“এখন মনে হয়- মানুষ টাকা পয়সা পাইছে, তাই কিনতে আসছে; এই ভিড়টা না হলে আমাদের পুরা লস হইতো,” বলেন মিরপুরের এক বিক্রয়কর্মী।
Published : 08 Apr 2024, 10:30 PM
রোজার শুরুতে ক্রেতাশূন্যতায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল জুতার যে দোকানিদের, শেষ সময়ে এসে তাদের মুখে ফুটেছে হাসি। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় না কিনে আর উপায় দেখছেন না ক্রেতারা।
এবার ঈদে আরাম ও স্টাইলকে বিবেচনা করে ক্রেতারা স্যান্ডেল ও লোফার বেশি কিনছেন বলে জানাচ্ছেন দোকানিরা।
সোমবার দুপুরে মিরপুর-১১ নম্বর জুতার মার্কেটে বেশ ভিড় চোখে পড়ে। ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে জুতা পছন্দ করছিলেন।
মাশাআল্লাহ কিং সুজের কর্ণধার রাজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম দিকে তো আমরা বসেই থাকতাম।
“ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করতাম, কিন্তু কোনো ক্রেতা ছিল না। এখন অনেক ক্রেতা আসতেছে, ভালোই বিক্রি হচ্ছে।”
দোকানটিতে ছেলেদের সব ধরনের জুতা বিক্রি হয়। সব জুতায় এবার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দাম বেড়েছে বলে জানালেন রাজা।
“সবকিছুর দামই এবার বাড়তি, খরচও বেড়েছে। তবে একারণে ক্রেতা একটু কম এবার, বিভিন্নভাবে সমন্বয় করে চলার চেষ্টা করছে। আমাদেরও তো চলতে হবে।”
দোকানটিতে লোফার পছন্দ করছিলেন এনামুল হক।
তিনি বললেন, “এই জুতাটা সব পোশাকের সাথে ব্যবহার করা যায়। পাঞ্জাবি পরলেও, শার্ট পরলেও ব্যবহার করা যাবে- এজন্যই নিতে চাচ্ছি।”
পাশের ইত্যাদি সুজে বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের স্যান্ডেল, সু, হিল; ছেলেদের স্যান্ডেল, লোফার ও ক্যাটস আর বাচ্চাদের বিভিন্ন জুতা।
সেখান থেকে বাচ্চার জন্য জুতা কিনে ফিরছিলেন আল আমিন হোসেন।
তিনি বলেন, “এতদিন কেনার মতো সময় ছিল না। সময়ও চলে আসছে, বাচ্চাদের তো বোঝানো যায় না। আর জুতারও যা দাম এবার!
“গত বছর এমন জুতাই ৯০০ টাকা দিয়ে নিয়েছি, এবার কিনলাম ১৪০০ টাকায়।”
মিরপুর-১০ নম্বরের হোপের গলির জুতার দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়।
নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য জুতা কিনতে এসেছেন শায়লা আহমেদ।
তিনি বলেন, “অফিস আর বাসা সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে বাকি কেনাকাটাগুলো শেষ করেছি। নতুন পোশাকের সঙ্গে তো নতুন জুতাও লাগবে, একটু মেলানোর ব্যপারও আছে- তাই পরে আসা এখানে।
“আর স্যালারির অপেক্ষাও করছিলাম, কারণ আমাদের সবকিছু বাজেট করে চলতে হয়।”
সেখানকার এক দোকানের বিক্রয়কর্মী আরিফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমন ভিড় এক সপ্তাহ আগেও ছিল না এখানে।
“গত শুক্রবার থেকে বিক্রি বাড়তে শুরু করছে। এখন মনে হয়- মানুষ টাকা পয়সা পাইছে, তাই কিনতে আসছে। এই ভিড়টা না হলে আমাদের পুরা লস হইতো। কারণ এবার ঈদ বাজার জমে নাই একদম।”
দোকানটিতে বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের স্যান্ডেল, হিল, হাই হিল, স্লিপার, শুসহ বিভিন্ন ধরনের জুতা।
এই ঈদে কোন ধরনের জুতা বেশি চলছে, এ প্রশ্নের উত্তরে আরিফ বলেন, “গরমের সময় তো একারণে মানুষ বেশি স্যান্ডেল, স্লিপার জাতীয় জুতা নিচ্ছে। হিল, শু- এগুলা নিচ্ছে কম।
“কিন্তু ঠান্ডা থাকলে আবার এগুলার চাহিদাই থাকত বেশি।”
হোপের গলিতে দামাদামি করছিলেন সুরাইয়া আক্তার।
তিনি বললেন, “এতদিন অন্য কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তাই জুতার দোকানের দিকে আসা হয়নি। সেগুলো শেষ করে চলে আসলাম জুতা কিনতে।”
পাশের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের স্যান্ডেল, হিল, হাইহিল, স্লিপার, শু, ফ্ল্যাট জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের জুতা।
বিক্রেতা আমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এখানে মোটামুটি অল্প টাকায় জিনিস পাওয়া যায়; একারণে একসময় না একসময় ঈদের কেনাকাটা করতে মানুষ এখানে আসবেই।
“ধরেন যে জুতা এখান থেকে ২০০ টাকায় কিনতে পারবেন, সেটা অন্য জায়গায় কিনতে গেলে ৪০০ টাকা লাগবে।”
হোপের গলি থেকে জুতা কিনে বাড়ি ফিরছিলেন হাফসা সুলতানা। তিনি বলেন, আগের তুলনায় এবার জুতার দাম বেড়েছে অন্তত ১০০ টাকা।
“নতুন কালেকশনও তেমন চোখে পড়েনি। তবে এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো জুতা পাওয়া যায়, সেকারণেই এখানে আসা হয়। আর আমি এবার স্লিপার জুতা কিনেছি, গরমের মধ্যে স্লিপার জুতা পরতে আরামদায়ক হয়। তাছাড়া সব সময় পরার জন্য মানানসইও।”
অভিজাত বিপণিবিতানে ভিন্ন চিত্র
রোজার শুরু থেকেই বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কের জুতার দোকানে চোখে পড়ার মতো ক্রেতা সমাগম ছিল।
সেখানকার দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের এবার পছন্দ স্যান্ডেল ও লোফার জুতা। তবে কেউ কেউ আবার হিলও কিনেছেন।
তারা বলছেন, গরমের কারণেই তাদেরকে এবার আরামদায়ক জুতা খুঁজতে হচ্ছে।
বসুন্ধরা সিটিতে বাটার শোরুমে পাওয়া যায় জায়মা জাহিদকে।
তিনি বলেন, “কমফোর্ট আর গরমের বিষয়টা মাথায় রেখে দুই ফিতার ফ্ল্যাট জুতা কিনেছি; যাতে সবসময় পরা যায়।”
বাটা এবার জুতার এক হাজারেরও বেশি নতুন সংগ্রহ নিয়ে এসেছে। বাটাতে ছেলেদের জুতা ৪৯৯ টাকা থেকে শুরু করে ১৬ হাজার ৯৯৯ টাকা; মেয়েদের জুতা ৪৯৯ টাকা থেকে ৫ হাজার ৯৯৯ টাকা এবং বাচ্চাদের জুতা ৪৯৯ টাকা থেকে ৩ হাজার ৯৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাটার বিক্রয়কর্মী তারিক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব ধরনের প্রোডাক্টই আনা হয়েছে। স্যান্ডেল, সু, হিল- সেখান থেকে কাস্টমার যেটা চায়, সেটাই নিতে পারবে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে স্যান্ডেল।”