নতুন কমিটিতে পদ পাওয়াদের মধ্যে কেউ কেউ এ কমিটিকে ‘ব্যক্তিগত কমিটি’ আখ্যায়িত করছেন।
Published : 14 Feb 2025, 07:29 PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানাকে আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত হাসানকে সদস্যসচিব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাখা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে কমিটি প্রকাশের পরপরই পদপ্রাপ্ত নেতারা পদত্যাগ করতে শুরু করেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ কমিটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু করেন পদবঞ্চিতরা।
নতুন কমিটিতে পদ পাওয়াদের মধ্যে কেউ কেউ এ কমিটিকে ‘ব্যক্তিগত কমিটি’ আখ্যায়িত করছেন। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সমন্বয়ক ‘নূর নবী’কে দোষারোপ করছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সদস্য সচিব আরিফ সোহেলের সই করা প্যাডে কমিটি প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস শেখ নিজেকে কমিটি থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি এই কমিটিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি আবেগের প্লাটফর্ম। জবিতে এই কমিটি গঠন বিষয়ে আমাকে কিছু না জানিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে, যেখানে আমার নামটাও সঠিক ভাবে লিখতে পারে নাই।
“জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর এই কমিটি মূলত ‘নূর নবী’র ব্যাক্তিগত কমিটি। সে তার কুমিল্লার লোকজনকে এখানে নাম দিয়েছে যারা জুলাই আন্দোলনে কোনো ভূমিকাই রাখেনি। যারা ১৫ জুলাইয়ে আমাদের রেখে পালিয়ে গিয়েছিল, তারা এখানে স্থান পেয়েছে অথচ যারা জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলো তাদের জায়গা হয়নি।”
ফেরদৌস শেখ বলেন, “ঢাকা কলেজের মত একটি জায়গায় যদি তিন শতাধিক সদস্য নিয়ে কমিটি দিতে পারে, তাহলে জবিতে কেন নয়। কারণ অধিক সদস্য নিয়ে কমিটি দিলে তার একক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সেই ব্যক্তির ইচ্ছার বাহিরে আর কাউকে কমিটিতে স্থান দেবে না সে।
“যেহেতু এই কমিটি আমার অনেক সহযোদ্ধা বড় ভাই, বন্ধু ও ছোট ভাইকে সুকৌশলে মাইনাস করা হয়েছে, তাই এই কমিটিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। পাশাপাশি নিজে অব্যাহতি নিচ্ছি এই সিন্ডিকেট কমিটি থেকে।”
নতুন কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মো. শাহীন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নূর নবী তার বাধ্যগতদের কমিটিতে বসাতে গিয়ে যোগ্যদের বঞ্চিত করেছে। কমিটিকে তার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যেই সে এই কমিটির সুপারিশ করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের অনেক সহযোদ্ধা এই কমিটিতে মূল্যায়িত হয়নি, তাই এই কমিটি আমরা মানি না।
“অনানুষ্ঠানিকভাবে আমরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের বড় একটি সংখ্যা পদত্যাগ করবে। পাশাপাশি এই সিন্ডিকেট কমিটিকে আমরা ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করব, তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না।”
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নূর নবী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জুলাই আন্দোলনে দল মত নির্বিশেষে সকলেই অংশগ্রহণ করেছে। সরকার পতনের পর অনেকেই নিজ নিজ মতাদর্শের রাজনৈতিক দলের সাথে চলে গেছে। যারা বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মকে ধারণ করেছে, তারাই কেবল এখানে সুযোগ পেয়েছে।”
পদত্যাগ করা বৈষম্যবিরোধী নেতাদের ‘ছাত্রলীগের’ সঙ্গে তুলনা করে নূর নবী বলেন, “ছাত্রলীগ যেভাবে পদ পদবির জন্য মরিয়া ছিল, তারাও সেরকম। তারা সকলেই ছাত্রলীগ টাইপের। তাদের একজনকে আহ্বায়ক দিতে হবে আর আরেকজনকে দিতে হবে সদস্য সচিব। একটি পোস্টে তো আর একাধিক কাউকে দেওয়া যায় না। যারা যোগ্য তাদেরকেই দেওয়া হয়েছে।”
কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়ে নূর নবী বলেন, “তারা কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার কে? তারা সর্বোচ্চ কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে পারে। কমিটি কিভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে সেটা কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদ ঠিক করবে।”
বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত ৫১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিতে উপদেষ্টা সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নূর নবী।
ছয় মাস মেয়াদ বিশিষ্ট এই কমিটিতে মুখ্য সংগঠক হিসেবে আছেন ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মাহিন, মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী নওশিন নওয়ার জয়া।
এ ছাড়া কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আছেন আলী আহমেদ আরাফ, মো. ফেরদৌস শেখ, মো. শাহিন মিয়া। যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন সুমন আলী, মো. সোলেমান হোসেন, সাকিবুল হাসান, আমিনুল ইসলাম, আকরামুল হক আলী, আহমেদ আরাফ, শাহপরান আহমেদ শ্রাবণ, মো. স্বপন মিয়া, আম্মার বিন আসাদ ও তাহমিদুর রহমান।
কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিকুর রহমান ও যুগ্ম সদস্য সচিব আশরাফ আরেফিন, কামরুল হাসান রিয়াজ, সাখাওয়াত হোসেন, মাসুদ রানা মাসুম, ইব্রাহিম খলিল, মাশরুর মাহমুদ শাকের।
সিনিয়র মুখ্য সংগঠক জুনায়েদ মাসুদ ও সংগঠক ওমর ফারুক শ্রাবণ, আতিকুর রহমান, রাকিব হোসেইন তুষার, তুষার আহমেদ সিয়াম, মো. রাকিবুল হাসান, মেহেদী হাসান ও সহ-মুখপাত্র সিয়াম হোসাইন।
এ ছাড়া সদস্য হিসেবে আছেন পূজা মদক, তাফহিম রাফি, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ কায়েপ, বায়েজিদ হোসেইন, মো. রাজিব হোসেইন, মমিতা রাণী সূত্রধর, ফারজানা আক্তার, আব্দুর রহমান, মোহাম্মাদ নাহিদ, মুজাহিদুল ইসলাম, সিদরাতুল মুনতাহা তাওহিদাল, জাকির হোসেন, সুমাইয়া আফরিন, তৈমুর রহমান, মেহরাজ হোসেন তাইমুর, মুজাহিদুল হক জিহাদ, মাহিদ হাসান ও সাজ্জাদুল ইসলাম নাঈম।