উপাচার্যের কাছে এ নিয়ে আর্জি জানিয়েছেন তারা।
Published : 01 Apr 2024, 08:13 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে যে আদেশ হাই কোর্ট দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়তে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুরে আদালতের আদেশের পর বিকেলে বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ আহ্বান করেন তারা।
তিনজন শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। তারা নিজেদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাই কোর্ট। আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি।
"আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি, তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা, তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন।"
বিচার বিভাগের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখব, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার যে দাবি, তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল।
"যে ছাত্ররাজনীতি র্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে, তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ০৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭ এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।"
বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।
এর পর থেকে গত সাড়ে চার বছর প্রকৌশল শিক্ষার এই বিদ্যাপীঠে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধই ছিল। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। পরে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
এরপর রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
এর মধ্যে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ। রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে তারা অবিলম্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালুর অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায়। পরে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী।
এদিকে ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সোমবার হাই কোর্টে রিট মামলা করেন হল থেকে বহিষ্কৃত ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বী। তার আবেদনের শুনানি করেই বুয়েটের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, “কোর্ট যেটা বলবে আমাদের সেটা মানতে হবে। কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। আদালত অবমাননা আমরা করতে পারব না।“
এদিকে ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সোমবার হাই কোর্টে রিট মামলা করেন হল থেকে বহিষ্কৃত ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বী। তার আবেদনের শুনানি করেই বুয়েটের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ।
অন্যদিকে বুয়েটে ‘আন্দোলনের নামে অচলাবস্থা সৃষ্টি’ করার অভিযোগে ‘শিবির, হিজবুত তাহেরিসহ উগ্র মৌলবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে’ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সভাপতি ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুস সবুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী উগ্র মৌলবাদীদের মাধ্যমে এ পবিত্র ক্যাম্পাসকে ধীরে ধীরে মৌলবাদীদের আস্তানায় পরিণত করার চক্রান্তে লিপ্ত। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গত ২৮ মার্চ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অধিকারকে ভুলণ্ঠিত করে একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্ব দানকারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সরাসরি অভিযুক্ত করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়। আমরা বুয়েট ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতা-কর্মীরা, বুয়েটের এই অসহনীয় দমবন্ধ অবস্থার উত্তরণ চাই।”
সেই প্রসঙ্গ ধরে বিকালে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের এই আন্দোলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বিভিন্ন অপপ্রচার এবং মিডিয়াতে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ’ প্রচার হচ্ছে।
“ছাত্র রাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি। দেশ এবং বিদেশের নানাপ্রাপ্ত হতে আমাদের বুয়েটের অ্যালামনাইরাও আমাদের ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার মতামতের সাথে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সোশাল মিডিয়ায় নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা আমাদের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন।"
শিক্ষকদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা এবং আস্থা রাখি। তারা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি, এবং কখনোই চাইবেনও না। তারা সবসময়ই আমাদের সকল শিক্ষার্থীর পক্ষেই ছিলেন।
"আজ এই প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বুয়েটের সকল শিক্ষকের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, তারা যাতে এমন সংকটের মুহূর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।"