জয় পেয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ।
এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে বৃহস্পতিবারের অন্য ম্যাচে শেষ ওভারের রোমাঞ্চে বরিশাল বিভাগকে ১ রানে হারিয়েছে খুলনা বিভাগ।
তামিমের পঞ্চাশতম ফিফটিতে চট্টগ্রামের প্রথম জয়
কুয়াশার কারণে ১৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে দারুণ শুরুর পরও ৯ উইকেটে ১৪৫ রানে থেমে যায় চট্টগ্রামের ইনিংস। জবাবে তৌফিক ছাড়া আর কেউই দায়িত্ব নিতে না পারায় ৪ বল বাকি থাকতে ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায় সিলেট।
দুই ম্যাচে চট্টগ্রামের এটি প্রথম জয়। সিলেট হারল দুই ম্যাচেই।
প্রায় সাত মাস পর মাঠে ফেরা তামিম প্রথম ম্যাচে বুধবার ১০ বলে ১৩ রান করে আউট হয়ে যান। তবে পরেরটিতেই তিনি মেলে ধরলেন সেরা সময়ের প্রতিচ্ছবি। ৮ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কায় ৩৩ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলে তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
পরে তামিমকেও ছাপিয়ে যান তৌফিক। ৭ চারের সঙ্গে ৬ ছক্কায় মাত্র ৩৬ বলে ৭৬ রান করেন সিলেট ওপেনার। কিন্তু দলের আর কেউ ১৫ রানও করতে পারেনি।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা চট্টগ্রামের ইনিংসে ছিল পরিষ্কার দুটি ভাগ। প্রথম ৮ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে তারা করে ৯৮ রান। পরে বাকি ৭ ওভারে আরও ৮ উইকেটে তাদের স্কোরে যোগ হয় মাত্র ৪৭ রান।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চমৎকার শুরু এনে দেন মাহমুদুল হাসান জয় ও তামিম। প্রথম ওভারেই ছক্কা ও চার মারেন জয়। পরের সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে কাভার ড্রাইভে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দেন তামিম।
আবু জায়েদ চৌধুরির বলে দুই চারের সঙ্গে ছক্কা মারেন জয়। ইবাদত হোসেন চৌধুরির ওভারে তামিম মারেন তিনটি চার। এরপর জয়কে দর্শক বানিয়ে এগিয়ে যান তামিম। আবু জায়েদের ওভারে দুটি চারের পর নাঈম আহমেদের বলে মারেন ছক্কা ও চার।
১৭ বলে ২৯ রান করা জয়কে সপ্তম ওভারে ফেরান ইবাদত। ৮০ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
পরের ওভারে পুল করে চার মেরে ২৭ বলে পঞ্চাশতম পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তামিম। মাহফুজুর রহমান রাব্বির পরের দুই বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে তিনি ওড়ান ছক্কায়।
দলের একশ পার হওয়ার পর তোফায়েল আহমেদের বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় ফেরেন তামিম। এরপর বাকিদের ব্যর্থতায় কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি চট্টগ্রামের ইনিংস।
রান তাড়ায় সিলেট বিপাকে পড়ে যায় দ্রুতই। রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা জিসান আলম, অমিত হাসান ও আসাদুল্লাহ আল গালিব।
তৃতীয় উইকেটে ওয়াসিফ আকবরকে নিয়ে ৪২ বলে ৭৯ রান যোগ করেন তৌফিক। যেখানে ওয়াসিফের অবদান ১৭ বলে ১৩ রান।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে যাত্রা শুরু করেন তৌফিক। তৃতীয় ওভারে হাসান মুরাদের বলে চারের পর মারেন দুটি ছক্কা। পরের ওভারেও তার ব্যাট থেকে আসে চার ও ছক্কা।
পঞ্চম ওভারে আহমেদ শরিফের বলে ছক্কা ও চারে মাত্র ১৯ বলে ফিফটি করেন তিনি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এর চেয়ে কম বলে ফিফটি আছে শুধু শুভাগত হোম (১৬) ও লিটন কুমার দাসের (১৮)।
