এ ধরনের ঘটনার দায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপরও বর্তায় বলে ছাত্রলীগ সভাপতি মনে করেন।
Published : 26 Feb 2023, 05:37 PM
র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন এবং যৌন হয়রানির মত ঘটনার দায় ‘শুধু ছাত্র সংগঠনগুলোর নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও এর দায় নিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “র্যাগিং ও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটবে, আর ছাত্ররাজনীতির উপর দায় চাপিয়ে দেওয়া হবে, তা হতে পারে না। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হল প্রশাসনকে এর দায় নিতে হবে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে “
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে রোববার সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালায় ছাত্রলীগ। রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে পদযাত্রা শুরু করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা; এ সময় তারা র্যাগিং ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু-ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ হয়।
সচেতনতামূলক সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বছরের একটি দিন ‘র্যাগিং, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ও বুলিং প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
সাদ্দাম বলেন, “র্যাগিং ও সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের জন্য যেসব সমস্যা হচ্ছে- তা রোধে সচেতনতামূলক সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানাব যে, আপনারা বছরের একটি দিন ঠিক করুন যে দিনটিকে ছাত্রসমাজ র্যাগিং ও সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করবে।
“আমরা মনে করি একটি দিনকে যদি সচেতনতামূলক প্রতিরোধ দিবস হিসেবে বেছে নিতে পারি, তাহলে সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ আরও বেশি উন্নত হবে, সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনেক উন্নত হবে।”
গত ১২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের অতিথি কক্ষে চার ঘণ্টা আটকে রেখে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত ওই কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর অভিযোগ।
এর প্রেক্ষাপটে এই র্যাগিং ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের এই সচেতনতামূলক প্রচারভিযান হল।
ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্মান্তিক ঘটনা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের হৃদয় ছুঁয়েছে। পাবনা থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ওই ছাত্রী যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করার জন্য যে অদম্য স্পৃহা দেখিয়েছে- এর জন্য বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামালের সত্যিকার উত্তরসূরী হিসেবে মনে করি তাকে।
“আমরা মনে করি, ওই শিক্ষার্থী (নাম উহ্য রাখা হয়েছে) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিবাদের নাম। তিনি (শিক্ষার্থী) ন্যায় বিচারের প্রতীকের নাম। আজকের যে র্যাগিং-যৌন হয়রানি বিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছে, তার প্রতীক হচ্ছেন তিনি। তাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা অভিবাদন জানাই, স্যালুট জানাই।”
এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আশ্বাসও দিয়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে চাই, র্যাগিং একটি ক্রিমিনাল অফেন্স। এটি যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিরোধী অপরাধ, একই সঙ্গে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
“একজন শিক্ষার্থীকে র্যাগিং, বুলিং কিংবা যৌন হয়রানি করার অধিকার আপনাদের নেই। আপনি যখন এগুলো করছেন, তখন আপনি ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত একজন মানুষ। আমরা চাই র্যাগিংকে কেন্দ্র করে সকল ছাত্র সংগঠন জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শন করব। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন সমাবেশে বলেন, “হাই কোর্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যান্টি-হ্যারেসমেন্ট, র্যাগিং সেল গঠন করতে হবে। আমরা বলতে চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে প্রশাসন রয়েছে আপনারা অ্যান্টি-হ্যারাসমেন্ট সেল ও র্যাগিং সেল গঠন করুন।
“আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিভুক্ত যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের প্রশাসনের প্রতি আলটিমেটাম দিতে চাই, আপনারা অতিদ্রুত অ্যান্টি-হ্যারাসমেন্ট সেল ও এন্টি র্যাগিং সেল গঠন করুন। যদি এটি করা না হয় তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে৷”
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ঢাকার বিভিন্ন কলেজ বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।