গভর্নিং বডির সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান ও অন্যদের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা।
Published : 06 Feb 2023, 06:03 PM
আগের ঘোষণা অনুযায়ী গভর্নিং বডির অপসারণ দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছেন ধানমণ্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকরা; তাদের সমর্থন জানিয়ে কর্মবিরতিতে নেমেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও একাংশ।
সোমবার ক্লাসসহ অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষকদের একটি অংশ কলেজের শহীদ মিনারের সামনে সামিয়ানা টানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ‘একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন’ এর ব্যানার টানিয়ে সেখানে তারা বক্তব্যও দেন।
এর আগে গত রোববার ধানমণ্ডির কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান ও অনান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করে অনাস্থা প্রকাশ করেন। তারা বডির অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন।
এর অংশ হিসেবে সোমবার তারা আন্দোলন শুরু করেন। কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম, জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হুদা, ইংরেজি বিভাগের সেগুফতা ইসলাম, সিএসই বিভাগের প্রভাষক মারুফ নেওয়াজসহ প্রায় ৭০ জন শিক্ষক দৈনন্দিন শিক্ষা কার্যক্রমে যোগ না দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলনে অংশ নেন।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি, যতক্ষণ পর্যন্ত গভর্নিং বডির সভাপতি ও তাদের ‘দোসররা’ পদত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত কলেজে কোনো ক্লাস বা শিক্ষা কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকেও কলেজ প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সিএসই বিভাগের প্রভাষক মারুফ নেওয়াজ বলেন, “আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের এ কর্মসূচি চলতে থাকবে। সমস্যা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সহযোগিতা পাব বলে আমাদের বিশ্বাস। যারা অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এমনটা প্রত্যাশা করি।”
ক্লাস বর্জনে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সমস্যা তো কিছু থাকবেই। আমরা শিক্ষক, আমরা তো অভিভাবকও। আমরা চাই দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক, দ্রুত ক্লাসে ফিরতে চাই। তবে তা একটি সমাধানের মধ্যে দিয়ে হতে হবে। দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে এমন কর্মসূচি আসত না।”
ধানমণ্ডি এলাকায় স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত আইডিয়াল কলেজে বর্তমানে এইচএসসি পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক পর্যায়ের আটটি বিষয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
গভর্নিং বডির অপসারণ দাবিতে ধানমণ্ডি আইডিয়ালে শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
এর আগে রোববার সংবাদ সম্মেলনে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি, কিছু সদস্য, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
আইডিয়াল কলেজের ‘সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাদের অভিযোগের বড় অংশ কলেজ পরিচালনা পরিষদের (গভর্নিং বডি) বর্তমান সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমানের বিরুদ্ধে; যিনি বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য।
লিখিত বক্তব্যে আন্দোলনকারীরা গভর্নিং বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষমতার বাইরে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘উচ্চস্বরে বকাঝকা করা, চাকুরিচ্যুতি, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ আনেন। পাশাপাশি নিয়ম ভেঙে ১৪ বছর ধরে গভর্নিং বডির সভাপতি পদে রেজাউরের থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
এছাড়া উপাধ্যক্ষের নেতৃত্বে কমিটি করে বিনা রশিদে, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের ইউনিফর্ম ও জুতা সরবরাহ করে মুনাফা হিসাবে প্রাপ্ত ৭০-৮০ লাখ টাকা গভর্নিং বডির কিছু সদস্য ও শিক্ষকের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
রোববার এসব অভিযোগ মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে গভর্নিং বডির সভাপতি আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তিনজন শিক্ষক, যাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের আমরাই বরখাস্ত করেছি, গভর্নিং বডিই করেছে, তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষক) এসবের সাথে আমাকে বা বডিকে জড়িয়ে যেসব বক্তব্য দিচ্ছে- সেগুলো তাদের মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য।"
ইউনিফর্মের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি 'জানা নাই' বলে মন্তব্য করেন তিনি।