বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ কর্মসূচি থেকে পাওয়া অর্থ এবং ব্যয়ের নিরীক্ষার প্রতিবেদন আগের দিন প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
Published : 03 Oct 2024, 01:23 AM
বন্যার্তদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সংগ্রহ করা গণত্রাণের আট কোটি টাকা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে জমা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ত্রাণ থেকে পাওয়া অবশিষ্ট অর্থ কোথায় আছে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ওঠা এবং আলোচনার মধ্যে আয়-ব্যয়ের একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে গণত্রাণ কর্মসূচির আয়োজক এই শিক্ষার্থীরা।
অ্যাকাউন্টিং ও পেশাদার উপদেষ্টাদের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক পিকেএফ ইন্টারন্যাশনালের একটি সদস্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত নিরীক্ষার হিসাব মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়।
আর পরদিন বুধবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের কাছে ত্রাণের আট কোটি টাকার চেক তুলে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তহবিলে ২১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ টাকা জমা হয়। এরমধ্যে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়।
বাকি ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা যৌথনামে খোলা একটি ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজুর আর রহমান, সমম্বয়ক লুৎফর রহমান ও শিক্ষার্থী মো. ফরিদ উদ্দিনের নামে যৌথভাবে এ অ্যাকাউন্ট খোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
প্রধান উপদেষ্টার তহবিলের জন্য চেক জমা দেওয়ার সময় উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, এটি তাদের সংগৃহীত ত্রাণ নয়, এটা বাংলাদেশের প্রাণ।
"শিশু, কর্মজীবী মানুষ, গৃহবধূর- দেশের আপামর জনগণ তাদের সাধ্যমত এ তহবিলে দান করেছেন। তাদের সেই সংগৃহীত অর্থ আজ দিতে এসেছেন।"
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক লুৎফর রহমান বলেন, মঙ্গলবার ত্রাণ কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট প্রকাশের পর দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে ৮ কোটি টাকার চেক জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার টিএসসিতে ত্রাণ কার্যক্রমের অডিট প্রকাশ করে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও পরে সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সেসময় বলা হয়েছিল সংগ্রহ করা অবশিষ্ট অর্থের মধ্যে ৮ কোটি টাকা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেছিলেন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টাড অ্যাকাউন্টসের অডিটর গোলাম ফজলুল কবির।
সেসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ত্রাণ কর্মসূচির আর্থিক লেনদেন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ১০ সেপ্টেম্বর এ কাজ শুরু করে মঙ্গলবার প্রতিবেদন দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেওয়ার পর পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরা হয়। এজন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ‘ফিল্ড ওয়ার্ক’ করা হয়েছে।
বর্তমানে উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমেও ত্রাণের বাকি অর্থ ব্যয় করার কথা বলা হয়।
টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ
ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত করে গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি আর্থিক হিসাব দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে মোট ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ টাকা সংগ্রহ এবং ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকা ব্যয়ের হিসাব দেওয়া হয়। সে হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে অবশিষ্ট ছিল ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭৫ টাকা। কিন্তু অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবশিষ্ট রয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা।
অবশিষ্ট টাকার এই পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, "আমাদের পূর্বের হিসেব ৪ তারিখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এরপরও আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে টাকা এসেছে, যেগুলো অডিটে যোগ হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো চেক এসেছিল যেগুলো আমরা ক্যাশ করাতে পারিনি। সেগুলো ক্যাশ করার পর এখানে যুক্ত করা হয়েছে।
“অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে চেক দিয়েছেন, কিন্তু তখনও এই নামে আমাদের কোনো ব্যাংক একাউন্ট ছিল না।"
তিনি বলেন, "এছাড়া অনেকে গয়না দিয়েছেন, যেগুলো আমরা বিক্রি করে টাকা পেয়েছি। টিএসসিতে ত্রাণ কার্যক্রমের পর থেকে যাওয়া কার্টুন এবং অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির টাকা যোগ হয়েছে। এছাড়া এক বস্তার মতো কয়েন ছিল, যেখানে প্রায় ২ লাখ টাকার বেশি হয়েছে। এগুলো আগে গণনা করা যায়নি। এসব কারণে অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে।"
সারজিস আলম বলেন, "আমরা চাইলে শুরুতেই একটি অডিট রিপোর্ট করে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে স্বচ্ছতা নিরূপণ করা যেত না। আমরা কার্যক্রম শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই অডিট ফার্মের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা সময় নিয়ে কাজটি করে আজ (মঙ্গলবার) প্রতিবেদন দিয়েছেন।"