শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা গত মার্চে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় রাজনীতি ফেরাতে বেশ সরব ছিলেন।
Published : 04 Feb 2025, 11:47 PM
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ‘ফেরানোর চেষ্টায় সরব’ থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আট শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে; আর বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও শোকজ করা হয়েছে ৫২ জনকে।
মঙ্গলবার রাতে বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ সংবাদকর্মীদের বলেন, “বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ। কিন্তু শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা গত মার্চে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় রাজনীতি ফেরাতে বেশ সরব ছিলেন।
“সেসব বিষয় তদন্ত করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তবে শাস্তি পাওয়া কারো নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
ওই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গত বছরের ২৮ মার্চ গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান।
ওই ঘটনায় পরের দিন বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন।
তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। পরে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
সেদিন রাতেই বুয়েট রেজিস্ট্রারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
এর মধ্যে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ। গত ৩১ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে তারা অবিলম্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালুর অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায়।
পরের দিন ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট মামলা করেন হল থেকে বহিষ্কৃত ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বী।
তার আবেদনের শুনানি করে রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট বেঞ্চ।
ছাত্র কল্যাণ অধিদপ্তরের অধ্যাপক মাসুদ বলেন, "শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি ৪১টি মিটিং করে। এছাড়া ডিসিপ্লিনারি কমিটি আরও সাতটি বৈঠক করে।
“সেখানে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অর্ডিন্যান্স রয়েছে, সেটির ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এজন্য আট শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “১২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে চার থেকে ছয় সেমিস্টারের জন্য। তাদের সাজা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "ছয়জনকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এই ছয়জনের বহিষ্কারাদেশ এখন স্থগিত আছে। যদি তারা ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে তাদের বহিষ্কার তখন থেকে কার্যকর হবে।
“এর বাইরে ৭ জনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরো ২৭ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে।"
শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।