২৭ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ১১ জুন এ নারী নেত্রীকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় তার বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়।
Published : 12 Jun 2023, 08:22 PM
পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে ঢাকায় এক সমাবেশ থেকে।
সোমবার বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আদিবাসী নারী, ছাত্র ও যুব সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৭ বছর হয়ে গেল। সত্য ঘটনা উদঘাটনে ৩৯টি তদন্ত কমিটি ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সময় এসেছে, কল্পনা চাকমার বিচারের জন্য একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন করার।
“আমরা যদি গণতদন্ত কমিশন গঠন করে বাংলাদেশে রাজাকারদের বিচারের সম্মুখীন করতে পারি, তাহলে কেন কল্পনা চাকমার বিচার করতে পারব না? যদি রাষ্ট্র না করে, গণতদন্ত কমিশন গঠন করে সত্যাসত্য বের করার প্রয়োজনীয়তা আছে।”
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে ১৯৯৬ সালের ১১ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় তার বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। সেসময় অপহরণের জন্য রাঙামাটিতে তখন কর্মরত সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কল্পনার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
খায়রুল ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্র স্বীকার করেছিল কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছেন। রাষ্ট্র নির্ধারণ করতে পারে নাই যে, কে অপরণ করেছে। ৩৯টি তদন্ত কমিটি হয়েছিল, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি হয়েছিল। আমরা কল্পনা চাকমার অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার সত্য কথাটা জানতে চাই। কল্পনা চাকমা জীবিত, নাকি মৃত সেটা জানতে চাই।”
সমাবেশে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সদস্য অ্যাডভোকেট লুনা নূর বলেন, “আমরা প্রতি বছর বলে যাচ্ছি, এই অপহরণের বিচার চাই। কিন্তু বিচার কার কাছে চাইব? একটা রাষ্ট্র যদি চরিত্রের জায়গা থেকে নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তখন নিপীড়ন করার জন্য রাষ্ট্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কিন্তু প্রথমে বেছে নেয়।
“তদন্ত তো দরকার ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শী ছিল। তদন্ত কমিটির কাছেও তারা তা বর্ণনা করেছে। কিন্তু রাষ্ট্র এটি উদঘাটন করতে চায়নি। কারণ এই উদঘাটন করার মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যহীন সমতার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে যারা ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করে রাখতে চায়, তাদের ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য তুলি লাবণ্য স্ট্রং বলেন, “২৭ বছর আগে আমাদের বোন কল্পনা চাকমাকে তার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। সে অন্যদের থেকে আলাদা ছিল, তার সুন্দর স্বপ্ন ছিল এবং সে প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিল।
“অপহরণের দিন তার ভাইদের চোখ বাঁধা ছিল না, যারা অপরহণ করেছেন তার ভাইয়েরা তাদের চিনে রেখেছেন। সেই দিন থেকে আজ অবধি কতবার তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। নাম প্রকাশ করেও আজ অবধি বিচার পাচ্ছেন না তারা।”
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করাসহ রূপন, সুকেশ, মনোতোষ ও সমর বিজয় চাকমার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানানো হয়।
পাশাপাশি পাহাড় ও সমতলে আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।
সমাবেশে কল্পনা চাকমার সহযোদ্ধা ইলোরা দেওয়ান, মহিলা পরিষদের অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ, সাংবাদিক নজরুল কবীর, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শীল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বক্তব্য দেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ।