ছাত্র রাজনীতিকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে আকর্ষণীয় করতে ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের।
Published : 04 Jan 2024, 01:49 PM
আসছে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে চিরতরে লালকার্ড দেখানো হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে ছাত্রলীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি এখন অপেক্ষায় আছে, আটলান্টিকের ওপার থেকে স্যাংশন আসবে। শেখ হাসিনা ভিসানীতির তোয়াক্কা করেন না। শেখ হাসিনা আটলান্টিকের ওপার থেকে স্যাংশনকে ভয় পান না। তিনি ভয় পান একমাত্র সৃষ্টিকর্তাকে ।
“তিনি ভালোবাসেন বাংলাদের জনগণকে। বাংলাদেশের মাটি ও জনগণ আমাদের শক্তির উৎস। কোনো বিদেশি শক্তির হুমকি-ধমকি আমরা পরোয়া করি না।”
৭ জানুয়ারি ‘ফাইনাল খেলা’ হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “খেলা হবে লুটপাটের বিরদ্ধে, খেলা হবে হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, খেলা হবে আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। দুর্নীতিবাজ, লুটেরারা সাবধান। সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।”
দশম সংসদ নির্বাচনের মতই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে টানা দেড় মাস দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ করার পর এখন তারা ভোট বর্জনের আহ্বানে অসহযোগের ডাক দিয়ে লিফলেট বিতরণ করছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি এখন কোথায়? ফাউল করে লাল কার্ড খেয়ে পালিয়েছে। বিএনপি ভুয়া, ওদের আন্দোলন ভুয়া, এক দফা ভুয়া, ৩২ দল ভুয়া, মানববন্ধন ও পদযাত্রা ভুয়া, বিএনপির হরতাল-অবরোধ পাবলিক মানে না, বিএনপি হচ্ছে ভুয়া।”
‘পড়াশোনাও করতে হবে’ ছাত্রলীগকে
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে জন্মের পর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বৃহস্পতিবার ৭৬ বছর পূর্ণ করল ছাত্রলীগ।
প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আমলেই ‘মুসলিম’ শব্দটি ছেঁটে ফেলা হয়। স্বাধীনতার পর নাম হয় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’।
প্রতিষ্ঠালগ্নে নাইমউদ্দিন আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর আরমানিটোলায় ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনে দবিরুল ইসলাম সভাপতি ও মোহাম্মদ আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতিকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে আকর্ষণীয় করতে ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “মেধা, সাহস, চলাফেরা ও পোশাক পরিচ্ছদে স্মার্ট হতে হবে। স্মার্ট মানে গতানুগতিক ভাষণ দেওয়া নয়। কথা বলতে হবে স্মার্টলি, বলতে হবে চোখের ভাষায়, বুঝতে হবে মনের ভাষায়। একথা বললে মন শুনতে চাইবে। সেই কথা বলতে হবে, যেই কথা নেতৃত্ব দেবে। সেটাই হল বক্তৃতা।
“সাধারণ ছেলে-মেয়েদের বোঝাতে হবে, এই দেশ ভালো লোকদের হাতে থাকলে ভালো হবে। ভালো লোকেরা না এলে রাজনীতি মূল্যহীন হয়ে পড়বে। রাজনীতিতে মেধাবীদের আসতে হবে, তা না হলে দেশের রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে যাবে। চরিত্রবানদের রাজনীতিতে আসতে হবে, তা না হলে রাজনীতি চরিত্রহীন হয়ে পড়বে। ভালো লোক ক্ষমতায় এলে দেশ ভালো চলবে।”
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “রুটিন লাইফ লিড করতে হবে। সময়টাকে ভাগ করে কাজে লাগাতে হবে। গৎবাঁধা মুখস্থ বক্তৃতা দিয়ে নেতা হওয়া যাবে না। নেতা হতে হলে নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করতে হবে। রাত ৮-৯ টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অফিসে ছাত্রলীগের আড্ডা দেওয়ার দরকার নাই। পড়াশোনা করে নেতৃত্বের কোয়ালিটি অর্জন করতে হবে।”
সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি টিএসসি হয়ে শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন হয়ে, কাকরাইল থেকে নাঈটিঙ্গেল মোড় দিয়ে জিরো পয়েন্ট হয়ে গুলিস্তানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পর্যন্ত যায়।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে ছাত্রলীগের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে নিয়মিত কর্মসূচির পাশাপাশি এবছর নৌকা নিয়ে এই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এর আগে সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ধানমন্ডিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতিনিধিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ‘সুবিধাজনক’ সময়ে ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী আয়োজন করা হবে বলে ছাত্রলীগ নেতারা জানান।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনে সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডুসহ সাবেক ও বর্তমান বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।