মেয়েদের উত্যক্ত করার মতো গুরুতর অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ।
Published : 05 Nov 2024, 05:46 PM
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ইসলামি মহাসম্মেলনে’ অংশ নিতে আসা মানুষদের মধ্যে অনেকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেচ্ছ আনাগোনায় রীতিমত বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বহিরাগত কিছু মানুষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নিজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা এবং আবাসিক হলে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। মেয়েদের উত্যক্ত করার মতো গুরুতর অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ।
এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের ‘ওয়াশরুমে প্রবেশ’ ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যত্রতত্র ‘মূত্র বিসর্জনেরও’ মতো বিব্রতকর অভিযোগ নিয়ে প্রক্টরের অফিসে ভিড় করেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দীতে ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলনে’ সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস ও ট্রাক ভরে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ লোকজন সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
সম্মেলনে আসা মানুষের ঢলের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে লাখো মানুষের জমায়েতের চাপ পড়ে বাইরের সড়কগুলোতেও। প্রেস ক্লাব, মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ হয়ে সায়েন্সল্যাব এবং শাহবাগ থেকে বাংলামোটর দিকের সড়কের পেরিয়ে এই বাড়তি জটলার প্রভাব পড়ে সারা ঢাকাজুড়ে।
সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সম্মেলন চলার পুরোটা সময়ই ক্যাম্পাস এলাকায় সমাবেশের মানুষদের ভিড় দেখা গেছে।
এই পুরোটা সময়ে সম্মেলনে যোগ দিতে আসা লোকজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে, জায়গায় জায়গায় জটলা করতে এমনকি ক্যাম্পাসের ভেতরে বিভিন্ন দেয়ালের পাশে ‘মুত্রত্যাগ’ করতে গেছে। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে আতর-টুপি বেচাকেনার দৃশ্যও দেখা গেছে।
বহিরাগতদের এসব কর্মকাণ্ডের ছবি ফেইসবুকে শেয়ার করে ক্ষোভও জানিয়েছেন অনেকে।
তাদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদেরকে সকাল থেকেই অভিযোগ নিয়ে আসতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে।
সেখানে অভিযোগ নিয়ে আসা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ক্লাস করতে যাচ্ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে আসা একদল লোক আমাকে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। তাই আমি অভিযোগ নিয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে এসেছি।”
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ফটকে দায়িত্বরত কর্মচারী আলতাফ হোসেন নুরু বলেন, “সকাল থেকে অনেকেই ওয়াশরুম ব্যাবহার করেছে। মসজিদে প্রবেশের উদ্দেশে হলে ঢুকলেও ছাত্রদের আপত্তিতে বহিরাগতদেরকে অন্য ব্যবস্থা দেখিয়ে হলে পরে আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”
কবি সুফিয়া কামাল হলের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহজাবিন লিয়া নিজ হলের সামনেই ‘মন্দ স্পর্শের’ শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেও ভয় পেতে হয়, ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় কি না। অনেকে 'শাহবাগী' বলে খোঁচা দিতে পারে। তবে শুধু আমার সাথেই এমন হয়নি। অনেকের সাথেই আজ এমনটি হয়েছে বলে জেনেছি।”
তিনি বলেন, “আমি টিউশনি করতে হলের বাইরে বেরিয়ে ছিলাম। সেখানে একদল লোক সমাবেশে যেতে আমাদের হলের সামনে উপস্থিত ছিল। একজন দ্রুত এসে আমাকে বাম পাশ থেকে ধাক্কা দিয়ে চলে যান। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই এমনটা করেছে বলে আমার মনে হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জিকরা জিকু ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “ঢাবিকে হিসুখানা না বানাইলেও পারতেন!”
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’ নামের একটি ফেইসবুক পেইজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে আসা লোকজনের মূত্রত্যাগের ছবি দিয়ে লিখেছেন “বাদ গেল না নজরুলের সমাধীর মসজিদের পাশ, না সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, না মেয়েদের হলের দেয়াল, না থিয়েটার ডিপার্টমেন্ট এর সাইডটা, না গেল টিএসসির সাইড।”
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসেছে। নারী শিক্ষার্থীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে, ছেলেরাও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের দিকে আসা-যাওয়া করতে সমস্যায় পড়েছে।”
ক্যাম্পাসে আসা বহিরাগতদের নিয়ে প্রক্টরের ভাষ্য, “তারা খুবই খারাপ কাজ করেছে।”
মাইকিং করে ক্যাম্পাস থেকে বহিরাগতদের সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে প্রক্টর বলেছেন, ডিএমপির সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “মহাসমাবেশ আয়োজনকারীদের কয়েকজন আমাকে জানিয়েছিলেন তারা বিশ হাজার মানুষ নিয়ে সমাবেশ করবেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তারা ক্যাম্পাসে গাড়ি রাখতে চেয়েছিলেন, তবে আমি অনুমতি দেইনি।
“সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মানুষজন আমাদের ক্যাম্পাসে এসেছে। তাদের ওপর বল প্রয়োগ করার মতো ম্যাকানিজম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। উপাচার্য দেশে আসলে আমি ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দেব, বলব এরপর থেকে কোনো সমাবেশের অনুমতি আপনি একা দেবেন না। আমাদের সাথে আলোচনা করে দিতে হবে।”
শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নেব।”