প্রথম দুই ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলেও শেষ ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাগ্য ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করছেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
Published : 27 Feb 2025, 10:09 AM
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে টুর্নামেন্টে আসা দল ছিটকে গেছে প্রথম দুই ম্যাচেই। এরপর কী আর প্রাপ্তির কিছু বাকি থাকে! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, শেষ ম্যাচ থেকেও অনেক কিছু পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচের মতে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েও দেশের ক্রিকেটের ভাগ্য ঘুরে যেতে পারে।
রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায়। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়া দুই দলের জন্যই এটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ।
২৯ বছর পর আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে সেই আসরের গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়া পাকিস্তানের জন্য চরম হতাশাজনক। বাংলাদেশের বেদনাও কম নয়। দেশ ছাড়ার আগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই দল দেশে ফেরার টিকেট নিশ্চিত করেছে টুর্নামেন্টে সবার আগে।
আশার শেষ তবুও হয়নি। নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর শান্ত বলেছিলেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের কোচ ও সাবেক পেসার আকিব জাভেদও বোঝানোর চেষ্টা করেন, কতটা গুরুত্ব এই লড়াইয়ের।
পরে সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিনের কণ্ঠেও শোনা গেল একই কথার প্রতিধ্বনি। তিনি বরং আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে বললেন, এই ম্যাচটি জিততে পারলে তা হতে পারে মাইলফলকের মতো।
“দুটি দলেরই যদি টুর্নামেন্টে ভবিষ্যৎ দেখেন, তাহলে তো কোনো কিছুই পাওয়ার নেই। তবে যেহেতু একটি টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছি, শেষ ম্যাচটায় ভালো কিছু করতে পারলে আমাদের জন্য ভালো একটি দিক-নির্দেশনা হবে। গত দুটি ম্যাচে যে জিনিসগুলো আমরা ভুল করেছি, সেগুলো যেন কালকের (বৃহস্পতিবার) না করি।”
“প্রতিটি ম্যাচেই আসলে উন্নতির জায়গা আছে। যে জায়গাগুলি খুব দ্রুত পূর্ণ করা উচিত। কখন কোন সময়ে আত্মবিশ্বাস পাবেন এবং কখন জীবনের মোমেন্টাম ঘুরে যেতে পারে, এটা কেউ বলতে পারে না। আমি মনে করি, প্রতিটি ম্যাচই প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেও অনেকে অনেক কিছু নিয়ে যেতে পারি।প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। টুর্নামেন্ট থেকে আমরা হয়তো বের হয়ে গেছি। তবে এটিই সব কিছু নয়। এই ম্যাচটি হয়তো আমাদের ক্রিকেটের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।”
শেষ ম্যাচে প্রাপ্তিযোগ কিছু হোক বা না হোক, এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যে মুখ থুবড়ে পড়েছে, এটা নিয়ে সংশয় নেই। দলের নিবেদন, নিজেদেরকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার তাড়না, প্রশ্নবিদ্ধ এখন সবকিছুই।
সিনিয়র সহকারী কোচের যদিও বিশ্বাস, ক্রিকেটারদের নিবেদন বা তাড়নায় কোনো কমতি নেই।
“আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি, যদি বলেন যে আমাদের ছেলেদের ইচ্ছা নাই বড় হওয়ার, সেটা ভুল বলা হবে। ছেলেরা চেষ্টা করছে। তবে একটা জিনিস আপনাকেও মানতে হবে যে, সবগুলো আসলে একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে হবে। সিস্টেমের মধ্যে এলে হয়তো এই ছেলেগুলি আরও ভালো অবস্থানে থাকবে।”
“আমি যেহেতু মাত্র দুটো সিরিজ ছেলেদের সঙ্গে কাজ করেছি… ছেলেদের মধ্যে আমি অনেক… মানসিক দিক বলেন, ইতিবাচক কিছু দেখতে পেয়েছি। তাদের চিন্তাভাবনা বলুন, দলের জন্য খেলা বলুন বা তাদের নিজেদের বড় হওয়ার যে ব্যাপারগুলো আছে, সেগুলোয় তাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে হয়তো আমরা ব্যক্তিগত অনেক কিছু চিন্তা করতাম। সেগুলো ছেড়ে তাদের মধ্য সমষ্ঠিগত বা দলের কথা ভেবে খেলার চেষ্টা করছে। যে মানসিকগুলো বড় হওয়ার জন্য আমাদের অনেক কাজে লাগবে। এই ম্যাচে যদি তারা দল হিসেবে ভালো কিছু করতে পারে, সেটা ভবিষ্যতে তাদের কাজে লাগতে পারে।”
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে লক্ষ্যের কথা অধিনায়ক বলেছিলেন, সেখানেও কোনো ভুল দেখেন না সালাউদ্দিন। তবে দলের ব্যর্থতাও তিনি মেনে নিচ্ছেন। সিনিয়র সহকারী কোচের আশা, এই আঁধার কাটিয়ে দ্রুতই আলোয় ফিরবে দল।
“সামর্থ্য না থাকলে তো আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতাম না। যেহেতু বিশ্বের সেরা ৮টি দল এসেছে, আমাদের সামর্থ্য আছে বলেই এসেছি। এখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসতে পারেনি, শ্রীলঙ্কা পারেনি। সামর্থ্য না থাকলে আমরা এখানে আসতাম না। আবার যদি বলেন যে শুধু অংশ নিতেই এসেছি, তাহলে এখানে আসাই উচিত নয়। যেহেতু এখানে এসেছি, একটা স্বপ্ন থাকা উচিত যে কী করতে চাই স্বপ্নই না দেখলে ওই জায়গায় যাবেন কীভাবে!”
“আমি মনে করি, এখানে পারফর্ম করার সামর্থ্য আমাদের আছে। তবে সেটা আমরা দেখাতে পারিনি। এটা আমাদের শুনতেই হবে এবং মেনে নিতেই হবে। তবে আমি আশা করি, আমরা খুব তাড়াতাড়িই পারব।”