বছরের শুরুতে কাঁচামরিচের ঝাঁজ, ডিম-সবজির স্বস্তিও উধাও

বাজারে ক্রেতাদের কাছে বড় ধাক্কা হিসেবে এসেছে কাঁচামরিচের দাম; তবে ভোজ্যতেল, চিনি ও চালের দামে পরিবর্তন দেখা যায়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Published : 13 Jan 2023, 02:59 PM
Updated : 13 Jan 2023, 02:59 PM

বাজারদরের আলোচনায় আবার উঠে এসেছে ডিমের দাম; বছরের শেষ দুই মাসে কমে আসলেও নতুন বছরে আবার বাড়তে শুরু করেছে খাদ্যতালিকায় নিয়মিত থাকা এ পণ্যের দাম।

খুচরা বাজারে হুট করে কয়েক দিনের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা উঠেছে।

আবার বাজার ভরপুর থাকা শীতের সবজি কিছু দিন কিছুটা স্বস্তি দিলেও তা উবে যেতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে সবজিভেদে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা।

এরমধ্যে শুক্রবার বাজারে ক্রেতাদের কাছে বড় ধাক্কা হিসেবে এসেছে কাঁচামরিচের দাম; হুট করে বড়সড় ঊর্ধ্ব লাফ দিয়েছে এটি। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৪০-৫০ থেকে বেড়ে ১১০-১২০ টাকায় চড়ে যাওয়ায় ঝাঁজ বেড়েছে মরিচের। দাম বেড়েছে আদারও।

তবে এদিন ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ভোজ্যতেল, চিনি ও চালের দামে পরিবর্তন দেখা যায়নি।

সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতাদের কেউ কেউ দেশজুড়ে তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে মাঠ থেকে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কমে আসার কথা বলছেন।

আবার কেউ কেউ বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অনেক চালানই এখন বিশ্ব ইজতেমামুখী। বিশেষ করে কাঁচামরিচের বড় চালান গেছে সেদিকে। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে।

এসব কারণে বছরের শুরুতেই আবার কাঁচাবাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বাজারে আসা ক্রেতারা।

মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা তরুণ মনজুর হোসেন বলে, “আগে যেগুলো বেড়ে বসে আছে সেগুলো তো আর কমার নাম নাই। সবজির বাজারেই কেবল কমতে দেখেছিলাম, সেটাও এখন বেড়ে গেছে।

এদিন ঢাকার বড় বাজারগুলোতে ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হতে দেখা গেছে ১২০ টাকায়। গলির দোকানগুলোতে তা ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। গত সপ্তাহে যা ছিল ১১০ টাকা।

মহাখালী এলাকার দোকানি কামাল হোসেন পাইকারি থেকে খুচরা বিক্রির জন্য একশত ডিম কিনেছেন ১০০০ টাকায়। এ দোকানি বলেন, “পাইকারিতে প্রতি একশ ডিমে ৮০-১০০ টাকা দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।“

ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উৎপাদন পর্যায়ে একটি ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা, সেখানে এতদিন ধরে ১০-১১ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছিল। ফলে খামারিরা লস দিচ্ছিল। উৎপাদনে দাম বাড়ার ফলেই পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বাড়ছে।“

এদিকে বাজারে ‘সরবরাহ কম থাকায়’ বেড়েছে সবজির দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি গড়ে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে শীতের সবজির দাম।

বাজারঘুরে দেখা গেছে, এক পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপির দাম পড়ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পটল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিমের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে এবং শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে চাল কুমড়া ও লাউয়ের। চাল কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং লাউ আকারভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফুলকপি, বেগুন, লাউয়ের দাম বাড়ছে। বেগুন আগের সপ্তাহে ৪০ আছিল এখন ৬০। মানুষ শীতের কারণে ক্ষেতে যাইতে পারে নাই। আড়তে সবজি কম, দাম বেশি।“

Also Read: চিনি নিয়ে অস্বস্তি এখনও কাটেনি

Also Read: জীবনযাত্রায় বছরজুড়েই গুনতে হল চড়া দাম

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহামিন বলছেন, “কাঁচামরিচের দাম দ্বিগুণ বাড়ছে। সব মাল ইজতেমায় চইলা গেছে। ইজতেমা শেষে বাজার ঠিক হইয়া যাইব। “

খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম আগের মতই ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বেড়ে গেছে আমদানি করা আদার দাম। ১৭০-১৮০ টাকা বিক্রি হওয়া চায়না আদা এই সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে ২৪০ টাকায়। দেশি আদার দামও খানিক বেড়ে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা হয়েছে।

এদিকে চিনির দাম কমার লক্ষণ নেই এখনও। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ায় দোকানিরা কেউ কেউ চিনি বিক্রি থেকেই সরে আসছেন।

মহাখালী কাঁচাবাজারের শাহরিয়ার স্টোরের ম্যানেজার বলেন, “চিনি বেচার চেয়ে না বেচা ভালো। দাম নিয়া অনেক ভেজাল।“

একইভাবে অপরিবর্তিত আছে আটা ময়দার দাম। প্রতি কেজি খোলা আটা ৬০-৬৫ টাকা এবং প্যাকেট আটা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাল, ডাল সয়াবিন তেলও স্থির গত সপ্তাহের দামে।

পরিবর্তন আসেনি আমিষের বাজারেও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি আগের মতই ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, সোনালি ২৫০ থেকে ২৬০ ও লেয়ার ২১০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ৭০০-৮০০ টাকা কেজিদরে গরুর মাংস এবং ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারেও দাম প্রায় একই আছে।