Published : 21 Oct 2024, 09:50 PM
দেশে ধর্ষণের ঘটনাগুলোর বিচার ও ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে।
সোমবার বিকালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ থেকে রাষ্ট্রীয় খরচে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের চিকিৎসা এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগের আহ্বানও জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী।
সমাবেশে পাঁচটি দাবি তুলে ধরে ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। ধর্ষণবিরোধী চিত্রাঙ্কনও তুলে ধরেন তারা।
সমাবেশে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন সংস্কারের দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাহী নায়াব ঐশী বলেন, “প্রথমেই আমাদের ধর্ষণ আইনের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে হবে। দ্বিতীয়ত আমাদের সামাজিক সংস্কার করতে হবে।
“সেজন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষের মনস্তত্ত্বে যে 'ভিক্টিম ব্লেমিং' গেড়ে বসেছে…, একটা ধর্ষণ হলে আগে এগিয়ে যাই কোন পরিস্থিতিতে তা হয়েছে, কোন জায়গায় মেয়েটা ছিল, সে কী পড়ত…। আমাদের এ ধরনের বিষয়গুলো বদলাতে হবে। এটা একটা জঞ্জাল, আর এ জঞ্জাল পরিষ্কার না করলে 'নতুন বাংলাদেশ' এর স্বপ্ন কোনোভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব না। রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে যেন বাংলাদেশে ‘ধর্ষণের সংস্কৃতি’ বন্ধ হয়।”
সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বলেন, “আমরা যে সমাজে বাস করি, সেখানে যৌন নিপীড়নকে স্বাভাবিকীকরণ করা হয়েছে। আমরা সবাই কোনো না কোনো ধর্ষক বা যৌন নিপীড়ককে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। একটা মেয়ে যখন ধর্ষণের শিকার হয়, তখন তার জীবন তছনছ হয়ে যায়।
“প্রথমত সে একটি অপরাধের শিকার হয়, তার ওপর সে সামাজিকভাবে ঘৃণিত হয়। অপরদিকে যারা ধর্ষণটা করেন, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন যে বড়লোক হলেই তাকে মদ ভোগ, নারী ভোগ করতে হবে। এগুলো কাছাকাছি বিষয়। এগুলোকে তারা অপরাধ বলে মনে করেন না।”
সায়ান বলেন, “অতীতে আমরা দেখেছি মুনমুন, নুসরাত, রূপা পাশের দেশে তিলোত্তমা, মুনমুন ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। আজকের এই নয় বছরের শিশুর কথা জানি। এছাড়া মুনিয়ার ধর্ষক কে, আমরা সবাই জানি। শাসক গোষ্ঠীর সাথে তাদের সুসম্পর্কের কথাও জানি।
“তাদের মধ্যে লেনদেন থাকে তারা একে অপরকে সুরক্ষা করে। 'আমি টাকা দিচ্ছি, তুমি রাজনীতি করো ভাল করে, আমি ধর্ষণ করি’ এমন একটি বোঝাপড়া তাদের মধ্যে থাকে।”
৫ দাবি
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হল- সম্প্রতি বনানীতে ৯ বছরের শিশু ধর্ষণসহ সকল ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, ধর্ষণের শিকার শিশু ও নারীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ রাষ্ট্রকে বহন করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া, দ্রুত ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনগুলোর 'যৌক্তিক' সংস্কারে জন্য কমিটি গঠন করা, ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ধর্ষকের শাস্তির ব্যাপারে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা, শিশুসহ যেকোনো ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যগত ট্রমার বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া।
সমাবেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নূমান আহমেদ চৌধুরী, ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’র সংগঠক ইসাবা শুহরাত, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মুজাক্কির রিফাত, একই বিভাগের নওরীন সুলতানা তমা, তাশাহুদ আহমেদ রাফিম, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিরা তামান্না, আকাশ বিশ্বাস, ইংলিশ ফর স্পিকারর্স অব আদার ল্যাংগুয়েজ বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ইয়াসমিন বক্তব্য দেন।