Published : 04 May 2025, 07:07 PM
নাজমুল হোসেন শান্ত টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক থাকার সময় মূল প্রশ্ন ছিল তার ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে। সেই একই প্রশ্ন তোলা যায় তো লিটন কুমার দাসকে নিয়েও! তার ফর্মও খুব ভালো নয় এই সংস্করণে। তার পরও অবশ্য তার নেতৃত্ব পাওয়া নিয়ে বিস্ময় খুব একটা নেই। কিন্তু বড় চমক হয়ে এসেছে শেখ মেহেদি হাসানের সহ-অধিনায়কত্ব পাওয়া। দুটি সিদ্ধান্তেরই কারণ ব্যাখ্যা করেছে বিসিবি।
এই বছরের শুরুর দিকেই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন, টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা তাকে জানিয়েছেন শান্ত। সেই সময় এই সংস্করণে বাংলাদেশের কোনো খেলা ছিল না বলে নতুন অধিনায়ক ঠিক করার তাড়া ছিল না বিসিবির। অবশেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরের আগে রোববার নতুন অধিনায়ক হিসেবে লিটনের নাম ঘোষণা করেছে বিসিবি।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনু্ষ্ঠেয় বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লিটনকে। এখনও পর্যন্ত নানা সময়ে নানা সংস্করণে জাতীয় দলের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে বেশ সফল তিনি। টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন একটি ম্যাচে। ২০২৩ সালে সেই ম্যাচে আফগানিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ২০২২ সালে তার অধিনায়কত্বেই ভারতের বিপক্ষে ধরা দিয়েছিল সিরিজ জয়।
টি-টোয়েন্টির সাফল্য আরও সাম্প্রতিক। সবশেষ সিরিজেই গত ডিসেম্বরে শান্ত চোটের কারণে না থাকায় নেতৃত্ব দেন লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাঠে ৩-০তে হারায় বাংলাদেশ।
নানা সময়ে অধিনায়ক হিসেবে তার দক্ষতার নানা দিক মাঠে উঠে উঠেছে বটে। তবে ব্যাট হাতে তার পারফরম্যান্স ও ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্নটাও প্রায় নিত্য সঙ্গী তার। যে সংস্করণে দীর্ঘমেয়াদে নেতৃত্ব তিনি পেলেন, সেই টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ ২৪ ম্যাচে তার ফিফটি স্রেফ একটি!
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদিনের কথায় লিটনের পারফরম্যান্স নিয়ে ভরসার চেয়ে বেশি ফুটে উঠল আশা।
“অভিজ্ঞতা আমাদের এখানে খুব বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে খুব বেশি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আমাদের নেই। পাশাপাশি ওর (লিটন) বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আমাদের যেটা মনে হয়েছে, ওর মধ্যে যে সম্ভাবনাটা আছে, ও যদি নিজের খেলাটা গুছিয়ে নিতে পারে, তাহলে দলের জন্য অনেক বড় সম্পদ হতে পারে।”
“ওর অধিনায়কত্ব নিয়ে সবারই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আছে। যারা টেকনিক্যালি খুব সাউন্ড, তারাও তার অধিনায়কত্বের গুণের কথা বলে। পাশাপাশি তার পারফরম্যান্সটা খুব জরুরি। ব্যাটিংয়ে বিশেষ করে। এটা যদি আমরা গুছিয়ে নিতে পারি, তাহলে আমাদের এই দলটায় খুব ভালো একটা দায়িত্ব পালন করতে পারবে। দলের শক্তির একটা বড় জায়গা হয়ে দাঁড়াতে পারে লিটন কুমার দাস।”
বিকল্প কম বলেই আসলে লিটনকে অধিনায়ক করা নিয়ে প্রশ্নও বেশি নেই। তবে শেখ মেহেদিকে আগে কখনোই সেভাবে ‘লিডারশিপ’ গ্রুপে দেখা যায়নি এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও। হুট করে তাকে জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক করা তাই কিছুটা চমকপ্রদই।
তার দায়িত্ব অবশ্য লিটনের মতো দীর্ঘমেয়াদে নয়। সহ-অধিনায়কের এই দায়িত্বটি স্রেফ সামনের সিরিজ দুটির জন্য। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জানালেন, বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত নানা সময়ে নানাজনকে এই দায়িত্বে পরখ করা হতে পারে।
“যে দলটা এখন আছে, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটারের সংখ্যা খুব কম। আমরা জানি, শেখ মেহেদি কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে অনেকটা অটোমেটিক চয়েজ। ওর যে অভিজ্ঞতা আছে, ট্যাকটিক্যাল জ্ঞান আছে, সেটা আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। সেটা আমাদের চোখে পড়েছে। সেটা নিয়ে নির্বাচক, কোচসহ সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, এই মুহূর্তে যদি তাকে এই সুযোগটা দেই, তাহলে দেখতে পারব, কীভাবে সে এটি প্রয়োগ করে।”
“আমরা কিন্তু শুধু এই সফরের জন্য এটি (সহ-অধিনায়ক) ঘোষণা করেছি। আমাদের ইচ্ছা আছে, এভাবে বিভিন্ন জনকে দেখার চেষ্টা করবে। পাশাপাশি একজন অধিনায়কের নেতৃত্বে আরেকজনকে গড়ে তোলার চেষ্টা থাকবে। আমরা হয়তো ২-৩ জনকে দেখব। এর মধ্যে কেউ না কেউ হয়তো খুব ভালো হিসেবে বেরিয়ে আসবে। হয়তো পরবর্তীতে তাকেই আমরা দায়িত্ব দেব।”
টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের নাম ঘোষণা হলেও আপাতত অন্য দুই সংস্করণে অধিনায়ক নেই বাংলাদেশের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজ শুরুর আগে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, আপাতত শুধু এই সংস্করণের জন্য অধিনায়ক করা হয়েছে তাকে।
নাজমুল আবেদিন জানালেন, এই দুই সংস্করণেও লম্বা সময়ের জন্য অধিনায়ক ঘোষণা করা হবে দ্রুতই।
“ওয়ানডে, টেস্টেও আমরা দীর্ঘমেয়াদি অধিনায়কত্বে যাব। এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। খুব দ্রুতই পঞ্চাশ ওভার ও টেস্ট অধিনায়কের ঘোষণা দেব। কারণ এটা খুব জরুরি। শূন্যস্থানটা যেন না থাকে।”
“আমরা হয়তো দুই-আড়াই মাস পর টেস্ট খেলব (আসলে আগামী মাসের মাঝামাঝি)। এমনিতে সিরিজের এক সপ্তাহ আগে হয়তো জানানো হয়। কিন্তু অধিনায়কের যে দায়িত্ব থাকে দল তৈরি করা, সেটা শুধু ম্যাচের সময় নয়, পুরোটা সময়ই থাকে। তাই আমরা যত বেশি সময় দেব, অধিনায়কের জন্য ভালো হবে। তাই খুব শিগগিরই বোর্ড থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।”