নতুন এমওইউতে উভয় দেশ সরাসরি তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ অর্থাৎ ‘ফিফথ ফ্রিডম’ পাবে।
Published : 23 Aug 2023, 11:35 PM
সৌদি আরবের যেকোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন থেকে ফ্লাইট চালাতে পারবে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্স; তবে এজন্য আগে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।
বুধবার ঢাকায় এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির শুধু চার গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর।
এছাড়া সমঝোতার আওতায় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে যাত্রী ও কার্গোবাহী উড়োজাহাজের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো এবং উভয় দেশ সরাসরি তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে; যাকে এভিয়েশনের পরিভাষায় ‘ফিফথ ফ্রিডম’ অধিকার বলা হয়। যাত্রী পরিবহনে 'ফিফথ ফ্রিডম' এখনও সম্মত হয়নি উভয় দেশ।
এদিন সচিবালয়ে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সৌদি আরবের সঙ্গে এমওইউতে সই করেন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং সৌদি জেনারেল অথরিটি অব সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আব্দুল আজিজ আল দুয়াইলেজ।
এসময় সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী ড. তৌফিক বিন ফাজওয়ান আল রাবিয়াহ উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে ২০১২ সালে সম্পাদিত আগের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম ও মদিনা-এ চার বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে।
বাংলাদেশের প্রবাসী জনশক্তির মধ্যে বড় অংশ সৌদি আরবে নিয়োজিত। সেখানে ৩০ লাখের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। হজ ও ওমরাহ করতেও প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি দেশটিতে যান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে উড়োজাহাজের চলাচলের দ্বিপক্ষীয় এ সমঝোতার ফলে বাংলাদেশ থেকে যাত্রী ও পণ্যবাহী উড়োজাহাজ চলাচল আগের চেয়ে অনেক বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে অন্য দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলো।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে যাত্রী ও কার্গো মিলিয়ে মোট ৪৯টি ফ্লাইট ‘ফ্রিকোয়েন্সি’ রয়েছে। নতুন এমওইউতে তা বাড়িয়ে শুধু যাত্রী ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ৪৯টি ফ্রিকোয়েন্সি এবং নতুন করে কার্গোর বেলায় ২১টি ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
আর কার্গোবাহী ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রে চারটি মধ্যবর্তী ও দূরবর্তী পয়েন্টে ‘ফিফথ ফ্রিডম’ সুবিধা পাবে দুই পক্ষই। এতে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো সৌদি আরব থেকে তৃতীয় কোনো দেশে কার্গো পরিবহন করতে পারবে। এ চারটি পয়েন্ট পরে নির্ধারণ করা হবে।
তবে সৌদি আরবে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস বাংলা ছাড়া বাংলাদেশি অন্য কোনো এয়ারলাইন্সের কার্গো উড়োজাহাজ নেই।
অপরদিকে সৌদি আরবের উড়োজাহাজ পরিবহন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ অর্থাৎ ‘ফিফথ ফ্রিডম’ অধিকার পাবে।
এর আগে গত ১৫ ও ১৬ মে ঢাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুই দিনের বৈঠক শেষ হয় বড় কোনো অগ্রগতি ছাড়াই।
আমিরাতের উড়োজাহাজ পরিবহন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ফ্লাইট বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রী ও কার্গো ফ্লাইটের জন্য ‘ফিফথ ফ্রিডম’ অধিকার চেয়েছিল। কিন্তু তাতে সায় দেয়নি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এমওইউ সই অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় দেশের অ্যাভিয়েশন শিল্প বিকশিত হয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হচ্ছে। গত সাড়ে ১৪ বছরে সারাদেশে উড়োজাহাজ পরিবহন অবকাঠামোর যুগোপযোগী উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, যাত্রীসেবা বৃদ্ধি, কারিগরি ও জন দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের এভিয়েশন খাত উন্নত হয়েছে।
পর্যটন খাতে সৌদি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পর্যটনের পরিকল্পিত উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহমন্ত্রী তৌফিক বিন ফাজওয়ান আল রাবিয়াহ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের বন্ধুত্ব অত্যন্ত দৃঢ়। সৌদি আরবে একটি বড় বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে, যারা দুই দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। নতুন সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বিমান চলাচলের সংখ্যা বাড়ায় দুই দেশই এর সুফল পাবে।
তিনি বলেন, আন্তরিক আতিথেয়তা এবং চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশের পর্যটনের বিকশিত হওয়ার বড় সুযোগ রয়েছে। যেকোনো পর্যটক বাংলাদেশের আতিথেয়তাকে আজীবন মনে রাখবে। সৌদি আরব ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটনের উন্নয়নে সহায়তা করবে।
এসময় ঢাকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুলাইহান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন