কেউ অননুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় বা ক্যাম্পাসে বা অননুমোদিত প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এর দায় ইউজিসি নেবে না।
Published : 30 Nov 2024, 12:19 AM
দেশের আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি।
এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল– ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ঢাকা), দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি।
ইউজিসির বলছে, কেউ অননুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় বা ক্যাম্পাসে বা অননুমোদিত প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এবং পরবর্তীতে কোনো আইনগত সমস্যা সৃষ্টি হলে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হলে এর দায় ইউজিসি নেবে না।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত পরিচালক মো. মুহিবুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এর মধ্যে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্বই নেই। কতগুলোতে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই।
"কয়েকটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশনা আছে। এর মধ্যে এমন বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির বিষয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।"
ইউজিসির বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, অবৈধ ক্যাম্পাস ও অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এবং দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা।
এছাড়া নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাসহ সব কার্যক্রম স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় ইউজিসি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রেখেছে।
আর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠনে জটিলতা ও মামলা থাকায় রাজধানীর সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে।
মামলা, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা, ইউজিসির শর্ত পূরণ না হওয়াসহ নানা কারণে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, কুইন্স ইউনিভার্সিটির নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে।
বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১৫টি। এর মধ্যে ১০৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আর রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য রয়েছেন ৭৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইবাইস ইউনিভার্সিটি
ইউজিসি বলছে, ইবাইস ইউনিভার্সিটির সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস ও ঠিকানা এবং চ্যান্সেলর তথা বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই তথা বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।
এছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আদালতে মামলা রয়েছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী ইবাইস ইউনিভার্সিটি এর অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও ফলাফল এবং প্রদত্ত একাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি
ইউজিসি জানিয়েছে, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস ও ঠিকানা এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই, অর্থাৎ বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।
ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও ফলাফল এবং অ্যাকাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা
ইউজিসির ভাষ্য, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই, বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।
ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও ইহার ফলাফল এবং অ্যাকাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাসহ সকল কার্যক্রম স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় কমিশন ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রেখেছে। তা এখনও বহাল রয়েছে। তবে ওই তারিখের আগে চলমান কোর্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলবে।
সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ঢাকা)
সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বা চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগকৃত ভাইস চ্যান্সেলর নেই। এখনও ট্রেজারার নিয়োগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত অডিট ফার্ম দ্বারা অডিট করা হয়নি। এছাড়া, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন সংক্রান্ত জটিলতা, পারস্পারিক দ্বন্দ্ব ও মামলা চলমান রয়েছে।
এসব কারণে কমিশন গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সকল প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রেখেছে। তা এখনও বহাল রয়েছে। তবে ওই তারিখের আগে থেকে চলমান কোর্সে ভর্তি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
ইউজিসি বলছে, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের নামে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়
ইউজিসি জানিয়েছে, আদালত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সব আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। একই সাথে দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে।
কুইন্স ইউনিভার্সিটি
ইউজিসির ভাষ্য, ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর কুইন্স ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে দেয় সরকার। পরে শর্ত সাপেক্ষে ওই নির্দেশ এক বছরের জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
শর্তটি হলো, এক বছরের মধ্যে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্পিত শিক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত সকল শর্ত পূরণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি সকল শর্ত পূরণ করতে সক্ষম না হয়, তবে শিক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত এই সাময়িক অনুমতি তাৎক্ষণিক বাতিল হবে। শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুইন্স ইউনিভার্সিটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাসে এবং অনুমোদিত প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার জন্য ইউজিসির ওয়েবসাইট (www.ugc.gov.bd) থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।