ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
Published : 18 Mar 2025, 08:30 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়া ১২৮ জনের তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই নেতার নাম রয়েছে।
সিন্ডিকেটে আগের দিন এসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিন মঙ্গলবার এ তালিকা প্রকাশ পায়। তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর নাম থাকায় তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই।
এ দুই শিক্ষার্থী হলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসাইন সানিম এবং মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি মাহমুদুল হাসান আকাশ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সহিংস ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে। পরে ১২২ জন শিক্ষার্থী জড়িত থাকার প্রমাণ পায় কমিটি। একই সঙ্গে ৭০ জন শিক্ষক উসকানি দিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেয় ওই কমিটি।
প্রতিবেদন জমার চার দিন পর সোমবার এটির ভিত্তিতে ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় ১২৮ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সহিংসতার ঘটনায় দায়ী হিসেবে বহিষ্কারের এ তালিকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের নাম রয়েছে।
মঙ্গলবার এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, চিহ্নিত ১২৮ জনের তালিকা পূর্ণাঙ্গ নয়। এ ঘটনায় আরও তদন্ত হবে।
এরমধ্যেই বহিষ্কারের তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর নাম থাকার বিষয়টি আলোচনায় এল।
তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসাইন সানিম ডিসি চত্বর এলাকায় নারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে।
অপরদিকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান আকাশ ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সময় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তাকে লাঠি হাতে মিছিলে প্রথম সারিতে দেখা যায়।
জগন্নাথের এ দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী হিসাবে তাদের শনাক্ত করেছে আমাদের তথ্যানুসন্ধান কমিটি। ওই কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট তাদের বহিষ্কারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
”ওই তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীরা রয়েছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।”
ওই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হতে চাইলে তা পারবে কি না জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার আরও বলেন, “ওই বিষয়ে চিন্তা করা হয়নি। সেটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, “তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুজনের নাম রয়েছে, তাদের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে অবহিত করব। পটুয়াখালীর যে ছাত্রলীগ কর্মীর নাম রয়েছে, তার বিরুদ্ধে ওখানকার প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।”
তিনি বলেন, “এটা বহিষ্কারের চূড়ান্ত তালিকা নয়। এটি সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিকভাবে সিন্ডিকেটে অনুমোদন পেয়েছে।“
এদিকে বহিষ্কৃতদের তালিকা থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নাম বাদ পড়েছে দাবি করে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। তারা তালিকা পরিমার্জন করে হামলাকারীদের যুক্ত করার দাবি জানান।
১২৮ জনের তালিকা পূর্ণাঙ্গ নয়, আরও তদন্ত হবে: ঢাবি
ঢাবিতে হামলায় জড়িতদের তালিকায় সাদ্দাম, ইনানসহ ১২৮ নাম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় 'জড়িত' ১২৮ জনকে বহিষ্কার ঢাবির
আন্দোলনে হামলায় ঢাবির ১২২ শিক্ষার্থী, উসকানিতে ৭০ শিক্ষক: অনুসন্ধান কমিটি