“তারা অভ্যুত্থানের সময়ে গণবিরোধী কাজ করেছে, তাদেরকে বৈধতা যেন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছি,” বলেছেন সাদা দলের আহ্বায়ক মোর্শেদ হাসান।
Published : 28 Jan 2025, 08:41 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিকে ‘বৈধতা’ দেওয়ার সুযোগ নেই বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
নতুন শিক্ষক সমিতি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সমিতি বহাল রাখা ও সবকিছু এখনো তাদেরকে ‘গণ্য’ করেই যেন হয় সে অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে চিঠি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সাদা দল এ দাবি জানাল।
শিক্ষক সমিতির দেওয়া চিঠির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার সাদা দলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজের মর্যাদাহানী এবং ঐতিহ্যকে ভুলণ্ঠনকারী ফ্যাসিস্টের দোসর এ শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বের দাবিকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
“একই সাথে শিক্ষক সমিতির পরিচয় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরে অন্তর্বর্তী সরকার। ক্ষমতার পালাবদলের হাওয়া বইতে শুরু করে প্রশাসন থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পালাবদল ঘটে।
বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন চ্যানেল আই এর অনলাইন পোর্টালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে সমিতির সঙ্গে সমন্বয় করে মহান মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচি গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
সে চিঠিতে শিক্ষক সমিতি বলেছে, ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের জন্য উপাচার্য সমিতিকে বাদ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা আর কখনো হয়নি।
শিক্ষক সমিতির নির্বাচন না করতে পারার বিষয়টি তুলে ধরে তাতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘উত্তরসূরি নতুন কার্যকর পরিষদ গঠিত হওয়ার আগে পর্যন্ত চলতি পরিষদ কাজ চালিয়ে যাবে’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের নিকট চিঠি দিয়েছে যেন সবকিছু এখনো তাদেরকে গণ্য করেই হয়।
“তাদের ভাষ্য, যেহেতু এখনো নতুন শিক্ষক সমিতি নির্বাচন হয়নি তারাই যেন এখনো সমিতি হিসেবে বহাল থাকে।
“তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সে নির্বাচনে শুধুমাত্র নীলদলই অংশগ্রহণ করেছিল। যেহেতু তারা অভ্যুত্থানের সময়ে বিভিন্ন গণবিরোধী কাজ করেছে, তাদেরকে বৈধতা যেন না দেওয়া হয় আমরা সেই দাবি জানিয়েছি।”
সাদা দলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে নীল দল ছাড়া অন্য কোনো দল ও প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় নীল দলের প্যানেলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ‘অভ্যুত্থানবিরোধী’ অবস্থান তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সমিতি ‘স্বৈরশাসকের পক্ষে নির্লজ্জ ভূমিকা পালনের জন্য’ গত অগাস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল সমর্থক শিক্ষকরা ‘বিনা ভোটে নির্বাচিত’ তৎকালীন শিক্ষক সমিতিকে প্রত্যাখ্যান করে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও দেশ ছেড়ে তার পালিয়ে যাওয়ার ঠিক দুদিন আগে গণভবনে উপস্থিত হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন এবং ছাত্র-জনতার ‘আন্দোলন দমনে সহায়তার প্রতিশ্রুতি’ দেওয়ায় সাদা দল তৎকালীন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের বিচার দাবি করেছে।
শিক্ষক সমিতির নামে দেওয়া চিঠিতে ২০০৭ সালের দৃষ্টান্ত তুলে ধরার বিষয়ে সাদা দল বলেছে, তা দেখিয়ে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ এই শিক্ষক সমিতিকে বৈধ শিক্ষক সমিতি হিসেবে দাবি করার কোনো সুযোগ নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সেই সময় শিক্ষক সমিতির দায়িত্ব চলমান রাখা হয়েছিল শিক্ষকদের সর্বসম্মত সমর্থনের ভিত্তিতে। তাছাড়া সে সময়কার শিক্ষক সমিতির অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা কেবল শিক্ষক সমাজের কাছেই নয়, গোটা জাতির কাছে ছিল প্রশংসনীয়।
“কিন্তু বৈধ শিক্ষক সমিতি হিসেবে দাবিদার তথাকথিত এই শিক্ষক সমিতি এরই মধ্যে শিক্ষকগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ও দেশবাসী কর্তৃক নিন্দিত হয়েছে।”
শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করার পাশাাশি সাদা দল শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও সরকারে প্রতি দাবি জানিয়েছে।