১১তম ওভারে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে চট্টগ্রামের জয় প্রায় নিশ্চিত করে দেন নাঈম। পরে বাকি কাজ সারতে বেগ পেতে হয়নি শরিফ, ইফরানদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম: ১৫ ওভারে ১৪৫/৯ (জয় ২৯, তামিম ৬৫, ইয়াসির ১, সাজ্জাদুল ৪, মুমিনুল ৮, সাব্বির ১৫, নাঈম ৮, শরিফ ০, মুরাদ ৩, ইফরান ০*; নাঈম ২-০-২৯-০, খালেদ ৩-০-১৯-৪, আবু জায়েদ ৩-০-৩৫-১, ইবাদত ৩-০-৩১-১, রাব্বি ১-০-১৮-০, তোফায়েল ৩-১-৭-২)
সিলেট: ১৪.২ ওভারে ১৩৩ (তৌফিক ৭৬, জিসান ০, অমিত ০, গালিব ০, ওয়াসিফ ১৩, রাব্বি ১, তোফায়েল ১৪, খালেদ ০, আবু জায়েদ ৫, ইবাদত ২*, নাঈম ৬; মুরাদ ৩-০-২৫-৩, ফাহাদ ৩-০-৩৩-১, ইফরান ২.২-০-২১-১, শরিফ ৩-০-৩৩-২, নাঈম ৩-০-১৭-৩)
ফল: চট্টগ্রাম ১২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল
শেষ ওভারে খুলনার রোমাঞ্চকর জয়
শেষ তিন বলে প্রয়োজন ৩ রান। পরপর দুই বলে রান আউট কামরুল ইসলাম ও তানভির ইসলাম। এক বলে ৩ রানের সমীকরণে 'ওয়াইড' করে বসলেন মেহেদি হাসান। ২ রানের সমীকরণে ব্যাট ছোঁয়াতে পারলেন না রুয়েল মিয়া। রানের জন্য ছুটলেন অন্য প্রান্তে থাকা মইন খান।
বল ধরে থ্রো করতে সময় নিলেন না নুরুল হাসান সোহান। স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙতে ব্যর্থ হলেন তিনি। তবে আরও কিছুটা পথ গড়িয়ে বল আঘাত করল নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে। তখনও ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি রুয়েল। নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে ১ রানের জয় পেল খুলনা।
শেষ ওভারে তিনটি রান আউটসহ বোলারদের দাপটের ম্যাচে সোহানই খুলনার নায়ক। ব্যাট হাতেও তিনি খেলেন ৩৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। তাই ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে খুলনার অধিনায়কের হাতেই।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৩১ রানের লক্ষ্যে ৯ উইকেটে ১২৯ রানে থামে বরিশাল।
পরাজয়ে যাত্রা শুরু করা খুলনার এটি প্রথম জয়। দুই ম্যাচই হেরে আপাতত সবার নিচে বরিশাল।
ম্যাচের প্রথমভাগে ভালো শুরুর আভাস দিয়েও বেশি দূর যেতে পারেননি এনামুল হক। প্রথম ম্যাচে রানের দেখা পাওয়া অমিত মজুমদার ও আজিজুল হাকিম তামিম এ দিন টিকতে পারেননি।
পরে মোহাম্মদ মিঠুন, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিও হতাশ করলে চাপে পড়ে যায় খুলনা। একপ্রান্ত আগলে রেখে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ বলে ৩৯ রান করেন সোহান। জিয়াউর রহমানের ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে ১৭ রানের ইনিংস।
রান তাড়ায় শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে বরিশাল। একপ্রান্ত ধরে রাখেন আব্দুল মজিদ। ষষ্ঠ উইকেটে তার সঙ্গে জুটি বাধেন মইন খান। দুজন মিলে ৩৪ বলে যোগ করেন ৪৭ রান।
এই জুটির সৌজন্যে হারতে বসা ম্যাচে আশার আলো দেখতে শুরু করে বরিশাল। কিন্তু ৫৩ বলে ৫১ রান করা মজিদের বিদায়ের পর একের পর এক রানআউটের চক্করে বাকি কাজ সারতে পারেননি মইন। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ২৭ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা: ২০ ওভারে ১৩০/৯ (এনামুল ২৪, অমিত ৬, আজিজুল ৬, মিঠুন ১৪, সোহান ৩৯, মৃত্যুঞ্জয় ১৩, জিয়াউর ১৭, নাহিদুল ০, মেহেদি ১, টিপু ১*; কামরুল ৪-০-২৩-৪, রুয়েল ৪-০-৩০-১, মেহেদি ১-০-১৪-০, তানভির ৪-০-১৪-১, মইনুল ৪-০-৩৫-১, আহরার ১-০-৩-১, সোহাগ ২-০-৫-০)
বরিশাল: ২০ ওভারে ১২৯/৯ (মজিদ ৫১, ইফতেখার ১, ফজলে মাহমুদ ১০, মইনুল ১, আহরার ৫, সোহাগ ৭, মইন ৪৩*, কামরুল ৫, তানভির ০, রুয়েল ০; নাহিদুল ৪-০-১১-২, আল আমিন ৪-০-৩৪-১, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-৩৪-১, আজিজুল ১-০-৭-০, টিপু ৩-০-১৬-০, মেহেদি ৪-০-২৫-২)
ফল: খুলনা ১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নুরুল হাসান সোহান