গত বছর একই সময় নতুন আলু পাওয়া গেছে ২৫ টাকা কেজি দরে। এবার সে দর ৫০ টাকা। নতুন পেঁয়াজের ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫।
Published : 15 Dec 2023, 07:37 PM
পেঁয়াজের বাজারে নাটকীয় সপ্তাহ পার করে দাম কিছুটা কমে এলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ক্রেতাদের খরচ করতে হচ্ছে দ্বিগুণ।
একই চিত্র আলুর বাজারেও। নতুন আলু এবার পুরান আলুর দাম কমাতে পারেনি। এই সবজিটিও কিনতে হচ্ছে গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় দ্বিগুণ দরে।
বছর জুড়ে রান্নার দুটি উপকরণের পাশাপাশি আলোচনায় থাকা ডিমের বাজার কিছুটা শীতল হওয়ার পর আবার গরম হচ্ছে। চড়তে শুরু করেছে মুরগির দরও।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কৃষিমার্কেট, কারওয়ানবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
ভারত রপ্তানি বন্ধ করার খবরে পেঁয়াজের দর হুট করে লাফ দিয়ে দুইশ এমনটি আড়াইশ টাকা ছুঁয়ে ফেলার পর ভোক্তারা কেনাকাটা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এবং ‘মুড়িকাটা’ নামে আগাম পেঁয়াজ চলে আসার পর দাম কমেছে। প্রতি কেজি এখন প্রকার ও মানভেদে পাওয়া যাচ্ছে ৯০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।
তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন বলছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় পেঁয়াজ মিলেছে ঢাকায়। এই দর আবার মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় ছিল কেজিতে ১০ টাকার মতো বেশি।
আলুর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দাম বেঁধে দেওয়া, ভারত থেকে আমদানি, নতুন আলু চলে আসা- কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
বছরের শেষে পুরান আলুর দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ক্রেতারা এর আগে কখনো দেখেনি। নতুন আলুর দাম বরং তার চেয়ে কম, পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকায়।
বছরের এই সময়ে নতুন আলুর কেজি ৫০ টাকাও ক্রেতাদের কাছে নতুন। বিডিনিউজের এক বছর আগের প্রতিবেদন বলছে, গত বছর রান্নার উপকরণটির দাম ছিল ২৫ টাকা।
নতুন আলু আসার পর সাধারণত পুরান আলুর দাম পড়ে যায়। কিন্তু এ বছরের আলুর বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন।
ভারত থেকে আমদানির যে অনুমতি (আইপি) কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়েছে শুক্রবার। নতুন করে আর আইপি ইস্যু করার পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ভূইয়া।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আল্লাহর দান ভাণ্ডারের দোকানি এম এ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশি আলু এখনো পরিপক্ব হয়নি, বাজারে আসতে দেরি হবে। তাই ভারতের উপর আরও কয়েকদিন নির্ভর থাকতে হবে। ভারত থেকে আলু আমদানির সময় বাড়াতে হবে। তা না হলে চাহিদার তুলনায় আলুর সংকট দেখা দেবে। দাম বাড়বে।”
এই পাইকারি দোকানে দেশি নতুন আলু ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা ও পুরান আলু ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে, রসুন বিক্রি করছেন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে, আদা ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকা আর নতুন দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
একই বাজারের আরেক পাইকারি দোকান শরীফ এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মনির মিয়া বলেন, “গত পরশুদিন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১১০ টাকায়, আজ ৯০ টাকায় নেমেছে। দাম আরও কমবে।”
গত বছর এই সময়টাতে দাম ৪০ টাকা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশি নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু করছে। তবে আলু আমদানির সময় বাড়াতে হবে।“
একই বাজারের খুচরা দোকানে নতুন আলুর দাম দেখা গেছে ৫০ আর পুরান আলু ৬০ টাকা। দেশি নতুন পেঁয়াজ খুচরায় বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা, পুরান ১৫০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১৪০ টাকা।
অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষিকা আলু কিনতে এসে দাম দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফর ডটকমকে তিনি বলেন, “নাভিশ্বাস অবস্থায় আছি। সবকিছু বেশি দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছি। না খেয়ে তো মরে যেতে পারি না। উচ্চ মূল্যের কারণে খাওয়া কমিয়েছি।”
গাড়ি চালক শিশির হৃদয় বলেন, “সংবাদে শুনি দাম কমেছে, কিন্তু বাজারে দাম কম পাই না। খুচরা বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী দাম রাখেন।”
কারওয়ানবাজারের আলু, পেঁয়াজ ও রসুনের খুচরা দোকানি আব্দুল সামাদ বলেন, “পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এটা আমাদের নিজেদের খারাপ লাগে। আমাদেরও তো অন্য সবকিছু কিনে খেতে হয়। সবকিছুর দাম বেশি।”
ডিমের বাজার ফের গরম
সেপ্টেম্বরে ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৪৪ টাকা ডজন বেঁধে দিলেও দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তবে নভেম্বরের শুরুতে ডিমের ডজন নেমে আসে ১২০ টাকার নিচে।
সুপার শপগুলো টানা কয়েক সপ্তাহ ডিম বিক্রি করেছে ১১৪ টাকা ডজন দরে। তবে মীনাবাজার ও স্বপ্ন সুপারশপে শুক্রবার ছুটির দিনের ছাড়ে ডিমের ডজন ছিল যথাক্রমে ১৩২ টাকা ও ১৩৫ টাকা।
নগরীর বিভিন্ন বাজারে হালি দেখা গেছে ৪৫ টাকা আর ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
বিক্রেতারা জানান, আগের সপ্তাহের তুলনায় মুরগির কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা করে; ডিমের দামও বেড়েছে ডজনে অন্তত ১০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি।
ডিমের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মুরগির মাংসের দামও। নভেম্বরে বিভিন্ন বিক্রেতা ঘোষণা দিয় গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকা বা তার চেয়ে কমে বিক্রি শুরু করার পর ব্রয়লার মুরগির দর ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় নেমে এসেছিল।
পরে গরুর খামারিদের একাংশ ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রির ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে দাম বাড়ে মুরগিরও। শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮৫ থেকে ২০০ টাকা দেখা গেছে।
আশানুরূপ কমেনি সবজির দাম
শীত পড়লে সবজির দাম যতটা কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, দাম ততটা কমেনি।
নতুন টমেটো ৯০ থেকে ১০০ টাকা, বড় সাইজের ফুল কপি ও বাধা কপি ৪০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের।
বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, সিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং বিচিওয়ালা সিম ১০০ টাকা কেজি দরে দরে বিক্রি হয়েছে।
গত বছরের এই সময়ে ঢাকায় সিম পাওয়া গেছে ৩০ টাকা কেজিতেও।
কারওয়ানবাজারের খুচরা বিক্রেতা জাকারিয়া হোসেন জানান, “গতকালের তুলনায় আজ বাজার একটু গরম। সাপ্তাহিক বাজার হওয়ায় চাহিদাও বেশি।”