অবন্তিকার আত্মহত্যা: দ্বীন ইসলামের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তথ্য চায় তদন্ত কমিটি

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি সোমবার দ্বিতীয় বৈঠক করেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2024, 12:10 PM
Updated : 18 March 2024, 12:10 PM

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কারো কাছে কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকলে তা আগামী দুই দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার অনুরোধ করেছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি সোমবার দ্বিতীয়বার বৈঠকে বসে। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য সচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার অ্যাডভোকেট রঞ্জন কুমার দাসের স্বাক্ষরে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন পেশ করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

“সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রকৃত ঘটনার বিষয়ে তথ্য ও উপযুক্ত প্রমাণাদি প্রয়োজন। কারো নিকট কোনো তথ্য ও উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে তা আগামী ২০ মার্চের মধ্যে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেনের নিকট জমা প্রদান করে তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।“

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তের গতি কোন পথে এগিয়ে নেওয়া হবে সে বিষয়ে আলোচনা করতে এই কমিটি প্রথম সভা করে রোববার। সভা শেষে বলা হয়েছিল, কাজের গতিপথ ঠিক করতে আরো তিন-চারটি বৈঠক করতে চায় কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক এক করে ডেকে কথাও বলবেন কমিটির সদস্যরা। আর সেজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।  

গত ১৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকার বাসায় আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। এর আগে নিজের ফেইসবুক আইডিতে তার এমন মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন দুইজনকে। তারা হলেন-সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।

আম্মান তাকে অনলাইন ও অফলাইনে ‘হুমকির ওপর রাখতেন’ এবং সহকারী প্রক্টরকে অভিযোগ দেওয়ার পর তিনিও ‘হুমকি ধমকি দিয়েছেন’–এমন অভিযোগের কথা লিখে ওই তরুণী।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবন্তিকার সহপাঠী ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অবন্তিকা যাদের কারণে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সোমবারও ক্যাম্পাসে  মানববন্ধন করেন।  

অবন্তিকার মৃত্যুর পর শনিবার সকালে রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে বহিষ্কার ও দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের পদ থেকে দ্বীনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ওই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাসকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়।

কমিটির বাকি ৩ সদস্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবুল হোসেন এবং সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুমুর আহমেদ।

শনিবার রাতে আম্মান ও দ্বীনকে আসামি করে কুমিল্লা কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। 

রাতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার তাদের কুমিল্লার আমলি আদালতে হাজির করা হলে আম্মানকে দুদিন এবং দ্বীন ইসলামকে একদিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

আরও পড়ুন:

Also Read: অবন্তিকার আত্মহত্যা: আম্মান ও দ্বীন রিমান্ডে

Also Read: অবন্তিকার আত্মহত্যা: যেভাবে এগোচ্ছে তদন্ত কমিটি

Also Read: ‘আর কোনো অবন্তিকা যেন এভাবে ঝরে না পড়ে’