সিরাজগঞ্জ সৌর পার্ক: ১১ টাকা দরে বিদ্যুৎ কিনতে চুক্তি

বাংলাদেশ-চীনের যৌথ এ কোম্পানি সেখানে ৬৮ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2023, 03:20 PM
Updated : 9 Jan 2023, 03:20 PM

বিদ্যুতের বহুমুখী উৎসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশীদারিত্ব বাড়াতে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পাড়ে একটি সৌর প্যানেল পার্ক নির্মাণের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে, যেখান থেকে চলতি বছরের শেষে বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা করছে সরকার।

সোমবার ঢাকায় বিদ্যুৎ ভবনে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ এ সৌর প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি (পিপিএ- পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) এবং বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ-ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট) চুক্তি করেছে সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্মসচিব নিরোদ চন্দ্র মণ্ডল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা এবং বাংলাদেশ-চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিআরইসিএল) কোম্পানি সচিব বিমল চন্দ্র রায় চুক্তিতে সই করেন।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ সৌর পার্ক থেকে ১০ দশমিক ২০ সেন্টে (ডলারের বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ১১ টাকা) প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে সরকার।

দেশে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের সঙ্গে সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিসিআরইসিএল গঠন করে সরকার।

যৌথ এ কোম্পানিতে চীনের চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন এবং বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (নওপাজিকো) বিনিয়োগ করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে যৌথ কোম্পানিটি।

সিরাজগঞ্জে যমুনার তীরে ২১৪ একর জমিতে ৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার (ডলারের বর্তমার বিনিময় হারে ৯১৮ কোটি টাকা) ব্যয়ে এ সৌর বিদ্যুৎ পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের এ প্রকল্প কোম্পানিটির প্রথম উদ্যোগ।

পাশের জেলা পাবনায় ৬৪ মেগাওয়াটের আরেকটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজও চলমান যেখান থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ আসবে, বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

এছাড়া বিসিআরইসিএলের আওতায় পায়রায় ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পসহ আরও বেশ কয়েকটি নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিকল্পনাধীন রয়েছে।

গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিসিআরইসিএল এবং কনসোর্টিয়াম অব প্যারিওশেন-ফেডি-সিনোহাইড্রো, চায়নার মধ্যে এ প্রকল্পের ইপিসি চুক্তি হয়।

নওপাজিকোর কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন, নদী তীরে বাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামোর কাজ বেশ এগিয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ এ সৌর পার্ক থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আশা করছেন তারা।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান’ অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশে সোলার প্রজেক্ট করার মত অকৃষি জমি পাওয়া দুষ্কর।

“যতটা অকৃষি জমি পাওয়া যায় তাতেই সোলার বা নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ হতে দ্রুত দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চলমান।”

সরকার দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে পেতে চাইলেও গত ১৪ বছরে সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। বর্তমানে দেশে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার কথা জানিয়েছে সরকার।

তবে ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট উৎপাদন করে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।

বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে সৌর উৎস থেকে কমবেশি আসছে অনগ্রিড ও অফগ্রিড মিলিয়ে ৭১৬ মেগাওয়াট, বায়ু বিদ্যুৎ থেকে ৩ মেগাওয়াট এবং কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসছে ২৩০ মেগাওয়াট।

সব মিলিয়ে দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুতের পরিমাণ এখন প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বর্তমান সক্ষমতার অনুপাতে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়ার কথা।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্রেডার চেয়ারম্যান মুনীরা সুলতানা, বিউবোর চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ও নওপাজিকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী খোরশেদুল আলম বক্তব্য রাখেন।