একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী বলেছেন, অতীতে শিক্ষায়, কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে নারীরা নারীরা অনেক পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে অনেক এগিয়েছে।
Published : 15 Jun 2023, 09:14 PM
মেয়েদের অন্তঃপুরে রেখে দেশের সমৃদ্ধি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে ‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক ও ইহজাগতিক মূল্যবোধ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওলজি অ্যান্ড সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সহযোগিতায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), চট্টগ্রাম কেন্দ্র এই সেমিনার আয়োজন করে।
এতে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, “অতীতে নারীরা অনেক পিছিয়ে ছিল। শিক্ষায়, কর্মক্ষেত্রে এবং সমাজ জীবনে। আজ অনেক এগিয়েছে। তবে সমতা প্রতিষ্ঠার লড়াই আমাদের আরও অনেকদিন চালিয়ে যেতে হবে।
“কার্ল মার্কস বলেছিলেন, কোনো একটি জাতির অগ্রগতির জন্য আগে বহিঃশক্তির প্রভাব তথা ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত হতে হবে। পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীনতা পেলেই, শ্রেণি সংগ্রাম যাত্রা শুরু করতে পারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।”
এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, “উন্নয়নের সাথে নারীদের মুক্তি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে নারীদের স্বাধীনতা ছিল না। রোম-কার্টেজ যুদ্ধের সময় যখন পুরুষেরা যুদ্ধে গেল, তখন মেয়েরা এগিয়ে আসে নানা কাজে। একই ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। কারণ ছেলেরা তখন যুদ্ধে। তখন থেকেই মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হল।
“বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত মেয়েদের ভোটের অধিকারই ছিল না। আজ প্রায় সব দেশে আছে। আজকের আলোচনায় জিডিপির কথা এসেছে। মেয়েরা ঘরে বসে রান্না ও গৃহস্থালির এমন অনেক কাজ করে যা বাজারে আসে না। ফলে সেগুলো জিডিপিতে যোগ হয় না৷ তাই মেয়েরা যদি কর্মক্ষেত্রে না আসেন, তাহলে তা জিডিপিতে যোগ হবে না। মেয়েদের অন্তঃপুরে রাখলে দেশের সমৃদ্ধি হবে না।”
নারী-পুরুষের সমতার এই সংগ্রাম বিশ্বব্যাপী মন্তব্য করে অনুপম সেন বলেন, “প্রতিটি শিশু জন্মায় বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু কোন শিশু এই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে পারবে, তা নির্ভর করে পরিবারের সক্ষমতার মধ্যে। যে শিশু সড়কে জন্মায় সে একটা জীব হিসেবে থেকে যায়।
“যদি দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মানুষ মুক্ত না হয় তাহলে কোনোদিন সমতা প্রতিষ্ঠা হবে না। প্রতিটি মানবসত্তাকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, সংস্কৃতি ও অবকাশের অধিকার দিতে হবে। যে প্রকৃত শিক্ষা পেল না, সে জানলই না মানবসত্তা কী। এ সবকিছু মিলেই মানবাধিকার।”
সেমিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক হোসাইন কবীর বলেন, “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে ইহজাগতিক মূল্যবোধ বাস্তবায়ন অসম্ভব৷ এদেশে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা। যার ফলে বৈষম্য পরিবারেও ছড়িয়েছে। নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য এখন ধর্মীয়, জাতিগত ও অর্থনৈতিক।
“ধর্মীয় চেতনা মাথায় রেখে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব না। এদেশে বীর প্রতীক কানন বিবি, তারামন বিবিকে খুঁজে পেতে অনেক বছর সময় লেগেছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় বিধানে নারী মুক্তি হয়নি। এভাবেই জেন্ডার বৈষম্য জিইয়ে আছে।”
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানার সভাপতিত্বে সেমিনারে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিএনপিএস চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. ফেরদৌস আহম্মদ।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মকর্তা এম এম এরশাদুল করিমের শুভেচ্ছা বক্তব্যের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আলা উদ্দিন এবং পিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সোশিওলজি অ্যান্ড সাস্টেইনেবেল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কোঅর্ডিনেটর সাদিকা সুলতানা চৌধুরী বক্তব্য দেন।