পারফরম্যান্সের চেয়ে নানা পারিপার্শ্বিকতা প্রাধান্য পেয়েছে সৌম্যকে ফেরানোর ক্ষেত্রে, জানালেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার।
Published : 01 Dec 2023, 01:33 PM
ঘরোয়া ক্রিকেটে সাদা বলের সংস্করণে বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স নেই। ৩০ বছর বয়সে ইমার্জিং দলে খেলেও উল্লেখযোগ্য কোনো ইনিংস নেই। তার পরও কিভাবে বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে ফিরতে পারলেন সৌম্য সরকার? তুমুল আলোচিত সেই প্রশ্নের উত্তর জানা গেল জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কাছ থেকে।
নিউ জিল্যান্ড সফরের বাংলাদেশ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে পরিবর্তন আছে বেশ কিছু। দলে নতুন মুখ আছে, বাদ পড়েছেন কেউ কেউ, কেউ বা আবার ফিরেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি কৌতূহল নিঃসন্দেহে সৌম্যর ফেরা নিয়েই।
বাংলাদেশের হয়ে সবশেষ ১৬ ওয়ানডে ইনিংসে তার ফিফটি মোটে একটি, সবশেষ ১৬ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই। জাতীয় দলে তাকে সবশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বিশ্বকাপের ঠিক আগে দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। সেই ম্যাচে ভালো কিছু করলে তাকে বিশ্বকাপে নেওয়া হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু সেই ম্যাচে তিনি আউট হয়ে যান দুই বলে শূন্য রান করে।
ওই সিরিজের আগে এসিসি ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে তাকে খেলানো হয়েছিল ফর্মে ফেরার আশায়। সেই আসরে ৩ ইনিংস মিলিয়ে তার রান ছিল ৯৫।
৫০ ওভারের ক্রিকেটের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসরে ১১ ইনিংস খেলে তিনি ২৯৩ রান করেছিলেন মাত্র ২৬.৬৩ গড়ে। গোটা আসরে উইকেট ছিল চারটি।
টি-টোয়েন্টিতে গত বিপিএলে ১২ ইনিংসে ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন মোটে একবার, মোট ১৭৪ রান করেছিলেন স্রেফ ১৪.৫০ গড়ে। উইকেট ছিল মাত্র তিনটি।
এমন পারফরম্যান্সের একজন ক্রিকেটার দলে ফিরলে বিস্ময় জাগা স্বাভাবিক। তাকে দলে নেওয়ার পেছনে কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
সিলেটে বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ড টেস্ট ম্যাচ চলার সময় এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল হাবিবুল বাশারের কাছ থেকে। শুধু কোচের প্রভাবের কথা এড়িয়েই গেলেন তিনি।
“আমার মনে হয়, কোচের ইনপুট নিয়ে খুব বেশি আলাপ হওয়া উচিত নয়। দল যখন হয়, সবার ইনপুট নিয়েই করা হয়। সবাই একমত যখন হয়, তখনই দলটা গড়া হয়। আমাদেরও কিছু পছন্দ থাকে, কোচেরও থাকে। এমন নয় যে একজন ক্রিকেটার শুধু একজনের পছন্দেই দলে আসে।”
সৌম্যকে নেওয়ার পেছনে নিজেদের ভাবনা ব্যাখ্যা করলেন এই জাতীয় নির্বাচক।
“এবার আসলে আমাদের কিছু ফোর্সফুল পরিবর্তন করতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ নেই, সাকিব আল হাসানকে পাওয়া যাচ্ছে না, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সংখ্যা আমাদের কমে গেছে। নিউ জিল্যান্ড সফর আমাদের জন্য সবসময়ই একটু কঠিন হয়। সেখানে আমাদের সাধারণত অনেক ধুঁকতে হয়। সেখানে নতুন কাউকে দেখার থেকে আমাদের মনে হয়েছে, এমন কাউকে নেই যে এই কন্ডিশনে আগে খেলেছে।”
“পাশাপাশি ওর একটু অলরাউন্ড সামর্থ্যও আছে। এই ভাবনা থেকে তাকে নেওয়া হয়েছে। আর এবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুব ভালো পারফর্ম যে করেছে, তা নয়। তবে ৪৮ গড় খুব খারাপ নয়, যদিও এর কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা করার থাকে। চিন্তা করা হয়েছে যে, যেহেতু এই কন্ডিশনে আগে খেলেছে ও পারফর্ম করেছে, অলরাউন্ড সামর্থ্যও আছে, সব মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
সদ্য সমাপ্ত জাতীয় লিগে ৪৮.৪৪ গড়ে ৪৩৬ রান করেন সৌম্য। ১১ ইনিংস খেলে যদিও সেঞ্চুরি পাননি কোনো। তার বোলিং পারফরম্যান্স অবশ্য দারুণ ছিল। ৬ ম্যাচে শিকার করেন ১৭ উইকেট।
তবে এই পারফরম্যান্স তো ভিন্ন সংস্করণে। নিউ জিল্যান্ড সফরে তো টেস্ট ম্যাচ নেই!
আগেও বিভিন্ন সময়ে সৌম্যকে যেভাবে দলে ফেরানো হয়েছে, তখনও নানা সময়ে প্রক্রিয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। পারফরম্যান্সের চেয়ে অন্যান্য ভাবনা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। এবারও সেই একই যুক্তি দেখালেন নির্বাচক হাবিবুল।
“যদি কেউ পারফর্ম করে, তাহলে তাকে কিন্তু দলে নেওয়া হয়। তবে আমরা যখন দল করি, কিছু ব্যাপার বিবেচনায় আনি অবশ্যই। শুধু পারফরম্যান্স নয়, পারিপার্শ্বিকতা দেখতে হয় আমাদের, অতীত ও ভবিষ্যৎ ভাবতে হয়। সেক্ষেত্রে যারা একটু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, তারা মোটামুটি পারফর্ম করলে অন্যদের সুযোগ বেশি থাকে। কারণ আমাদের কাছে মনে হয়, একদম নতুন কাউকে নেওয়ার চেয়ে… সৌম্য একদমই খারাপ ফর্মে নেই। এবার প্রথম শ্রেণিতে ভালোই ব্যাটিং করেছে।”
নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে অভিজ্ঞতার কথা বললেন হাবিবুল। কিন্তু সেখানে ৯ ওয়ানডে খেলে সৌম্যর ব্যাটিং গড় ১৫.৪৪, ৮ টি-টোয়েন্টিতে গড় ২১.৭৫।
বারংবার প্রশ্নে হাবিবুল বাশার এক পর্যায়ে অনেকটা মেনেই নিলেন যে, বাধ্য হয়েই সৌম্যকে দলে নিয়েছেন তারা।
“যেটা বললাম, কিছু ফোর্সফুল পরিবর্তন আমাদের করতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ নেই, সাকিব নেই। দুজন সিনিয়র ক্রিকেটার নেই। অন্য কোনো বিকল্পে তাকাতে হলে আমাদের নতুন কাউকে দেখতে হতো, যে ওই কন্ডিশনে কখনও খেলেনি।”
দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি টেস্ট সিরিজ শেষেই নিউ জিল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ। ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ, এরপর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।