গভর্নিং বডির অপসারণ দাবিতে ধানমণ্ডি আইডিয়ালে শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2023, 11:50 AM
Updated : 5 Feb 2023, 11:50 AM

গভর্নিং বডির সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান ও কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাদের অপসারণের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষাসহ যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ধানমণ্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ।  

বর্তমান গভর্নিং বডির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তা বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

রোববার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন শিক্ষকরা। এসময় তারা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকেও কলেজে প্রবেশে নিষেধ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা বর্তমান গভর্নিং বডির সদস্যদের পদত্যাগের আহ্বান জানান এবং তাদের অধীনে কোনো কার্যক্রম না চালানোর ঘোষণা দেন। 

শিক্ষকদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মনিরুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সেগুফতা ইসলাম, জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নাজমুল হুদা, সিএসই বিভাগের শিক্ষক মারুফ নেওয়াজসহ কয়েকজন।

গভর্নিং বডির সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ক্ষমতাসীন  আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন  সদস্য।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষক ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘মনগড়া’ বক্তব্য দিচ্ছেন।

আইডিয়াল কলেজের ‘সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “কলেজ পরিচালনা পরিষদের (গভর্নিং বডি) বর্তমান সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর যাবত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি পদে দুই মেয়াদে দুই বছর করে সর্বোচ্চ চার বছর দায়িত্ব পালন করা যায়। সভাপতি বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় গভর্নিং বডির সভায় কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্তে তার মতের বিরুদ্ধাচরণ করার সাহস কেউ দেখান না, অর্থাৎ অন্য সদস্যদের মতামত খুব বেশি প্রাধান্য পায় না।”

বক্তব্যে বলা হয়, “কলেজ গভর্নিং বডি ২০১৬-২০১৭ সালে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি জনাব জসীম উদ্দিন আহম্মেদকে পূর্ববর্তী দুই কলেজে অন্যায়-অনিয়মের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়। একইরকমভাবে, ২০১৫ সালে কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে জনাব মো. মজিবুর রহমানকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি বিভিন্ন কমিটির আহ্বায়ক থেকে অনেক আর্থিক দুর্নীতির সাথে নিজেকে জড়িয়েছেন এবং গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যদের কাছে বিশেষ আস্থাভাজন হয়েছেন।”

“কিছুদিন আগে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী, বাংলা বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলী বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাত হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট ও আত্মসাত করে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম চরমভাবে নষ্ট করেছেন। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় কখনোই এগুলো প্রকাশিত হয়নি এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ হয়নি। গভর্নিং বডির সভাপতি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় উক্ত দুর্নীতিবাজদের রক্ষার জন্য তিনি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।”

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তারা সাময়িক বরখাস্থ হওয়ার পরে অভিযোগ তদন্তের জন্য বিধি মোতাবেক তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া, গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যদের পরামর্শ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে আইনি জটিলতায় আটকে আছে। সাময়িক বরখাস্থদের পুনর্বহাল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যা কলেজের সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেনে নেয়নি।”

গভর্নিং বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষমতার বাইরে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘উচ্চস্বরে বকাঝকা করা, চাকুরিচ্যুতি, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এছাড়া উপাধ্যক্ষের নেতৃত্বে কমিটি করে বিনা রশিদে, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের ইউনিফর্ম ও জুতা সরবরাহ করে মুনাফা হিসাবে প্রাপ্ত ৭০-৮০ লাখ টাকা গভর্নিং বডির কিছু সদস্য ও শিক্ষকের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

‘অভিযুক্ত’ শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলনে।  

ধানমণ্ডি এলাকায় স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত আইডিয়াল কলেজে বর্তমানে এইচএসসি পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য বিভাগে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক পর্যায়ের আটটি বিষয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গভর্নিং বডির সভাপতি আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তিনজন শিক্ষক, যাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের আমরাই বরখাস্ত করেছি, গভর্নিং বডিই করেছে, তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষক) এসবের সাথে আমাকে বা বডিকে জড়িয়ে যেসব বক্তব্য দিচ্ছে- সেগুলো তাদের মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য।"

উপাধ্যক্ষকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, "গভর্নিং বডি যাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করেছে, তিনি একজন সিনিয়র শিক্ষক। পাঁচজনের একজন। তিনি ভাইস প্রিন্সিপাল আছেন। কাজেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন আছে, সে আইনের মাধ্যমে যিনি পান, তাকেই দেওয়া হয়েছে।"

ইউনিফর্মের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি 'জানা নাই' বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ রেজাউর রহমান।

১৪ বছর ধরে গভর্নিং বডিতে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "গভর্নিং বডি কে হবে তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করে। কাজেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের আলোকেই গভর্নিং বডি চালিত হচ্ছে। কোথাও চার বছরের বেশি থাকা যায় না এটা আইনের কোথাও নেই।"

অভিযোগের বিষয়ে সাবেক অধ্যক্ষ জসীম উদ্দিন আহম্মেদ বা উপাধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমানের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।