চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণার আগের সময়টায় একদমই ছন্দে ছিলেন না এই বাঁহাতি পেসার, অবশেষে তিনি ফিরতে পেরেছেন আপন রূপে।
Published : 31 Jan 2025, 10:07 AM
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কয়েকবারই জিজ্ঞেস করা হলো শরিফুল ইসলামকে। তিনি প্রতিবার একই ধরনের উত্তর দিলেন। কোনো আফসোস তার নেই। খারাপ লাগাও নাকি কাজ করছে না ভেতরে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ দলে জায়গা না পেয়েও আক্ষেপ হয় না, এমনটা আবার হয় নাকি!
বিপিএলে বৃহস্পতিবার রাতের ম্যাচের আগে অবশ্য এই প্রশ্নটাই ছিল অবান্তর। দলে থাকার দাবিটাই যে ছিল না শরিফুলের পারফরম্যান্সে!
অথচ একটা সময় শরিফুলকে ছাড়া বাংলাদেশ দল ভাবা ছিল কঠিন। তিন সংস্করণেই তাকে মনে হচ্ছিল অপরিহার্য। কিছু দিন তো দেশের সেরা পেসারও মনে করা হয়েছে তাকে। একটা চোটের পর ছন্দপতন। এরপর তাকে আর সেরা চেহারায় দেখা যাচ্ছিল না।
এবারের বিপিএলেও ছিল সেই একই হাল। চিটাগং কিংসের হয়ে ৯ ম্যাচে তার উইকেট ছিল মোটে ৮টি। ওভার প্রতি রান দিয়েছিলেন প্রায় ৯।
অথচ গত বিপিএলে তলানির দলে খেলেও দুর্দান্ত বোলিংয়ে তিনি উইকেট শিকার করেছিলেন ২২টি।
এবার বিপিএলে তার এমন বিবর্ণ পথচলার মধ্যেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশের দল ঘোষণা করা হয়। সেখানে ঠাঁই হয়নি শরিফুলের। তাকে নিয়ে খুব একটা প্রশ্নই ওঠেনি। বরং আরেক পেসার হাসান মাহমুদের অনুপস্থিতি ছিল বেশি উল্লেখযোগ্য।
অবশেষে বিপিএলে কঠিন সময়টা পেরিয়ে তিনি নিজেকে ফিরে পেলেন বৃহস্পতিবার। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিলেন ৫ রান দিয়ে। বিপিএলে সবচেয়ে মিতব্যয়ী ৪ উইকেটের রেকর্ড এটি।
যে কারও তাই মনে হতেই পারে, এই পারফরম্যান্স যদি কিছুদিন আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণার আগে হতো, তিনিও জোরালভাবে থাকতেন বিবেচনায়।
শরিফুল অবশ্য তা হেসেই উড়িয়ে দিলেন, “আল্লাহ যখন যেটা রিজিকে লিখে রেখেছেন, সেটাই হবে। আগে-পরে কোনো বিষয় না।”
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে থাকতে পারতেন, প্রসঙ্গটি তুলতেই তিনি বললেন, “জানি না… তবে আফসোস নেই। আল্লাহ হয়তো ভালো কিছু কপালে লিখে রেখেছেন।”
তবু প্রশ্ন হলো আরেক দফায়। তার উত্তরে বদল নেই খুব একটা, “না না, খারাপ লাগছে না (দলে জায়গা না পেয়ে)। অনেক খুশি আমি, আল্লাহর ওপর ভরসা আছে।”
তার এই খুশি অবশ্য জাতীয় দলে জায়গা না পাওয়ার কারণে নয়, নিজেকে ফিরে পাওয়ার কারণে। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে যখন টানা ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তখন ভড়কে গিয়েছিলেন তিনি নিজেও। তবে তার দলের প্রধান কোচ শট টেইট নিজে ছিলেন ফাস্ট বোলার। একজন পেসারের ভেতর-বাহির তাই ভালোই জানেন তিনি।
কোচকে তখন পাশে পেয়েছেন শরিফুল। দলের অ্যানালিস্টের প্রতিও কৃতজ্ঞ তিনি।
“আসলেই শুরুতে হচ্ছিল না। আমি নিজেও পরে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কোচ তখন আমার সঙ্গে খুব পজিটিভ একটি মিটিং করেন। আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন। সঙ্গে নাসু (অ্যানালিস্ট নাসির আহমেদ) ভাইও। তারা বলেন যে, যত ম্যাচ যাবে, তত রিদম ফিরবে।”
“এসব নিয়েই কাজ করছিলাম। অনুশীলনে নতুন বলে বেশি বেশি বল করছিলাম। এখন আর ফিরতে পেরেছি।ইনজুরির কারণে এফোর্ট একটু কম হচ্ছিল। শরীর আগেই পড়ে যাচ্ছিল। এটাই অনুশীলনে চেষ্টা করছিলাম।”
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই পরিবর্তন আনা যাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে। কোনো পেসার চোট-টোট না পেলে অবশ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বাংলদেশ দলে। তবে শরিফুল এমন বোলিং করতে থাকলে, তার দলে ফিরতেও সময় বেশি লাগার কথা নয়।